ভারতীয় পণ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, জিনিসের দাম বাড়ছে আমেরিকার বাজারেও! সমস্যা কোথায়? দামি হচ্ছে কী কী?

ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ভারতের ব্যবসায়ী এবং রফতানিকারকেরা সমস্যায় পড়েছেন। আমেরিকা থেকে যে সমস্ত বরাত এসেছিল, তার অধিকাংশই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খুঁজতে হচ্ছে মার্কিন বাজারের বিকল্প। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার ব্যবসায়ীরাও কিন্তু খুব একটা স্বস্তিতে নেই। ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন, তাতে তাঁদেরও দুশ্চিন্তা বেড়েছে। অনেক জিনিসের দাম বাড়তে শুরু করেছে আমেরিকায়। ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ৫০ শতাংশ শুল্কের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে চলেছে আমেরিকার বাজারে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি করা হয় মূলত পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, যানবাহনের যন্ত্রপাতি এবং শিল্পাঞ্চলের রাসায়নিকের মতো পণ্য। এগুলি আমেরিকার উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং খুচরো বাজারেও ব্যবহার করা হয়। শুল্কের কারণে এই পণ্যগুলির দাম বাড়তে বাধ্য। এমনিতেই আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি চলছে। তার উপর এই মূল্যবৃদ্ধিতে মার্কিন নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ছে।

আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে ওষুধপত্র এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম রফতানি করে ভারত। সে দেশের মোট ব্যবহৃত ওষুধের ৪০ শতাংশই যায় ভারত থেকে। ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত এই পণ্যকে শুল্কের আওতাধীন রাখেননি। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদি ছাড় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তবে আমেরিকায় ওষুধের দাম তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে চিকিৎসার খরচ, বিমা ইত্যাদির দামও বেড়ে যেতে পারে। শুল্কের এই আশঙ্কা বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, মত পর্যবেক্ষকদের।

আমেরিকার বহু সংস্থা উৎপাদনের কাঁচামাল কিংবা অন্যান্য সহকারী সরঞ্জামের জন্য ভারতের উপর নির্ভর করে থাকে। এই সমস্ত পণ্যের জোগানের ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ট্রাম্পের শুল্ক। ভারত থেকে পণ্য যেতে দেরি হচ্ছে, অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে জোগান। এতে আমেরিকার রাসায়নিক, বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রগুলিতে সমস্যা হচ্ছে। পণ্য আমদানির ্ষেত্রগুলিতে সমস্যা হচ্ছে। পণ্ জন্য ভারতের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে অনেক মার্কিন সংস্থা। অন্য দেশ থেকে ওই পণ্য আরও বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

শুধু তো শুল্ক নয়। বিদেশিদের ভিসার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ির পথে হাঁটছেন ট্রাম্প। ভারত থেকে বহু মানুষ কাজের সূত্রে আমেরিকায় যান। গুগ্‌ল, মাইক্রোসফ্‌ট, আমাজ়নের মতো সংস্থা প্রযুক্তিগত কাজের জন্য ভারতীয় প্রতিভার উপর নির্ভর করে থাকে। আগামী দিনে সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।

বুধবার থেকে ভারতের পণ্যে আমেরিকার শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে। ভারতের এই শেয়ার বাজারেও আমেরিকা-সহ বহু বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। শুল্কের কারণে সেই সমস্ত বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যদিও অনেকে মনে করছেন, এই শুল্ক-যুদ্ধ ‘সাময়িক’। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পথ খোলা আছে। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র মিলতে পারে।

রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসাবে ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনে বলেই সেই টাকায় তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, পরোক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সাহায্য করছে বলে হোয়াইট হাউসের দাবি। যদিও একই যুক্তিতে তারা চিনের পণ্যে কোনও শুল্ক আরোপ করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.