ট্রাম্পের দাবি অসত্য! স্পষ্ট করে নয়াদিল্লি জানাল: বুধবার ফোনে মোদীর সঙ্গে তাঁর কোনও কথাই হয়নি, আর কী জানাল ভারত?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বুধবার কোনও কথা হয়নি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিল নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার সকালে (ভারতীয় সময় অনুসারে) ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করার বিষয়ে বুধবার তাঁর সঙ্গে মোদীর কথা হয়েছে। এ বার সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পের সেই দাবি খারিজ করে দিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।

ট্রাম্পের দাবি, বুধবার নাকি তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার বিষয়েও নাকি ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন মোদী। ট্রাম্পের দাবির পরে বৃহস্পতিবার সকালেই একটি বিবৃতি দিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। তবে তাতে ধোঁয়াশা কাটেনি। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে আবারও এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে। সেখানে তিনি বলেন, “আমি যতদূর জানি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কাল কোনও কথা হয়নি।”

তবে ৯ অক্টোবর দু’দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ফোনে কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রণধীর। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, গত ৯ অক্টোবরের ফোনালাপের সময়ে গাজ়া শান্তিচুক্তির সাফল্যের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদী। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা কী অবস্থায় রয়েছে, তা-ও পর্যালোচনা করেন তাঁরা। উভয়েই এ বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়ে সম্মত হন।

যদিও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে এখনও সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি বিদেশ মন্ত্রক। সাংবাদিক বৈঠকেও এ বিষয়ে প্রশ্নে সকালের বিবৃতির উপরেই জোর দেন রণধীর। ট্রাম্পের ওই দাবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা ভারতে, এমনকি রাশিয়াতেও। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালেই একটি বিবৃতি দেয় বিদেশ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়, “ভারত যথেষ্ট পরিমাণ তেল এবং গ্যাস আমদানি করে থাকে। বিশ্বে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার আবহে ভারতের ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখাকেই আমরা বরাবর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আমাদের (তেল) আমদানি সংক্রান্ত নীতি এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই পরিচালিত হয়।

ওই বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, ভারত তেল কেনার বাজারকে আরও বিস্তৃত এবং‌ বৈচিত্রময় করতে চায়। এই সূত্রেই ভারত জানিয়েছে, জ্বালানি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে আমেরিকার সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। তেল আমদানির ক্ষেত্রে বৈচিত্রময় দৃষ্টিভঙ্গির কথা বললেও নির্দিষ্ট ভাবে রাশিয়ার প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেনি ভারত। তবে ভারত যে তেল কেনার বিষয়ে স্বাধীন ভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়, বিবৃতিতে সেই বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে ট্রাম্প-মোদীর ‘ফোনালাপ’-এর বিষয়ে বিবৃতিতে কোনও উল্লেখ ছিল না। বিকেলে ভারতের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হল, বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি মোদীর।

রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর ‘জরিমানা’ বাবদ ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। বর্তমানে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। বুধবারই ভারতের বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল জানিয়েছেন, আমেরিকা থেকে তেল কেনার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। জুতসই দামে পাওয়া গেলে আমেরিকা থেকে জ্বালানি কেনা বৃদ্ধি করার কথা ভাবা হবে, তা-ও জানান তিনি।

ভারতের বাণিজ্যসচিবের ওই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই ট্রাম্পের দাবি প্রকাশ্যে আসায় শোরগোল আরও বেড়ে যায়। কারণ, সোভিয়েত আমল থেকেই মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। ঠান্ডা যুদ্ধের আমলেও দ্বিমেরুকৃত বিশ্বে বহু ঘটনায় ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। সোভিয়েত ইউনিয়ান ভেঙে যাওয়ার পরেও, এমনকি পুতিনের আমলেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অটুটই থেকেছে। তেল আমদানি নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে এর আগে ভারত বহু বার জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত বুঝিয়ে দিল, মোদীর সঙ্গে বুধবার ‘ফোনালাপে’র বিষয়ে ট্রাম্পের দাবি অসত্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.