রোগীর ব্রেনডেথ হলে কখন নিশ্চিত ভাবে প্রত্যয়ন করতে হবে, তা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে প্রশিক্ষণ হয় না বেশির ভাগ স্নায়ু চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞের। এমনটাই বলছে দিল্লি এমসের একটি সমীক্ষা। দেশের ১৭৭ জন নামী চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে সমীক্ষকদের দল। দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৫৯.২ শতাংশ)-এরই মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে বলে ঘোষণা করা নিয়ে কোনও প্রশিক্ষণ হয়নি। এমসের সমীক্ষা বলছে, সে কারণেই ধাক্কা খাচ্ছে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন।
সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এই সমীক্ষা বলছে, যে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, তাঁদের ৩৭.৩ শতাংশ জানিয়েছেন, ব্রেনস্টেম ডেথ সার্টিফিকেশন (বিডিসি) নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম ছিল না। মাত্র ১০ শতাংশ চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
ব্রেন ডেথ কী? যখন মস্তিষ্কের কোশে অক্সিজেন পৌঁছোয় না, তখন তা কাজ করা বন্ধ থাকে। ভেন্টিলেটর সাপোর্টের মাধ্যমে রোগীর হার্ট সচল থাকলেও ব্রেন ডেথ হতে পারে। রোগীর শ্বাস এবং রক্ত চলাচল, দুইই যখন বন্ধ হয়, তখন রোগীর ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ হয়েছে বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে বলে ঘোষণা করে দেন। এর ফলে সেই রোগীর শরীর থেকে অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে এর জন্য দ্রুত বিডিসি প্রয়োজন।
বিডিসি কী? অঙ্গদানের বিষয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়াকে বলে বিডিসি। যাঁর ব্রেনডেথ হয়েছে, তাঁর থেকে আইনি ভাবে অঙ্গ গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে নির্ধারিত হয়। বিডিসি ঠিক সময়ে না হলে রোগীর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রক্ত চলাচল বন্ধ হলে তাঁর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হতে থাকে। ব্রেন ডেথ হওয়ার চার৪ থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে রোগীর শরীর থেকে হার্ট, ফুসফুস বার করে নিতে হয়। আট থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে লিভার বার করে নিতে হয়।
১৯৯৪ সালের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন অনুসারে, কোনও রোগীর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে, ঘোষণা করা হলেই তাঁর অঙ্গ বার করে অন্য কারও শরীরে প্রতিস্থাপন করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবারের ইচ্ছাও প্রয়োজন। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন নির্ভর করে রোগীর পরিবারের ইচ্ছার উপরে।
সমীক্ষা বলছে, ২০২৪ সালে দেশে যত অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে, তার মাত্র ১৮ শতাংশ এসেছে মৃত রোগীর শরীর থেকে। এমসের সমীক্ষা বলছে, চিকিৎসকেরা এই অঙ্গদানের আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আরও সচেতন হলে ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে এমন রোগীদের শরীর থেকে আরও বেশি করে অঙ্গ নিয়ে তা অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যেত। দিল্লি এমসের চিকিৎসক তথা সমীক্ষাকারী দলের অন্যতম সদস্য দীপক গুপ্ত জানিয়েছেন, প্রতি বছর দেশে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের ব্রেন ডেথ হয়। কিন্তু মাত্র ১১০০ জন রোগীর অঙ্গ নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
রোগীর যে ব্রেন ডেথ হয়েছে, তা নিশ্চিত করে প্রত্যয়নের জন্য কোনও প্রোটোকল নেই। তবে রোগীর কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। যেমন, ব্যথা পেলেও চোখ না খুললে বা চোখে আলো ফেলার পরেও সাড়া না মিললে সেই রোগীর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ রকম আরও কিছু বিষয় পরীক্ষা করা হয়। সিটি স্ক্যান করা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন চার চিকিৎসকের বোর্ড। অনেক চিকিৎসকই জানিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রে রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে বোঝা গেলেও তা ঘোষণা করা হয়ে ওঠে না।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ব্রেন ডেথ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নীতির ক্ষেত্রেও কিছু খামতি রয়েছে। চিকিৎসক গুপ্ত জানিয়েছেন, রোগীর যে ব্রেন ডেথ হয়েছে, তা ঘোষণা করার জন্য দেশে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকাতেও চিকিৎসকদের সমস্যায় পড়তে হয়।

