সীমান্তের ওপারে থাকা সংখ্যালঘুদেরকে কংগ্রেসের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস #INDIASUPPORTSCAA

মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি:

গান্ধীজী ১৯৪৭ সালের ১৬ই  জুলাই সালে দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভায় অঙ্গীকার করেছিলেন, “এটা একটা সমস্যা, অনেকেই ভয় পায়, কাল্পনিক হোক বা বাস্তব, যে তাঁদেরকে নিজের নিজের পাকিস্তানের বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে  হবে। যদি তাঁদের প্রতিদিনের কাজে বা যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টি করা হয় বা নিজের দেশেই বিদেশী হিসাবে গণ্য করা হয়, তবে তাঁরা সেখানে থাকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে সীমান্তের এই পাশের পার্শ্ববর্তী প্রদেশের তাঁদেরকে দুই বাহু  বাড়িয়ে গ্রহণ করার দায়িত্ব আসে। তাঁদের প্রতি সমস্ত বিধিবদ্ধ সুযোগ সুবিধাগুলি প্রসারিত করতে হবে। তাঁদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে যে যে তাঁরা কোনও অজানা অচেনা দেশে এসে পড়েন নি।”

১৯৪৭ সালের ২১ শে জুলাই নয়া দিল্লীতে প্রার্থনা সভায় গান্ধীজী ভাষণ দিয়েছিলেন:

পাকিস্তানের এক বন্ধু আমাকে লিখেছেন: “ভারতে আপনি ১৫ ই আগস্ট উদযাপনের কথা বলছেন, পাকিস্তানের হিন্দুরা কীভাবে এটি উদযাপন করবে? আমাদের হৃদয় কাঁপছে অশুভ লক্ষণের বোঝায়। ঐ দিনটি আমাদের কাছে আশার নয়, আশঙ্কায় পরিপূর্ণ। আপনি কি এই সম্পর্কে কিছু বলবেন ? আমাদের জন্য দিনটি সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য অনুষ্ঠিত হবে, উদযাপনের জন্য মোটেও নয়। এখানকার মুসলমানরা ইতিমধ্যেই আমাদের ভয় দেখাতে শুরু করেছে। আমরা জানি না ভারতের মুসলমানরা এই নিয়ে কী মনে করে। তারাও কি ভীত হবে না? আমরা ভয় পাচ্ছি যে বড় আকারে আমাদের ধর্মান্তর করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। আপনি বলবেন যে আমাদেরকেই আমাদের ধর্ম-বিশ্বাসকে রক্ষা করতে হবে। এটি কোনও তপস্বীর পক্ষে সম্ভব হতে পারে, গৃহস্থের জন্য নয়।”

মিঃ জিন্নাহ এখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হতে চলেছেন। তিনি বলছেন যে অমুসলিমদের সাথে মুসলমানদের মতোই ব্যবহার করা হবে। আমার পরামর্শ হ’ল আমাদের উচিৎ তাঁকে বিশ্বাস করা এবং আশা করা যে পাকিস্তানের অমুসলিমদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হবে না। ভারতের মুসলমানদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করা হবে না। আমার মনে হয় এখন যখন দুটি রাষ্ট্র তৈরী হয়েছে, ভারত পাকিস্তানের কাছ থেকে মুচলেকা চাইতেই পারে। তবুও আমি অনুভব করি যে ১৫ ই আগস্ট উদযাপনের দিন নয়, সংখ্যালঘুরা এই দিনটিকে ভারী মন নিয়ে সতর্কতার সাথে কাটাবেন । এটি বরঞ্চ প্রার্থনা এবং অন্তর্মন্থনের দিন হোক। যদি সত্যের পথে এই দুই দেশ থাকে তবে তাদের এখনই বন্ধুত্ব শুরু করা উচিত। হয় আমরা সবাই একসাথে ভাই হিসাবে ১৫ ই আগস্ট উদযাপন করি, নয়তো উদযাপন করার কোনও দরকারই নেই। স্বাধীনতার জন্য আনন্দিত তখনই হব যখন আমরা একে অপরের প্রতি আন্তরিক বন্ধুত্ব বোধ করব। তবে এটি আমার একান্তই নিজস্ব মতামত এবং কেউ মনে হয় না এই মতে বিশ্বাস রাখে।

পাকিস্তানের ঐ বন্ধুটি তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করেন: “যদি পাকিস্তানের সমস্ত হিন্দুরা বা তাদের সিংহভাগই পাকিস্তান থেকে চলে আসেন, ভারত কি তাঁদের আশ্রয় দেবে?”

আমি মনে করি তাঁদের অবশ্যই আশ্রয় দেওয়া উচিত। তবে, যদি তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল শ্রেণীর লোকেদের যদি মনে হয় যে তাঁরা পুরানো অবস্থাতেই থাকবেন, তা কঠিন হবে। যাই হোক, তাঁদের অবশ্যই বসবাসের জায়গা দেওয়া উচিত এবং তাঁদের শ্রমের জন্য অর্থ প্রদান করা উচিত। তবে আমি আশা অব্যাহত রাখব যে কোনও অমুসলিম ভয়ে পাকিস্তান পালাতে বাধ্য হবে না এবং কোনও ভারতীয় মুসলিম তাঁর মাতৃভূমি ছেড়ে পালাবেন না।

সেই পত্রলেখক তাঁকে আরও জিজ্ঞাসা করেন: “পাকিস্তানে ফেলে রাখা বাড়িঘর ও জমি সম্পদের কী হবে?”

“আমি ইতিমধ্যে বলেছি যে পাকিস্তান সরকারের জমি এবং ঘরগুলির বাজার মূল্য প্রদান করা উচিত। এ জাতীয় বিষয়ে অন্য সরকারেরও বক্তব্যটিও শোনার রীতি রয়েছে। এক্ষেত্রে এই অন্য  সরকার হবে ভারত। তবে কেন আমি ধরে নেব যে বিষয়টি এতদূর যাবে? পাকিস্তান সরকারের দায়িত্ব হবে মালিকদের কাছে এই জাতীয় জমি এবং বাড়ির মূল্য পরিশোধ করা।

গান্ধীজী ১৯৪৭ সালের ২১ শে জুলাই শ্রীকৃষ্ণ দাসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন

“আমার তোমার চিঠি পেয়েছি। জিন্নাহ সাহেব নিজেই বলেছেন যে পাকিস্তানে অমুসলিমদেরও একই জায়গা থাকবে যা মুসলমানদের আছে। তবে এ জাতীয় নীতি বাস্তবায়িত হয় কি না তা দেখা বাকি রয়েছে। নিপীড়নের কারণে উদ্বাস্তু দরিদ্র হিন্দুদের ভার অবশ্যই ভারতকে নিতে হবে। তবে এটি নিশ্চিত তাদের নিজেদের রুটির জন্য নিজেদেরকেই পরিশ্রম করতে হবে।”

১৯৫০ সালের ৫ই নভেম্বর সংসদে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর দেওয়া আশ্বাস:

‘মাননীয় সদস্য নাগরিকত্বের প্রশ্ন উল্লেখ করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভারতে বসতি স্থাপন করতে আশা বাস্তুচ্যূত ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব পেতে বাধ্য। আইন যদি এতে প্রতিবন্ধক স্বরূপ হয় তবে আইন পরিবর্তন করা উচিত।

১৯৬৪ সালের মার্চ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী গুলজারিলাল নন্দের বক্তব্য

“মিস্টার চেয়ারম্যান, সভায় শ্রী ভূপেশ গুপ্তের উত্থাপিত প্রস্তাব নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। ……এইগুলো পাকিস্তানের জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের জীবনযাত্রা এবং তাদের শাসন কাঠামো বেছে নেওয়া তাদের অধিকার, এবং যতদূর আমরা সম্পর্কিত, আমাদের শুভ কামনা রইল। কিন্তু, স্যার, আমাদের গভীরভাবে যা স্পর্শ করে তা হ’ল ওখানে যা ঘটে, তার ফলশ্রুতি হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির উপর প্রভাব পড়ে। কিছু উচ্চ সম্মানিত বা গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কিছু বলবেন, সম্ভবত কেবল কয়েকটি কথা, তার পরিণতি শত শত মাইল  গমন করতে পারে। …তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঠিক-ই এবং তারা এই প্রতিশ্রুতিগুলি পালন করে তার বাস্তবায়ন করে কিনা তা আমাদের প্রভাবিত করে বই-কি  এবং তাই এটি এখানে আমাদের আলোচনার জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে; এবং এটা খুব স্বাভাবিক, স্যার, আমাদের দেশের লোকেরা ঐদেশে যা ঘটে তার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। তাই এই সংসদের সদস্যরাও তাঁদের বিভিন্ন বক্তৃতা বিষয়বস্তুগুলিতে পাকিস্তানের ঘটনাবলীর দ্বারা প্রভাবিত হন।

স্যার, সংখ্যালঘুরা তাঁদের (পাকিস্তানের জনগণের) দায়িত্ব, তাঁদের বাধ্যবাধ্যকতা, এবং সম্পূর্ণরূপে তাঁদের দায়বদ্ধতা। যতক্ষণ তাঁরা এই দায়িত্বটি ঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছেন, এই বিষয়টি  উত্থাপনের কোনো কারণ নেই। কিন্তু যখন সেই দিতে তাঁরা সুরক্ষা ব্যর্থ হন, যখন সেই দেশের সংখ্যালঘুরা, যাঁদের জন্য আমরা প্রথম বছরগুলিতে সেই দেশটির সাথে চুক্তির মাধ্যমে একটি ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছি, যদি সেই ব্যবস্থা ভেঙে যায় এবং সেখানকার সংখ্যালঘুদের নৃশংসতা ও পাশবিক আচরণের শিকার হতে হয়, সেই পরিণতিগুলি দায়িত্ব আমাদেরকেই  চূড়ান্তভাবে বহন করতে হবে।

যদি এটি কেবল দুঃখ-কষ্টের প্রশ্নই হয় তবে তাদের যন্ত্রণা এবং তাদের বেদনা আমরা জানতে পারি; আমরা অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকতে পারি কারণ এই ক্ষেত্রে আমদের সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা নেই। তবে তাদের সাথে আরও কিছু ঘটে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীরা দেখতে পায় যে তাদের পক্ষে আর সেখানে থাকা সম্ভব নয়; অর্থাৎ, তাদের প্রাণ-মান-ধন নিরাপদ নয়, তাহলে, স্যার, পরিস্থিতি পৃথক হয়ে যায়। তখন যাদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল, যাদের বাড়িতে লুঠপাট হয়েছিল, সেখানে তাদের পক্ষে থাকা অসম্ভব বলে তাদের মনে হয় এবং তারপরে তারা পালাতে চেষ্টা করে ভারতে এবং তখন আমরা এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি।

তাদের সহায়তা করার জন্য প্রথমতঃ আমরা কী করতে পারি এবং দ্বিতীয়ত, তারা এখানে চলে আসার পরে আমরা কী করে থাকি? এখানে দুএকটি লোকের নয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশকে নিয়ে প্রশ্ন। যখন তাদের স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়, সেই অঞ্চল থেকে পালাতে হয়, তখন কী ঘটে থাকে? অবশ্যই, আমরা খুব খুশি হতাম এই দেখতে পেলে যে তারা যাতে কোনও হয়রানির শিকার না হয়। তবে সে বিষয়ে আমরা অসহায়। যেমন এই সভা দেখেছে যে অন্য একদিন প্রধানমন্ত্রী বিবৃত করেছিলেন এই সদনে যে, হাজার খানেক মানুষ সম্পর্কে যাদের উপর গারো পাহাড়ে মেশিন গান থেকে গুলি বর্ষিত হয় এবং পালাতে গিয়ে নারী ও শিশুরা গুলিবিদ্ধ হয়। আমরা তাদের সেখানে সহায়তা করতে পারিনি। এটা জল্পনা বা অনুমানের বিষয় নয়; এটি সারা বিশ্বে, সর্বত্র প্রেসে, স্বাধীন বিদেশী উৎস দ্বারা সবার দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। এটা তাই এখন আমাদের সম্মুখে এই সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততা এখন প্রসারিত হয়েছে। কেবল হিন্দু নয়, খ্রিস্টানরাও আক্রান্ত। কিন্তু স্যার, লোকেরা যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন,  এই ধরণের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তখনই ঘটে অন্তরে শূন্যতা জায়গা নেয়, তারপরে কোনও সংযম থাকে না , বাধা থাকে না এবং অত্যাচারিতরা অন্য লোকদের উপর প্রতিশোধ নেয় দুর্দশা এবং কষ্টের মধ্যে দিয়ে। এটা সেখানে শেষ হয় না। এটি আরও এগিয়ে যায়, আরও গভীরতর হয় এবং আজ একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এবং আগামীকাল অন্য একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কার্যকরী হয়। এটি প্রত্যেককে এর মধ্যে বিজড়িত করে এবং তারপরে এটি সম্প্রদায়, উপ-সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপ-সম্প্রদায়গুলিতে হলাহল প্রসারিত করে।

বিশ্ব এখন এ সম্পর্কে আরও ভাল করে জানে কারণ খ্রিস্টান মিশনারিরা খবর এনেছে যে ৩৫,০০০  খ্রিষ্টান প্রভাবিত হয়েছে; এই গুরু সত্য। এর ফলে বিশ্বের নজর পড়েছে এই প্রান্তে। এবং জানা যাচ্ছে যে নিপীড়িত খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ৭৫,০০০  বা আরও বেশি। এ সময় ঠিক কত প্রাণ হারিয়েছে, তার কোনো হিসেব নেই। পাকিস্তান যা সংখ্যা জানিয়েছে, তা হাস্যকরভাবে  নগণ্য, বিশ্বাসযোগ্য নয়। অন্যান্য উৎসের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ উৎস থেকে, আমরা জানি যে এটি এটি বহুগুণ বেশি, কিন্তু তাও চিত্র অসম্পূর্ণ। যেসব বিশাল সংখ্যক লোকেরা ভারতে নিপীড়িত হয়েও জীবিত পালিয়ে আসতে পেরেছে শরণার্থী হিসাবে, তা নিপীড়ণের বৃহৎ আকারেরই ইঙ্গিত দেয়।”

শ্রী নন্দ অব্যাহত রেখেছিলেন, “এক মাননীয় সদস্য বলেছিলেন যে আমাদের দরজা খোলা  রাখা উচিত এবং প্রত্যেককে ঢুকতে দেওয়া উচিত। অপর দিকে তা করলে বিধস্ত হবে আমাদের অর্থনীতি, দেশের বেকারত্ব চরম সীমায় এবং আবাদযোগ্য জমি দুষ্প্রাপ্য। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে আরও জটিলতা তৈরি করবে এই সিদ্ধান্ত। সুতরাং, উপসংহার কি? যদি বলা হয় যে, তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়, এটি এমন অবস্থান  নয় যা আমরা বজায় রাখতে পারি। যদি ঐদেশ থেকে  তাদের প্রস্থান প্রতিরোধের কোনও উপায় থাকে, আমাদের তা করার চেষ্টা করা উচিত। তবে যদি উপায় না থাকে তবে দেশের দরজা এই লোকদের জন্য খোলা রাখতেই  হবে এবং এতে যে অসুবিধা রয়েছে তা তো রয়েইছে। কষ্ট হবে তাঁদের এবং আমাদের উভয়েরই। যাঁরা বাড়িঘর গ্রাম সমস্ত কিছু আগলে রেখেছিলেন একটি স্থিত জীবনের জন্য, এখানে শিবিরগুলিতে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সরকারের ইচ্ছা থাকলেও তাদের নতুন জমি বরাদ্দ করা এবং সাধারণ পেশাতে তাদের স্থাপন করে সামঞ্জস্য ফেরাবার ক্ষমতা নেই। সেটা বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে। সুতরাং, শত ঝামেলা ও কষ্ট হোক, আমাদের কঠিন কাজ করতে হবে, প্রচেষ্টা করতে হবে তাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তা দেখতে, তাদের ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে কিনা তা দেখতে এবং তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি এই পর্যায়ে শুধুমাত্র মাননীয় সদস্য ছাড়াও – যেটা অন্য অনেকে বলেছেন- এই মানবিক সমস্যাটিকে সংকীর্ণ দলীয়  ইস্যু হিসাবে ভাবা কখনোই উচিত নয়, এর উর্ধে উঠে সর্বসম্মতি নিয়ে কাজ করতে হবে।

যদি, আমাদের চেষ্টা করার পরেও সর্বোপরি ভাবে সন্তুষ্টিজনক না হয়, তাহলেও এটাকে দলীয় ইস্যু করা উচিত নয়। যে এটা করবে, সে জিনিসগুলি আরও জটিল এবং কঠিন করে তুলবে; এবং এটা  কারও কোনও উপকারে আসবে না। তবে, যেমনটি আমি বলেছি, আমরা আমাদের যা চেষ্টা করার চেষ্টা করছি। একদিকে, আমরা তাদের আসা বন্ধ করতে পারি না; তাদের আমাদের ভিতরে আসতে দেওয়া উচিত তবে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত- মাননীয় সদস্যদের দেওয়া কিছু সতর্কতা। এখানে যখন এত লোক আসবে, আপনি যখন এই পরিমাণে আগমনকে উদারহৃদয়ে গ্রহণ করবেন, তখন আপনাকে দেশের অভ্যন্তরে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবং আমি এই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে এই লোকগুলিকে যখন দেশের বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছিল, দেশছাড়া হতে বাধ্য করা হয়েছিল, পাকিস্তানের কিছু নেতারা – দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও, বলেছিলেন যে ভারত ওই সংখ্যালঘুদের তাদের দেশে আসতে প্ররোচিত করছে।

এ কি ভাবে হয় ? এ জাতীয় জিনিস বলা হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতা, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়া। আমাদের আগে তাই এই দ্বিধা আছে। আমরা ‘না’ বলতে পারি না, বা আমরা এর বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করতে পারি না ; তাদেরকে যতদূর সম্ভব তাদের দেশে রেখেই তাদের নিরাপত্তা দেয়া উচিত। তাদের পক্ষে সেখানে থাকা একান্তই অসম্ভব হলেই তারা আসুন। আমাদের প্রচেষ্টা করে এখন সর্বদা এটা দেখতে হবে যে তারা সেখানে থাকতে সক্ষম হয়েছে সুরক্ষা এবং সম্মানের সাথে। এবং বিভিন্ন পরামর্শ যে বিষয়ে তৈরি করা হয়েছে।

বার বার, সদস্যদের ভাষণ থেকে একটি পরামর্শ ছিল উত্থিত হয়েছে, এবং তা হলো বিশ্ব জুড়ে এর বিরুদ্ধে অভিমত গড়ে তোলা। অবশ্যই আমাদের তা করা উচিত, আমরা করার চেষ্টা করছি, এবং এত খ্রিস্টান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে এই সত্যটি সবার সামনেই উঠে এসেছে যে পাকিস্তানের পরিস্থিতি ভয়াবহ; এই ঘটনার জেরে এখন অন্যথায় এই বাস্তবটি বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখানে আরো অন্য দুটি ব্যাপার । একটি হ’ল আমরা শক্তিশালী হয়ে উঠি; এই দেশের শক্তি এই বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান করবে যার একটি প্রশাখা এই বিশেষ সমস্যাটি। অন্যদিকে উদ্বিগ্ন বিশ্বনেতৃত্বের  মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করা  হোক আমাদের লক্ষ্য। আমাদের তাই করা উচিত এবং আমাদের সকলকে সেই উদ্দেশ্যে একত্রিত করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ, আমরা এখনও পর্যন্ত উদ্বিগ্ন, আমাদের আচরণ, আমাদের নীতিমালা, আমাদের ক্রিয়াকলাপগুলি পুরোপুরি তাদের তিরস্কারের  অতীত হওয়া উচিত। আমি অত্যন্ত উৎসাহিত যে এই মনোভাবটি সংসদের দুই সদনেই দৃঢ়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

পাকিস্তান আচরণে ন্যায়ের অভাব প্রতীয়মান। তাদের আমলাবর্গ, তাদের নেতারা, তাদের সংবাদমাধ্যম, সকলেই উস্কানিতে অবদান রাখে এবং তাই তারা সকলেই এই পরিণতির জন্য দায়ী। যদিও তাদের বিপুল সংখ্যক লোক, তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, এক অবর্ণনীয় নির্যাতন, দুর্দশায় ভোগে । এখনও, আমাদের দেশে এটা মোটেও হবে না, কমপক্ষেও হবে না, এমনকি দূরবর্তী উপায়ে নয়, কোনওরকম ক্ষতির জন্য কোনও ধরণের অজুহাত  হিসাবে। মাননীয় সদস্য শ্রী ভূপেশ গুপ্ত ঠিকই বলেছেন- এখানে মুসলমানদের একটুকু চুল যেন ক্ষতি না করা হয়, এবং আমি মনে করি যে সভার প্রত্যেকে এই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করবে, এটা আমার বিশ্বাস। অতএব, আমরা এই সম্পর্কে যদি দৃঢ়  প্রতিজ্ঞ হই, এবং আমরা যদি উদ্দেশ্য নিয়ে নির্ধারণ করি তবে সেই শক্তিশালীকরণের সাথে দিয়ে আমরা সহায়তা করতে সক্ষম হব; পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের তাদের ফিরে যাতে সাহায্য করবে, ফিরে পাবে সুরক্ষার বোধ, তাৎক্ষণিকভাবে নয় অবশ্যই তবে, অন্তত কিছুক্ষণ পরে। আমাদের কিছুটা হলেও এই সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে, তবে আমার বিশ্বাস আছে যে এই ক্ষেত্রে আমাদের আচরণটি সময়ের সাথে সাথে তাদের সহায়তা করবে। সুতরাং, আমরা আছে একটি খুব দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছি।”

শ্রী নন্দরের উপরোক্ত বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে (তৎকালীন) কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষে উপায় ছিল না হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু শরণার্থীদের জন্য সীমান্তের দরজা বন্ধ করে দেওয়া। তিনি রাজ্যসভা কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘তাদের যেন হয়রানির শিকার না করা হয়।’ একটাই প্রশ্ন থেকে যায় – কোথায় সেই প্রতিশ্রুতি?  কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণ কি?

তরুণ গগোই হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্বের দাবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দেন ডঃ মনমোহন সিংকে

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মনমোহন সিংহকে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে, ২০ শে এপ্রিল, ২০১২-তে অনুরোধ করেছিলেন যে সকল মানুষ বৈষম্য এবং ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে পালাতে হয়েছিল তাদের যেন বিদেশী হিসাবে বিবেচনা করা না হয়। আসামের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (এপিসিসি) একটি কার্যনির্বাহী সভায়, এপিসিসির সভাপতি অঞ্জন দত্ত বলেছিলেন “আমরা বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের  লোকেরা যারা দেশভাগের পর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে অসমে এসেছিলেন, তাদের নাগরিকত্বের অমীমাংসিত বিষয়টি তুলে ধরব।  তিনি আরও যোগ করেন যে এই লোকেরা অবিভক্ত ভারতের নাগরিক এবং ধর্মের ভিত্তিতে নৃশংসতার শিকার হওয়ার পরে তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য তাদের নিজের বাড়িঘর ছেড়ে তারা পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এপিসিসি কেন্দ্রকে অনুরোধ করে ঐতিহাসিক বাস্তবতা এবং মানবিকতার খাতিরে এ জাতীয় সকলকে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য এই বিষয়টি বিবেচনা করতে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.