রবিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করেছেন। তার মধ্যে দু’টি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। একটি তাঁর টি শার্টের পিছনের লেখা (যেখানে বলতে চাওয়া হয়েছে, ক্রিকেট এখন আর শুধু ভদ্রলোকের খেলা নয়, সকলের খেলা।) অন্যটি হাতের ট্যাটু। উল্লেখ্য, কব্জিতে ট্যাটু করিয়েছেন দলের সদস্য স্মৃতি মন্ধানাও।
বুধবার ইনস্টাগ্রামে যে ছবিটি হরমনপ্রীত পোস্ট করেছেন, সেখানে ভারত অধিনায়কের ডান হাতে বাইসেপ পেশির উপর ট্যাটু দৃশ্যমান। কালো রঙে বিশ্বকাপের ছবি। সঙ্গে ‘২০২৫’ খোদাই করা। রবিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর বুধবারের মধ্যে ট্যাটু করিয়েছেন হরমন। অর্থাৎ কম-বেশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ট্যাটুটি করিয়েছেন। চটজলদি ট্যাটু করাতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। অন্যথায় সমস্যা হতে পারে।
সাধারণত ট্যাটু করানোর আগে অনেকেই দীর্ঘ পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচন এবং খরচ ঠিক করা হয়। কিন্তু কলকাতার ট্যাটু শিল্পী রাজা পাইনের অনুমান, হরমনের ট্যাটুটি পূর্বপরিকল্পিত। অর্থাৎ বিষয়ভাবনা এবং শিল্পী আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। হরমনের মতো তারকা ক্রিকেটার কোনও প্রথম সারির ট্যাটুশিল্পীর কাছেই ত্বকে ছবিটি আঁকিয়েছেন।
ট্যাটুশিল্পী হিসেবে প্রায় ২৩ বছরের অভিজ্ঞতা রাজার। বলছিলেন, ‘‘এ রকমও দেখেছি, ১ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ ট্যাটু করাতে এসেছেন! আবার এ রকম উদাহরণও রয়েছে, যেখানে একটি ট্যাটুর নেপথ্যে দীর্ঘ দিনের ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।’’
হঠাৎ কোনও ট্যাটু করানোর সিদ্ধান্তে সমস্যা নেই। কিন্তু কী ভাবে তা করা হচ্ছে, তার উপর সামগ্রিক ফলাফল নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে শিল্পীর উপরে জোর দিলেন রাজা। অর্থাৎ তিনি চটজলদি কাজটি কী ভাবে করছেন, তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, কারও ‘রেফারেন্স’ থাকলে সুবিধা হতে পারে। রাজার কথায়, ‘‘সাধারণত ট্যাটু আর্টিস্টরা পূর্বনির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে কাজ করেন। সেখানে হঠাৎ করে কেউ ট্যাটু করাতে চলে এলে তাঁকে শিল্পী সময় না-ও দিতে পারেন।’’ ফলে হঠাৎ করে ট্যাটু করাতে গেলে গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য পাওয়া কঠিন হতে পারে।
অনেক সময়ে কোথাও ঘুরতে গিয়ে বা বিশেষ কোনও দিনে কেউ কেউ হঠাৎ করে ট্যাটু করিয়ে ফেলেন। পরে ট্যাটু ঝাপসা হওয়া বা তা নিখুঁত না হওয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠে। বিদেশে ঘুরতে গিয়ে বিদেশি ভাষায় ভুল ট্যাটু (ক্রেতা যা চেয়েছেন তার বিপরীত) করিয়েও অনেকে ঠকে যান। রাজার মতে, অপরিচিত কোনও জায়গা থেকে ট্যাটু করাতে হলে প্রথমে শিল্পীর কাজ দেখতে চাওয়া উচিত। তার ফলে শিল্পীর প্রতি বিশ্বাস জন্ম নেবে।
বর্তমানে সমাজমাধ্যমে যে কোনও পরিষেবার রেটিং থাকে। কিন্তু ট্যাটুর ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও রেটিং ব্যবস্থাকে সমর্থন করলেন না রাজা। তাঁর কথায়, ‘‘রেটিং নিয়ে কী ধরনের কারচুপি হয়, সেটা সকলেরই জানা। শিল্পীর কাজই তাঁর সাফল্যের একমাত্র প্রামাণ্য নথি হতে পারে।’’
হঠাৎ করে ট্যাটু করানোর সিদ্ধান্ত নিলে, শিল্পী কী ভাবে কাজ করছেন, তা আগে থেকে জেনে নেওয়া উচিত। রাজা জানালেন, রং যেন ডিসপোজ়েবল কাপে রাখা হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত। যন্ত্রপাতি সঠিক পদ্ধতিতে বিশুদ্ধকরণ করা হয়েছে কি না বা নতুন সুচ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, কোনও রকম সংক্রমণ এড়াতে শিল্পীর দস্তানা পরার উপরে জোর দিলেন রাজা। ট্যাটু করার চেয়ার পরিষ্কার কি না বা তা প্লাস্টিকে মোড়া থাকছে কি না, তা-ও আগে জেনে নেওয়া উচিত।
তবে ট্যাটু যেহেতু ত্বকের উপর স্থায়ী এক ধরনের শিল্প, তাই পূর্বপরিকল্পনা মাফিক তা করানো উচিত। কারণ, ট্যাটুর ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কোনও সুযোগ থাকে না। আর আগে থেকে নকশা বা শিল্পী যদি নির্ধারিত থাকে, তা হলে চটজলদি ট্যাটু করালেও কোনও ক্ষতি নেই।

