বিদ্যুতের বিল বকেয়া রেখেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন গ্রাহক। ওই জমির বিদ্যুৎ সংযোগও তাই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমির নতুন মালিককে নতুন করে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে হবে, জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আগের মালিকের বকেয়া বিল মেটাতে আদৌ বাধ্য নন নতুন মালিক। রাজ্য বিদুৎ বণ্টনকারী সংস্থার (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) বিরুদ্ধে করা মামলায় হাই কোর্ট এই রায় দিয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় একটি জমি কিনেছিলেন মির হোসেন আলানুর। সেই জমিতে বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এ আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর জানিয়ে দেয়, ওই জমির আগের মালিকের বিদ্যুৎ-বিল বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুতের খরচ বাবদ ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৬৯ টাকা তিনি দেননি। ফলে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই বকেয়া না মিটলে নতুন জমিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, জানিয়ে দেয় ডব্লিউবিএসইডিসিএল। তাদের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন আলানুর।
জমির আগের মালিকের বকেয়া বিদ্যুৎ-বিল কেন তিনি মেটাবেন, প্রশ্ন তোলেন আলানুর। তাঁর আইনজীবী সূর্যপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, পূর্বতন মালিকের সঙ্গে তাঁর মক্কেলের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্যের বিদ্যুৎ-বিল কেন তাঁকে মেটাতে হবে? বিদ্যুৎ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাঁর মক্কেলকে, জানান আলানুরের আইনজীবী। পাল্টা বিদ্যুৎ দফতরের আইনজীবী আসিফ দেওয়ানের যুক্তি, জমির পুরনো মালিক বিদ্যুৎ চুরি করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করাও হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর ওই জমির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, একই জায়গায় নতুন সংযোগ নিতে হলে আগের বকেয়া মেটাতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাই নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার রায়ঘোষণা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, জমি কিনলেই আগের মালিকের বকেয়া বিদুৎ-বিল নতুন মালিককে মেটাতে হবে, তেমন কোনও কথা নেই। নতুন গ্রাহককে পরিষেবা দিতে বাধ্য বিদ্যুৎ দফতর। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, জমির দুই মালিকের মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণিত না হলে বকেয়া নতুন মালিকের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। নতুন জমি কেনার সাত মাস আগেই সেখানে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, নতুন মালিককে সব দেনা মেটাতে হবে, জমি বিক্রির চুক্তিতেও কোথাও এমন কথা বলা নেই। ফলে অন্যের বিল মেটাতে বাধ্য নন নতুন মালিক।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ দফতর যা পদক্ষেপ করেছে, সব বাতিল করে দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, বকেয়া ছাড়াই চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জমিতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-কে।

