বর্তমান ভারতবর্ষের রাজনীতি CAA Opafts Citizenship Amendment Act নিয়ে তোলপাড়। এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে সেকুলারবাদী এবং কমিউনিস্ট দলগুলো সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আসলে আইনটি কী? কেন? তা না বুঝেই ভোটভিক্ষুক দলগুলো একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে মিথ্যে প্রচার করে উস্কে দিচ্ছে। যার ফলস্বরূপ কিছুদিন আগে আইনের বিরোধিতার নামে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ঢালাও প্রতিযোগিতা দেখলাম।
আইনটির মূলকথা কারো নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া নয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি সংখ্যালঘু মানুষদের এদেশে নাগরিকত্ব প্রদান। এটা ভারত সরকার নতুনভাবে করছে না। এর আগে নেহরুলিয়াকত চুক্তিতেই এর উল্লেখ আছে। এতদিন আমরা আমাদের এইসব অঞ্চলে কী দেখেছি? বিশেষত কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলায় ওপার বাংলার রংপুর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের রাজবংশী ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা উদ্বাস্তু হয়ে বসবাস করে। বর্ধিষ্ণু পরিবারগুলি শহর অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবনযাপন করছে। ওপার বাংলায় কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষরা যারা অধিকাংশ নমঃশূদ্র ও রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত তারা এই অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় একপ্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধাহীন অবস্থায় বসবাস করেছে।নিজের দেশ থেকে নিঃসহায় পরিবারগুলো এদেশে এসেশাসকদলের খপ্পরে পড়ে যেত। কেননা সর্বস্ব ফেলে ওখান থেকে অতিকষ্টে আসার পর তাদের মানসিক শক্তি তলানিতে। এখানে এসে শাসকদলের কোপে পড়তে ভয় পেত। আর শাসকদল তাদের ভোটাধিকার, রেশনকার্ড ইত্যাদির জুজু দেখিয়ে তাদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করত।তাই এই মানুষগুলোকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে তাদের ভোটব্যাঙ্ক নষ্ট হবে, তাই বিরোধিতা করছে। শাসকদল ওপার বাংলা থেকে পালিয়ে আসা রাজবংশী, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মান ও স্বাভিমানের সঙ্গে বাঁচুক তা চায় না। আরও বড়ো কথা, যদি কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব আইন করে এনআরসি লাগু না করতে পারে, তবে আগামীতে এই অঞ্চলগুলোতে প্রচণ্ড সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যা ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। বিশেষত কোচবিহার জেলার সিতাই-শীতলখুচি সীমান্তরেখা অঞ্চলে। ওপার বাঙ্গলার রাজবংশী নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষরাই এই অঞ্চলের উদ্বাস্তু শ্রেণী। জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কারণে এই অঞ্চলে প্রচণ্ড হারে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব অঞ্চলে ১৫/২০ বছর আগে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, আজকে অনেক অঞ্চলেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু। বিশেষত শীতলখুচি ব্লকের বড়ো মরিচা, গোলেনাওহাটি লালবাজার অঞ্চলে হিন্দু সংখ্যালঘু। এইসব অঞ্চলের যারা বর্ধিষ্ণু হিন্দুপরিবার তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন শহরে বাড়িঘর কিনে চলে যাচ্ছে।
ওইসব অঞ্চলের হিন্দুদের সঙ্গে কথা বললে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড আতঙ্ক প্রকাশ পায়। যারা ব্যবসাবাণিজ্যের কারণে আসতে পারছে না, তারা খেয়ে না খেয়ে বাড়িঘর না করে বাড়ির চারদিকে দেওয়াল দিচ্ছে। বাড়ির সদর দরজা শক্ত করছে। জিজ্ঞাসা করলে বলছে যে মুসলমানরা আক্রমণ করলে দরজা ভাঙতে ভাঙতে পুলিশকে খবর দিতে পারবে, সেই জন্য দরজা শক্ত করা। বর্তমান ভারত সরকার নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এই অঞ্চলের হিন্দুরা এর দিকেই তাকিয়ে আছে।বুকভরা বেদনা এবং আশাভরা স্বপ্নে এই অঞ্চলের নির্যাতিত – নিপীড়িত রাজবংশী, নমঃশূদ্র সম্প্রদায় আগামী নিরাপদ জীবনের দিকে তাকিয়ে আছে।
গীরেন্দ্রনাথ বর্মণ
2020-01-14