কর্মচারী পিছু কত বকেয়া ডিএ দিতে হবে? ঠিক হিসাব জানতে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে নবান্ন, আশায় সরকারি কর্মচারী মহল

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার (ডিএ) অংশ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে শুরু করে দিয়েছে নবান্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে। গত ১৬ মে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এই অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশ দেন। যে কারণে সম্প্রতি সব দফতর, স্কুল-কলেজ এবং স্বশাসিত সরকারি সংস্থাগুলির কাছে কর্মচারীদের সংখ্যা জানতে চেয়েছিল অর্থ দফতর। এ বার রাজ্য সে দিকে আরও এক ধাপ এগোল।

ডিএ-র বকেয়া অংশ দেওয়ার জন্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সেই প্রযুক্তি সমস্ত দফতরে পাঠিয়ে সমস্ত কর্মচারীর ডিএ পাওয়ার সময়সীমা জানতে চাওয়া হবে। ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট তাদের নির্দেশে জানিয়েছিল, ছ’সপ্তাহের মধ্যে ওই বকেয়া দিতে হবে। তার আগে নির্দেশ দেওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বকেয়া মেটানোর পদক্ষেপের গতিপ্রকৃতির কথাও জানাতে হবে দেশের শীর্ষ আদালতকে। নবান্ন সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের সেই জোড়া নির্দেশ কার্যকর করতেই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরকারি সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থাকে ওই প্রযুক্তিগত পদ্ধতি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই প্রযুক্তিতে সরকারি কর্মচারীদের নিজস্ব পোর্টাল ‘ইন্টিগ্রেটেড ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এ (আইএফএমএস) গিয়ে ২০০৯ সালে ‘রোপা’ কার্যকর হওয়ার পরে কার্যকালের মেয়াদের তথ্য জানাতে হবে। এই প্রযুক্তিতে সব দফতর, সরকার অনুমোদিত এবং সরকার পোষিত স্বশাসিত সংস্থা এবং স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। যেখানে সরকারি কর্মচারীরা ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নিজ নিজ কার্যকালের মেয়াদের তথ্য জানাবেন। একই ভাবে ওই সময়কালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিদেরও নিজেদের তথ্য জানাতে বলা হবে। ওই তথ্য জানালে অর্থ দফতর সহজেই কোন আধিকারিক বা সরকারি কর্মচারীকে কত পরিমাণ বকেয়া ডিএ দিতে হবে, তা সহজে নির্ধারণ করতে পারবেন। অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই পদ্ধতিতে যেমন রাজ্য সরকার কত সংখ্যায় কর্মচারীকে কত পরিমাণ বকেয়া দিয়ে দিতে হবে, তা যেমন জানতে পারবে, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের কাছে চার সপ্তাহ পর যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা, তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে।’’

সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশ তাঁদের ‘জয়’ হিসাবে দেখছেন। তবে ওই নির্দেশ কার্যকর না হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করা সম্ভব, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির অন্দরে। বকেয়া ডিএ নিয়ে মূল মামলাকারী সংগঠন ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের আশা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবশ্যই রাজ্য সরকার পালন করবে। কিন্তু রাজ্য সরকার ওই নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন না করলে আমরা মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করব।’’ এখন দেখার, রাজ্য সরকার কী ভাবে ওই নির্দেশ পালন করে এবং কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা কতটা মেটায়। তবে বকেয়া ডিএ পাওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারী মহলে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। একাংশের দাবি, বকেয়া ডিএ মিলবে ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে। আবার অন্য একাংশের মতে, বকেয়া ডিএ মিলবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট ২০০৯ সালে শুরু হওয়ার রোপার ভিত্তিতে বকেয়া ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ২০০৯ সাল থেকেই বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে।

রাজ্য সরকারের ডিএ দেওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে আগামী ২৭ জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ টাকা মিটিয়ে দিতে। আমরা আশা করব, সরকার শেষ মুহূর্তে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেবে। তা না হলে সরকারের আর্থিক অবস্থা প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে পড়বে এবং ভবিষ্যতে রাজ্য প্রশাসনকে আরও খারাপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।’’ তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক অবশ্য ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.