পরলোকে সাংবাদিক অসীম কুমার মিত্র

চলে গেলেন সাংবাদিক অসীম কুমার মিত্র। গত 12 জানুয়ারি সকাল সাড়ে 11 টা নাগাদ বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 83 বছর। স্ত্রী সহ তার পুত্র এবং ভাই বোন বর্তমান।
বাল্যকাল থেকেই অসীমবাবু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শাখায় আসেন। ভোলাদা নামে তিনি সঙ্ঘ মহলে বিশেষ পরিচিত। জরুরি অবস্থার সময় তিনি জেলে যান। ব্যক্তিগতভাবে কর্মজীবনে তিনি একজন সফল সাংবাদিক হিসাবে বাংলা সহ সারাদেশে পরিচিত ছিলেন। 1999 সাল নাগাদ সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর আর.এস.এস এর দক্ষিণবঙ্গের প্রচার প্রমুখ, পূর্ব ক্ষেত্রের বৌদ্ধিক প্রমুখ সহ সঙ্ঘ সহ একাধিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বে পালন করেন।
1955 সালে তিনি প্রথম সাপ্তাহিক “স্বস্তিকা” পত্রিকাতে 15 টাকা মাসিক বেতনে তৎকালীন স্বস্তিকার কর্ণধার শুভেন্দু ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাজ করেন। এরপর 1958 সালে 30 টাকা মাসিক বেতনে “হিন্দুস্তান সমাচার” নিউজ এজেন্সি তে তিনি কাজ করেছেন বলে তাঁর ভাই ডাক্তার অনিন্দ্য গোপাল মিত্র কথা প্রসঙ্গে জানান। এরপর কিছুদিন যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করেন। 1980 নাগাদ “আজকাল” পত্রিকায় যোগ দেন, ১৯৯৯ সালে সহ-সম্পাদক হিসেবে পেশাগত অবসরের পর তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেন। কলকাতা “বিশ্বসংবাদ কেন্দ্র”এর নির্দেশক হিসেবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন।


গুজরাটের মিডিয়া ইউনিভার্সিটির অন্যতম নির্দেশক তথা গেট ফ্যাকালি্ট হিসাবে কয়েক বছর কাজ করেন।
ব্যক্তিগতভাবে বহু কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদে আসীন ছিলেন। প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া সদস্য ছিলেন, সিবিএসসি (সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিলম সার্টিফিকেশন) সদস্য হিসেবে কয়েক দফায় দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্ট এর সাধারণ সম্পাদক সহ বহু ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের দায়িত্বের পাশাপাশি জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও আসীন ছিলেন। বহু সামাজিক আন্দোলন কে জনস্বার্থে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রেতা সুরক্ষা ব্যাপারে তার ভূমিকা সংবাদ পত্র ছাড়াও সামাজিক ভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।
বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজিতে নামে-বেনামে সাবলীল লেখার দক্ষতা তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক। সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী কে নিয়ে তার লেখা “চেনা-অচেনা” বইটি পাঠক সমাজে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এছাড়াও বহু বইয়ের অনুবাদ, সম্পাদনা একাধারে করেছেন। সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় থেকে বহু নামি দামী লেখকের এর সঙ্গে সাংবাদিকতার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রেও তিনি অন্তরঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন নিজস্ব লেখনী শৈলীর গুনে।
কলকাতা দূরদর্শনের বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর তাঁর মৃত্যুকে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি বলে উল্লেখ করেন। এই দিন তাঁর মরদেহের প্রতি নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকরা পুস্প মাল্য সহযোগে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। তাঁর সাংবাদিক জীবনের নিজস্ব দিক ব্যক্তিগত, দক্ষতা, সহায়তার স্মৃতি উল্লেখ করেন নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকরা। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে তাঁর মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.