সম্প্রতি ইরানের রেভোলিউশনারী গার্ডের কুদ বাহিনীর প্রধান কাশিম সোলেইমানির মৃত্যু হয়েছে মার্কিন ড্রোন হানায় । মৃত্যু হয়েছে পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্স বা পিএমএফের ডেপুটি কমাণ্ডার আবু মেহেদি আল মুহান্দিসেরও। অনেকেই বলছেন ঘটনার সূত্রপাত সাম্প্রতিক ইরানের তরফ থেকে পরপর দুবার দুটি মার্কিন ড্রোনকে ধ্বংস করা থেকেই। কিন্তু তা পুরোপুরি সঠিক না। ঘটনার সূত্র খুঁজতে গেলে যেতে হবে কয়েক দশক পূর্বে ।
সত্তরের দশকে ইরানে তখনও গ্র্যাণ্ড আয়াতোল্লা রোহেইলা খোমৈইনির রাজতন্ত্র। পশ্চিমি বিশ্বে যার আগাগোড়া সমর্থক ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সত্তরের দশকের শেষের দিকে রাজতন্ত্রের দুর্নীতি এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে ইরানের জনগণ। ইরানে তখন বিরোধী বলতে একদিকে ছিলেন বামপন্থীরা তো অন্যদিকে ইসলামি মৌলবাদীরা ।
এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯, টানা একবছর দরে চলে সেই সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন। ফলত সেই রাজতন্ত্রের পতন হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে ক্ষমতায় আসে ইসলামিক দলগুলিরই সরকার। যার প্রধান হন আয়াতোল্লা খোমেইনি ।
পরবর্তী পর্যায়ে বহুদলীয় গনতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী দলগুলি পূর্ববর্তী সরকারেরই পথ অনুসরণ করে। স্তব্ধ করা হয় সমস্ত বিরোধী স্বরকে। ফলে গনতন্ত্রের মৃত্যু, জন্ম হওয়ার অপেক্ষার সঙ্গে সঙ্গেই নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সাদ্দাম হুসেনের ইরাক ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ।
তখন ইরাককের সেই পদক্ষেপকে সমর্থন করে সেই আমেরিকা। ইরান-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন ঠিক তখন থেকেই শুরু হয়। এদিকে আশির দশকের শুরু থেকেই পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতই ইরানও পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার গড়তে উদ্যোগী হয় ।
নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে যার প্রথম থেকেই বিরোধী ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম প্রধান দোসর ইসরায়েল। পরবর্তী প্রায় তিন দশক এরপর বিশ্ব দেখেছে মার্কিন-ইরান সম্পর্কের টানাপোড়েন। ইরান তার পরমাণু সম্ভারকে সাজাতে একটু পদক্ষেপ করতেই নেমে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বয়কট ।
যার প্রভাব পড়েছে কার্যত গোটা বিশ্বেই। সাম্প্রতিক সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসআইএসের উত্থান তাতে অন্য মাত্রা জুগিয়েছে। সেই ইরানেরই সামরিক বাহিনী রিভলিউশনারি গার্ডের অন্যতম প্রধান বাহিনী বলে পরিচিত কুদ ফোর্সের প্রধান ছিলেন কাশিম সুলেইমানি। কুদ ফোর্সের কাজ ছিল ইরাকের মাটিতে আইএসআইএসের সঙ্গে লড়া ।