সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর উপর স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে গঠিত হবে সাংবিধানিক বেঞ্চ। সিএএ-র বিরুদ্ধে ১৪৪টি মামলা নিয়ে বুধবার শুনানি চলছে শীর্ষ আদালতে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকেও নোটিস দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দেশ জুড়ে আন্দোলন জারি রয়েছে। এর মধ্যেই এ দিন সিএএ-এর বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে-র নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে চলছে ওই শুনানি। শীর্ষ আদালতে এই শুনানি কোন দিকে মোড় নেয় তাতে নজর রয়েছে গোটা দেশেরই।
সুপ্রিম কোর্টে সিএএ-শুনানি
• হাইকোর্টগুলিকে সিএএ সংক্রান্ত মামলা শোনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
• আজ থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর, তিন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হবে ওই সাংবিধানিক বেঞ্চ
• সিএএ-এর বিরুদ্ধে আবেদন নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চ তৈরি করবে সুপ্রিম কোর্ট
• সিএএ ও এনপিআর-এর উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত
• সিএএ-এর বিরুদ্ধে ১৪০-এর বেশি আবেদন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কী উত্তর তা জানাতে নোটিস
• ৪ সপ্তাহ সময় দেওয়া হল কেন্দ্রীয় সরকারকে
• প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সাময়িক ভাবে সরকারকে এটা করতে বলতে পারি।’
• সিএএ-এর বিরুদ্ধে আর মামলা না নেওয়ার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল
• অসম ও ত্রিপুরার বিষয়টিকে আলাদা ভাবে দেখা হবে
• অ্যাটর্নি জেনারেল অসমের বিষয়টিকে আলাদা করে দেখার জন্য আবেদন করেন শীর্ষ আদালতে
• বিকাশ সিংহ সিএএ-এর উপর অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেন
• প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ সিংহ আদালতে দাবি করেন, সিএএ অসম চুক্তি ভঙ্গ করেছে
• কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিব্বল সিএএ স্থগিত রাখার জন্য আবেদন করেন। তিনি জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) আপাতত স্থগিত রাখার আবেদন করেন
• এজলাসে হট্টগোল শুনে নিস্তব্ধতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে
• সিএএ-এর বিরুদ্ধে আবেদন করেন আরজেডি নেতা মনোজ ঝা, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রও
• কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তাঁর আবেদনে দাবি করেন, এই আইন সংবিধানের দেওয়া মৌলিক অধিকারের উপর ‘নির্লজ্জ আঘাত’
• ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ দাবি করে, সিএএ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে
নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে বহু রাজনৈতিক দলই। তার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, ডিএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ও এআইএমআইএম-এর মতো দলও। আবেদনকারীদের সকলেরই দাবি, ওই আইন সংবিধান বিরোধী।
সিএএ-এর বিরুদ্ধে যেমন শীর্ষ আদালতে আবেদন করা হয়েছে, তেমনই ওই আইনকে ‘সাংবিধানিক’ ঘোষণার দাবিতেও পাল্টা আবেদন করা হয়েছে। এমনই একটি মামলায়, গত ৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, এখনই ওই মামলা শোনা সম্ভব নয়। কারণ, বিচারপতিরা যুক্তি দেন, ”দেশ এখন কঠিন সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।” ওই আবেদনের প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালত এ-ও বলে, ”আদালতের কাজ আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখা। আইন সাংবিধানিক কিনা তা দেখা কাজ নয়।” শুধু সুপ্রিম কোর্টই নয়, দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টেও সিএএ নিয়ে বহু মামলা রুজু রয়েছে। সব মামলা এক সঙ্গে শুনানির জন্য, সেগুলি হাইকোর্ট থেকে শীর্ষ আদালতে নিয়ে আসার আবেদন করে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত বছর ১১ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল (সিএবি), পর দিন, অর্থাত্ ১২ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় পাশ হয় সিএবি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ওই বিলে সই করার পর তা আইনে পরিণত হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি ও খ্রিস্টানদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
লোকসভায় ওই বিল পেশের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, ওই বিল কোনও ভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধী নয়। ভারতীয় মুসলিমদের উপর তার কোনও প্রভাবই পড়বে না। যদিও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা। তবে প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন্দ্র যে ওই আইন বলবত্ করা থেকে পিছোচ্ছে না তা মঙ্গলবারই ফের এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ”যাঁর যত বিরোধিতা করার করুন, সিএএ প্রত্যাহার হবে না।”