হালাল ছড়াচ্ছে কারণ আমরা মানসিকভাবে ক্রীতদাস । এটা শীঘ্রই অর্থনীতিক দাসত্বে পরিণত হবে : স্বরাজ্য সাংবাদিককে ঝটকা সার্টিফিকেশন অথোরিটি চিফ
“যেদিন ৯৫ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১০% অহিন্দু হালাল প্রোডাক্ট বয়কট করবে, সেদিনই ইকোনমিক জিহাদ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সরকারকে দোষ দিতে পারে, ফ্রি মার্কেট সিস্টেমকে দোষী ঠাওরাতে পারি; কিন্তু আসল সমস্যা আমাদের ক্রীতদাস (ধিম্মি) মানসিকতার মধ্যেই নিহিত আছে।” বলছিলেন রবি রঞ্জন সিংহ।
রবি রঞ্জন সিংহ হিন্দু মহাসভার সদস্য। রবি রঞ্জন সিংহ আবার রাম জন্মভূমি মামলার অন্যতম বাদীও ছিলেন। তিনি এক দশকেরও বেশিদিন ধরে হালাল প্রোডাক্টের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার জন্য অভিযান চালাচ্ছেন।
এতেই না থেমে রবি রঞ্জন হালাল প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করার জন্য একাধিক জনস্বার্থ মামলাও করেছেন। তিনি হালাল প্রোডাক্টের পাল্টা হিসাবে ঝটকা সার্টিফিকেশন অথোরিটিও খুলেছেন। তার লক্ষ্য একটাই — হালাল ইকোনোমিকে ধ্বংস করা।
তিনি স্বরাজ্যের সাংবাদিক অরিহন্ত পাওয়ারিয়াকে সাক্ষাতকার দেবার সময়ে কিভাবে হালাল অর্থনীতি শেষ তিন দশকে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে; সে সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করলেন — তার পাশাপাশিই হালাল অর্থনীতি কিভাবে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে, সেটাও ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বোঝালেন কেনই বা তিনি হালাল অর্থনীতির পাল্টা ঝটকা অর্থনীতি তৈরী করতে চাইছেন।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : এক শতাব্দী আগেও ত হালাল অর্থনীতি আজকের মত এতখানি ছড়ায় নি, তাহলে এখন এত ছড়িয়েছে কেন? কিভাবে এর সূচনা হল?
রবি রঞ্জন সিংহ : হালাল জিনিসটা কিন্তু নতুন নয়। বস্তুত ইসলাম ধর্মের সমান প্রাচীন। আরব ভাষায় হালাল শব্দের অর্থ হল ‘অনুমতিসাপেক্ষ’। আরবের প্রায় সব উপজাতি সমাজেই এই ভাবেই পশু বলি দেওয়া হত। আমরা বলতে পারি, প্রথম ধাপ ছিল সেটা।
ইসলাম ধর্ম যত ছড়াতে লাগল, হালাল জিনিসটা ইসলাম ধর্মের সমার্থক হয়ে দাঁড়াল। একে দ্বিতীয় ধাপ বলা যেতে পারে। শুধু ইসলামিক দেশগুলির মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল।
ইসলামিক হালাল যে আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা আজ থেকে মাত্র ৭০ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই হালাল প্রোডাক্টকে বিশ্বজনীন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পেছনে ছিল ব্রিটিশ সরকারের মদত ছিল পুরোপুরিই।
যুদ্ধের শেষে যখন ব্রিটিশরা বুঝতে পারল, এবার ভারত ছাড়তে হবে; তখন তারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যারা সবচেয়ে বেশি করে ছিল, সেই শিখ ও মুসলিমদের জন্য বিশেষ অনুমতি দিল। তারা জানত যে, এরা ভারতে থাকলে প্রচণ্ড মার খাবে। কেননা এরা ‘দেশদ্রোহীর’ তকমা অলরেডি পেয়ে গেছে। তাদের ব্রিটেনে থাকবার জন্য ব্যবস্থা করে দিল। ঠিক এই কারণে ব্রিটেনে শিখ ও মুসলিমদের সংখ্যা এত বেশি।
যেসব শিখ ও মুসলিম আর্মিতে ছিল, তাদের জন্য বিশেষ কাজের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। এই জন্য ব্রিটিশ সরকারকে খুব বেশি খরচা করতে হয়নি।
এইভাবে ব্রিটেনে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং সেই বৃদ্ধির হার নব্বইয়ের দশক থেকে ভয়াবহ দ্রুতগতিতে বাড়তে লাগল। যেখানে শিখদের সংখ্যা যুক্তিসঙ্গত কারণেই তেমন বৃদ্ধি পায়নি।
উপমহাদেশীয় মুসলিমরা, যারা ব্রিটেনে ইতোমধ্যেই জাঁকিয়ে বসেছিল; তারা অন্যান্য দেশের মুসলিমদের তুলনায় অনেক বেশী বুদ্ধিমান, রাজনৈতিক ভাবে সচেতন, এবং ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদ ছড়াবার ব্যাপারে অনেক বেশী দৃঢ় ছিল। এরমধ্যে পাকিস্তান নামে আরেকটি রাষ্ট্র পেয়ে যাওয়ায় তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। ব্রিটেনের বুকে মুসলিমদের মধ্যে কট্টরবাদ ছড়াবার পাকিস্তানী দূতাবাসের ভূমিকা বেশ ইতিবাচক ছিল।
ধর্মীয় কারণেই মুসলিমরা হালাল করে কাটা মাংস ছাড়া কিছুই খেতে পারত না। কিন্তু সে সময়ে লন্ডন সহ পুরো ব্রিটেনেই হালাল মাংস পাওয়া যায় এমন রেস্তোরাঁর সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল। তাই তারা পরিকল্পনা করল তার জাতভাইদের জন্য এমন রেস্তোরাঁ খুলবে, যেখানে শুধুই হালাল মাংস পাওয়া যায়। শুরুর দিকে তাদের সংখ্যা কম থাকায় গুটিকয়েকের চেয়ে বেশী রেস্তোরাঁ খুলতে পারে নি। কিন্তু চাহিদা থাকায় এবং তাদের সংখ্যা যত বাড়তে লাগল; স্বাভাবিক ভাবেই হালাল রেস্তোরাঁর সংখ্যাও তত বাড়তে লাগল।
শুরুতে যতদিন মুসলিম অনলি হালাল রেস্তোরাঁ ছিল, ততদিন অমুসলিমরা হালাল মাংস খাওয়াটা ‘অনৈচ্ছিক’ মনে করত। এই কারণে ব্রিটিশ কসাইদের ব্যবসা তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। কিন্তু যে মুহূর্তে লন্ডন সহ পুরো ব্রিটেন জুড়ে অনেকগুলি হালাল অনলি রেস্তোরাঁ খুলতে শুরু করল; তাদের ব্যবসা ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে লাগল। কেননা হালাল অনলি রেস্তোরাঁ অমুসলিম কসাইদের কাছ থেকে মাংস কিনত না।
এরপর হালাল অর্থনীতি অমুসলিম দেশের ব্যবসা ধ্বংস করার দিকে এগোতে লাগল। আশির দশকেও ব্রিটেনে সবচেয়ে বড় মাংস রফতানিকারক দেশ ছিল ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে। কিন্তু ঐসব দেশ হালাল পদ্ধতিতে মাংস কাটতো না বলে হালাল অনলি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হচ্ছিল।
তারা হালাল মাংস কাটে এমন দেশ থেকে মাংস আমদানি শুরু করল – এর ফলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও আরব দেশ থেকে মাংস আমদানি শুরু করল। সেই থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বাজার থেকেই হারিয়ে গেল।
এইভাবে চলতে চলতে এমন অবস্থা হয়ে গেল যে, অমুসলিম দেশগুলি হালাল পদ্ধতিতে মাংস কাটতে রাজি হবার শর্তে হালাল অনলি রেস্তোরাঁগুলি তাদের কাছ থেকে মাংস কিনতে লাগল। যেমন অস্ট্রেলিয়া বা নিউ জিল্যান্ড। এইভাবে পুরো পৃথিবীকেই তারা হালাল মাংস কাটতে বাধ্য করল।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : ইসলামিক দেশ থেকে আমদানি করা মাংসের গুণগত মান ও পরিমাণ যথেষ্ট ছিল না। সেইজন্য তারা লাইন বদলে অমুসলিম দেশ থেকেও মাংস কেনা শুরু করল তাই না?
রবি রঞ্জন সিংহ : ঠিক তাই। তারা হালাল অর্থনীতিকে ধাপে ধাপে ‘কিনে’ নেওয়ার পর তারপর অন্যান্য দেশকে তারা নিজেদের শর্তাধীনে চলতে বাধ্য করেছে।
প্রথমে তারা শুধুই ‘শুধুই হালাল’ প্রোডাক্ট চেয়েছে। তারপর এতেই না থেমে চেয়েছে বাজারে সবকিছুই ‘হালাল’ হতে হবে। না হলে কিনবেই না। তারপর ফুড চেইন দখল করে নেবে। তারপর সেই ফুড চেইনে কোনও অমুসলিম চাকরী করতে না পারে; সেটা পালন করবে।
কিন্তু তারা এই জিনিসটা ভারতে করতে পারেনি।
কেন সেতো বুঝতেই পারছেন। তারা এখনও পর্যন্ত যা শুরু করেছে, তাতে আশঙ্কা বোধ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তারা খুব শীঘ্রই ১০০% শরিয়াসম্মত প্রোডাক্ট না হলে কোনও জিনিস বাজারে বেচতেই দেবে না। এখানে হয় পুরোটাই শরিয়া ভিত্তিক হবে, নয়ত কেটে পড়ো। মাঝামাঝি কিছু নেই।
ভারতে এখনও পর্যন্ত আপনি নন হালাল প্রোডাক্ট পেতেই পারেন। কিন্তু আর কতদিন পাবেন? তারা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে খুব দ্রুত ১০০% হালাল না হলে আপনি কিছুই খেতে পাবেন না।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : যদি তারা সব রকম জিনিসের ওপর এভাবে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে এগোতে থাকে, তাহলে বলতেই হচ্ছে হালাল প্রোডাক্ট চিন্তাধারার সাথে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এ এক ধরণের ধর্মযুদ্ধ; তাই নয় কি?
রবি রঞ্জন সিংহ : হ্যাঁ। চাইলে একে অর্থনৈতিক জিহাদ বলতে পারেন।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : আপনি হালা প্রোডাক্টের বিবর্তন নিয়ে বলছিলেন। ১। প্রাক ইসলাম ২। ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ শুরু থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত। ৩। ১৯৪০ থেকে এখনও পর্যন্ত। এরপর কি অর্থনৈতিক জিহাদ শুরু হবে?
রবি রঞ্জন সিংহ : চতুর্থ ধাপটা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এরপর আসছে হালাল স্টক এক্সচেঞ্জ। আমরা অনেক এমন সংস্থা দেখেছি যাতে হালাল সার্টিফিকেশন স্ট্যাম্প লাগানো আছে দেখেছি। মুসলিমরা শুধুমাত্র হালাল কিনবে ও অন্যদেরও কিনতে বাধ্য করবে।
হালাল সংস্থাগুলিও ধীরে ধীরে হালাল অনলি রেস্তোরাঁর মতই ধর্মীয় ভিত্তিতে কাজ করতে শুরু করবে। একটা ধাপে এরা কোনও অমুসলিম কর্মচারী রাখবেও না।
হালাল সংস্থাগুলো খুবই ধূর্ত, তারা শুরুতে এত সস্তায় পণ্য গছাবে; যে আপনি সে ফাঁদে পা দিয়ে কম ইন্টারমিডিয়ারি ফি দিয়ে তাদের স্টক কিনে নেবেন। এটাও আসলে এক ধরণের জিজিয়া কর। কেননা এভাবে সস্তায় পণ্য কিনে আপনারই জাতভাইয়ের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছেন।
এছাড়া আপনি জানতেও পারছেন না যে, হালাল সংস্থাগুলো মুসলিম ইনভেস্টরদের আরও বেশী ছাড় দিচ্ছে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে। এইভাবে খেলাটা তারা অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তরে নিয়ে যাচ্ছে।
হালাল ছড়াচ্ছে কারণ আমরা মানসিক ভাবে এদের ক্রীতদাস হয়ে গেছি। যা ধীরে ধীরে আমাদের পক্ষে অর্থনৈতিক ভাবে ক্রীতদাসের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি জানেন নিশ্চয়ই মানসিক ও অর্থনৈতিক দাসত্ব একটা ডেডলি কম্বিনেশন। একবার এটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আর কখনও আপনি এখান থেকে বেরুতে পারবেন না।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : বেলজিয়াম ও ডেনমার্কের মত কিছু ইউরোপীয় দেশ হালাল ও কোশার (ইহুদি মাংস কাটার পদ্ধতি) নিষিদ্ধ করে দিয়েছে অ্যানিম্যাল রাইটের নামে। ভারতে কি এর প্রয়োগ সম্ভব?
বেলজিয়ামের মত দেশগুলি যা করছে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, হালাল অর্থনীতি শুধুমাত্র মাংসেই সীমাবদ্ধ নেই। আর এতে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অবশ্য পরিকল্পনা ভালই।
কিন্তু পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয়। আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, হালাল বোধহয় শুধু মাংস কাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভুল ধারণা। হালাল অর্থনীতির একটা ছোট অংশ হচ্ছে হালাল মাংস।
তিনি এবার একটি পট্যাটো চিপস তুলে দেখালেন, যার গায়ে জামিয়ত-উলেমা-ই-হিন্দ এর হালাল ট্রাস্টের লোগো লাগানো আছে। আরেকটা আই ড্রপ দেখালেন, তাতেও হালাল লোগো লাগানো আছে। নিম্নোক্ত ছবি দুটো দেখালেই তা পরিষ্কার হবে।
হালাল অর্থনীতি ভারতে এখন বেশ মজবুত – এরই মধ্যে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে তা ১০ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। এতে সব রকমের পণ্যই আছে। সাফ করেই বলছি, এখন বাজারে মাত্র দুই রকম পণ্য পাওয়া যায় – হালাল অথবা হারাম। এর মাঝামাঝি কিছু নেই।
বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ আইন করেছে যে, প্রাণী বোধ করার আগে শক দিয়ে মেরে ফেলতে হবে, যাতে প্রাণী মরার আগে বেশী যন্ত্রণা না পায়। কিন্তু শরিয়া রীতিতে প্রাণীকে কাটার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন বেঁচে থাকে।
এতসব কারণেই আমি বলছি যে, হালাল ব্যাপারটা এখন যতটা না ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশী অর্থনৈতিক জিহাদে পৌঁছেছে। ঠিক এই কারণেই ধর্ম সম্মত নয় জেনেও ইসলামিক সংগঠন ইউরোপীয় রাষ্ট্রে শক দিয়ে প্রাণী হত্যার পদ্ধতি মেনে নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন ভাবে শক দিয়ে মারলে সেটা হারাম হবে না হালাল হবে? এই বিতর্কের আড়াল দিয়ে তারা আইনকে পাশ কাটিয়ে ঠিকই হালাল করে চলেছে।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : তাহলে আপনি বলতে চাইছেন ইসলামিক সংগঠনগুলি হালাল সার্টিফিকেশন জারি করে কোটি কোটি টনের মালিকে পরিণত হচ্ছে। এবং তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য প্রতি মিনিটে তাদের নিয়ম পালটে চলেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কি হালাল সার্টিফিকেট সিস্টেম নিষিদ্ধ করে অবস্থা পাল্টাতে পারে?
রবি রঞ্জন সিংহ : না। কারণ ইসলামিক সংগঠনগুলি কোনও আইন ভাঙ্গছে না। সংবিধানের কোন ধারা অনুসারে সরকার ঠিক করে দেবে তারা কিভাবে ইসলাম মেনে চলবে? এটা কোনও প্র্যাকটিকাল বা পলিটিকাল সমাধান নয়। এবং তা হওয়াও উচিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা আদালত এই ধরণের আইন অসাংবিধানিক তকমা দিয়ে বাতিল করে দেবে।
তারা এরপর হালাল সেন্সর বোর্ড আনতে চলেছে বলে শুনছি। হালাল সেন্সর বোর্ড সিনেমায় মুসলিমদের নেগেটিভ দেখানোর জন্য বিরোধিতা করবে। সরকার অবশ্যই চাইলে নিজস্ব সেন্সর বোর্ড আগের মতই চালু রাখতে পারে। কিন্তু হালাল সেন্সর বোর্ডকে কোনও সাংবিধানিক ধারা দিয়েই নিষিদ্ধ করতে পারবে না।
যেসব ইসলামিক সংগঠন এইসব সার্টিফিকেট দিচ্ছে, সমস্যা তাদের নিয়ে নয়। তারা শুধু যেটা করছে সেটা হল মুসলিমদের বুঝিয়ে দিচ্ছে কোনটা তাদের কাছে হারাম বা হালাল। এই করে তারা তোমাদেরও বুঝিয়ে দিচ্ছে তোমাদের কাছে কোনটা শরিয়াসম্মত, কোনটা নয়। নাহলে তোমরাও তো বুঝতে না।
সমস্যা হচ্ছে অমুসলিমদের ক্রীতদাস সুলভ মানসিকতা নিয়েই। তারা ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাত দিয়ে ইসলামিক হালালকে ইউনিভার্সাল হালালে পরিণত করে দিচ্ছে।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : অর্থনৈতিক বৈষম্য এখন হালাল মাংস শিল্পে অন্যতম গুরুতর ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আপনি একটু আগেই বলছিলেন হালাল মাংস শিল্প যত বিস্তৃত হয়েছে – লন্ডন ও বাকি ব্রিটেন থেকে তত বেশী করে অমুসলিম কসাইরা জীবিকা হারিয়েছে। ভারতেও একই জিনিস হয়েছে। কয়েক শতাব্দী ধরে যে হিন্দু খটিক সম্প্রদায় কসাইয়ের জীবিকা গ্রহণ করেছিল, তারাও হালাল অনলি সিস্টেমের শিকার হয়ে জীবিকা হারাচ্ছে।
রবি রঞ্জন সিংহ : ঠিক। স্বাধীনতার আগে শুধু দিল্লিতেই হিন্দু ও মুসলিম কসাইয়ের অনুপাত ছিল ৭০: ৩০। এখনই সেটা হয়ে গেছে ১০: ৯০। কিছুদিনের মধ্যেই দিল্লীতে কোনও হিন্দু কসাই পাওয়া যাবে না। বুঝতে পেরেছেন?
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : আচ্ছা হালাল অর্থনীতি কি ধর্মান্তরকরণের কাজ সহজ করে দিচ্ছে? রবি রঞ্জন সিংহ : হ্যাঁ। ধর্মান্তরকরণ দুই ধরণের হয়। প্রথমটা হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও তা একবার নিলে ত্যাগ করা যায় না। দ্বিতীয়টা হচ্ছে অপ্রত্যক্ষ, কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না। হালাল মেনে নেওয়া মানেই আপনি কোনও না কোনও ভাবে ইসলামিক ধর্মান্তরকরণের পথে হাঁটতে শুরু করলেন। আপনি এভাবে নিজের পথে হাঁটা ছেড়ে ঠিক মুসলিমদের পথে হাঁটাই শুরু করলেন।
এজন্য আপনাকে মসজিদে যেতে হবে না বা কলেমা পড়ে মুসলিম হবার দরকারও নেই। যদি আপনি সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত ভাবে একজন মুসলিমি হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে আপনার একজন খাঁটি মুসলিম বনতে বিশেষ অসুবিধা হবে না। হবে কি?
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : আপনি বলছিলেন কিভাবে ইসলামিক হালালকে ইউনিভার্সাল হালালে রূপান্তরিত করা হয়েছে, এবং তার প্রধান কারণ হচ্ছে হালাল মাংস নাকি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে কতখানি সত্যতা আছে?
রবি রঞ্জন সিংহ : সুস্বাদু ব্যাপারটা বিতর্কিত। কারুর কাছে যেটা সুস্বাদু লাগছে, সেটা অন্যের কাছে নাও লাগতে পারে। তাই সুস্বাদু হওয়ার জন্য হালাল মাংসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, এই থিওরি পুরো মিথ্যা। আর হালাল মাংস খুব সুস্বাদু, এটা টিপিক্যাল ইসলামিক প্রোপ্যাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাছে প্রচুর অর্থ আছে, তার জোরে বিজ্ঞানীদের দিয়ে মনগড়া রিপোর্ট বানিয়ে খদ্দেরকে প্রভাবিত করার অসৎ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কিন্তু অসংখ্য পরীক্ষানিরীক্ষা ও তার ফলাফল যখন বিভিন্ন সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। বুঙ্কুম (Bunkum) হচ্ছে মাংস কাটার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি, এতে প্রাণীর যন্ত্রণা হয় না; তাদের মাংসও বিষাক্ত হয় না। এছাড়া বলির দিক থেকে হালাল হচ্ছে সবচেয়ে নিষ্ঠুর পদ্ধতি। তাছাড়া হতভাগ্য প্রাণীরা যে যন্ত্রণা পায় হালাল পদ্ধতিতে কাটার দরুন, তাতে মাংসের রসায়ন অনেকটাই পাল্টে যায়।
গলায় আড়াই প্যাঁচ করে কাটার দরুন যে যন্ত্রণা পায় প্রাণী, তার ফলে তার মাংসপেশি ও শরীরের প্রত্যঙ্গগুলি কুঁকড়ে যায়। যার পরিণাম রাসায়নিক ভাবে মোটেই ভাল নয়। অন্যদিকে ঝটকা পদ্ধতিতে হয় কি, স্পাইনাল কর্ড ও মেরুদণ্ডের মধ্যে যে লিঙ্ক আছে তা সরাসরি কাটা পড়ে, ফলে প্রাণী তৎক্ষণাৎ অচৈতন্য হয়ে পড়ে এবং দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই মারা পড়ে। তাছাড়া হালাল পদ্ধতিতে রক্তপাত বেশী হয়, যেটা মাংসের মধ্যে জীবাণু বাধার পক্ষে অতিশয় কার্যকর। যেটা ঝটকায় হবেই না।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : এই সিচুয়েশনে ভারত সরকারের কি করার আছে?
রবি রঞ্জন সিংহ : কিচ্ছু না। যা করার করতে হবে হিন্দুদেরই। সমস্যা হল হিন্দুরা কিছুতেই ধর্মের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে না। এই অবস্থা আজ হয়, বহু শতাব্দীর পাপের ফল এটা। শিখরা গুরুদ্বার ও লঙ্গরখানার পেছনে প্রচুর অর্থ ঢালে। হিন্দুরা চাইলেই ভাণ্ডার ও মন্দিরের জন্য একই ভাবে অর্থব্যয় করতে পারে। কিন্তু করবে না।
কিন্তু কি হিন্দু কি শিখ, কেউই ঝটকার দোকানের পেছনে ব্যাকিং করবে না। যারাই অদ্যাবধি ঝটকা দোকান খুলেছেন, তারা কি পরিমাণ ঝঞ্ঝাট ভোগ করেছেন, তারাই ভাল বলতে পারবেন। হিন্দু ও শিখদের বোঝা উচিত যে, মন্দির ও গুরুদ্বারে টাকা ঢেলে লাভ নেই। বরং ঝটকার দোকানের পেছনে ঢাললে তাদের অনেক দিক দিয়ে লাভ হবে।
আমি যদি আমিষাশী হই, সেক্ষেত্রে আমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমি দরকারে দুই কিমি. দূরে যাব ঝটকা কিনতে, তবুও হালাল কিনব না। আবার আমি যদি নিরামিষাশী হই, আমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, যে প্যাকেটে হালাল লোগো থাকবে, তা কোনও অবস্থাতেই কিনব না। এবং দোকানদার হিন্দু বা শিখ হলে তাকে বলে দেব এসব জিনিস দোকানে না রাখতে। এভাবেই সমাজের মধ্যে ‘বয়কট হালাল’ বার্তা ছড়াতে হবে।
আমরা যদি এটাও করতে না পারি, যদি আমরা কষ্ট করে পাঁচ টাকা বেশী খরচ না করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের এই আশা করাও উচিত নয় ভগবান মর্ত্যে নেমে আমাদের উদ্ধার করতে আসবে।
আমাদের সচেতন হতে হবে, সাহসী ও সরব হতে হবে। মুসলিমদের দেখুন না, তারা ৫% হলেও শুধু হালাল প্রোডাক্ট কিনবে, ৫০% হলেও তাই।
যেদিন ৯৫ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১০% অহিন্দু হালাল প্রোডাক্ট বয়কট করবে, সেদিনই ইকোনমিক জিহাদ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সরকারকে দোষ দিতে পারে, ফ্রি মার্কেট সিস্টেমকে দোষী ঠাওরাতে পারি; কিন্তু আসল সমস্যা আমাদের ক্রীতদাস (ধিম্মি) মানসিকতার মধ্যেই নিহিত আছে।
অরিহন্ত পাওয়ারিয়া : আপনি তো এখন ঝটকা সার্টিফিকেশন অথোরিটি চালাচ্ছেন, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রবি রঞ্জন সিংহ : পরিকল্পনা অতি সহজ। এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয় তো। আমাদের হাতে কিভাবে ঝটকা অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, তার সব পরিকল্পনা নীল নকসার আকারে তৈরিই আছে। কিন্তু এখন আপাতত দ্বিতীয় ধাপ চলছে।
প্রথম ধাপটা হল – মানুষকে হালাল অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতন করা। সমস্যা হচ্ছে বাজারে এই মুহূর্তে শুধু হালাল মাংসই পাওয়া যায় বলে তা প্রচণ্ড সস্তা। আমাদের ব্যবসা করতে হলে যতটা সম্ভব কম লাভ রেখেই ব্যবসা করতে হবে।
মানুষকে সচেতন করতে পারলেই ঝটকা অর্থনীতি হালাল অর্থনীতির মতই একটা বিজনেস হয়ে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে ঝটকা দোকানের সাপ্লাই আছে, ডিমান্ড নেই। এটাই পাল্টাতে হবে। আর এটা পাল্টান সম্ভব একমাত্র যদি হিন্দু ও শিখরা তাদের মানসিকতা ও ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব আনে তবেই।
আমরা আপাতত তাই এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার কাজটাই করছি।
স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত মূল প্রবন্ধ থেকে ভাষান্তর করেছেন সদানন্দ গৌড়াপ্পা।