নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে সুশৃঙ্খল জনজোয়ারের সাক্ষী রইল কলকাতা

গত ২৩ ডিসেম্বর কলকাতার বুকে ভারতীয় জনতা পার্টি নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের সমর্থনে অভিনন্দন যাত্রার আয়ােজন করে। মধ্য কলকাতার হিন্দ সিনেমা থেকে উত্তরের শ্যামবাজার পর্যন্ত কাতারে কাতারে লােকের ভিড়ে মুখ্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন দলের সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নাড্ডা। লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে উজ্জীবিত নাড়া কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্যের শাসক দল ও তার দলনেত্রীকে। তিনি বলেন এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন তালাক বিলের বিরােধিতা করেছিলেন, এখন নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতা করছেন এসবের একটাই মূল লক্ষ্য, সেটি হলাে মুসলমান ভােট। প্রশাসনিক মদতে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানাের চেষ্টা হচ্ছে তারও কড়া ভাষায় নিন্দা করেন শ্রী না। তিনি বলেন, এই আইন মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়।
শ্রী নাড়া এও বলেন, রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন-পরবর্তী হিংসা রুখে দেওয়া সম্ভব হতাে। কিন্তু ভােটব্যাঙ্কের স্বার্থে মমতা ব্যানার্জি তার প্রশাসনকে সক্রিয় হতে দেননি, হিংসার প্রতিবাদও করেননি। এদিন নাড়ার সঙ্গে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এঁরাও তাদের বক্তব্যে রাজ্যের শাসক দলনেত্রীকে তুলােধনা করেন।
অনেকদিন ধরেই চলছিল কুৎসা রটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাম ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ দাবি করেছিলেন নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন সংবিধান বিরােধী, মুসলমান-বিরােধী। এই আইনের জোরে নাকি কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ থেকে শরণার্থী হয়ে আসা অমুসলমান নাগরিকদেরও বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করছে। বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তােলার জন্য রীতিমতাে পরিকল্পনা করে আতঙ্ক সৃষ্টি। করেছে এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি। এদিন, বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নাড্ডা বিরােধীদের প্রতিটি অভিযােগ খণ্ডন করেন। তিনি স্পষ্টবলেন, এই আইন কে শরণার্থী আর কে অনুপ্রবেশকারী তা নিশ্চিত করতে চায়। এই আইনের সঙ্গে ভারতে দীর্ঘকাল বসবাসকারী বৈধ মুসলমানদের কোনও সম্পর্ক নেই।
বিজেপির মিছিলে মতুয়া, নমশূদ্র এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতাে। ঢাকঢােল বাজিয়ে, নেচে গেয়ে তারা তাদের আনন্দ প্রকাশ। করেন। বস্তুত মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি অনেকদিনের। ২০১৯ সালের লােকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এলে তারা নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশ করে মতুয়া নমঃশূদ্র এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের দাবিকে মান্যতা দেবে। বনগাঁ কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। বিজেপি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় মতুয়ারা স্বভাবতই খুশি। মিছিলে বেশ কিছু মুসলমান নাগরিককেও দেখা গেছে। তারা যেমন মানবিক এবং দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য মােদী সরকারের প্রশংসা করেছেন, ঠিক তেননি নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের নামে অহেতুক কুৎসা রটনা করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিন্দাও করেছেন। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার আকাশ গেরুয়া পতাকায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাট আর সভা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে জয় শ্রীরাম আর ভারতমাতা কী জয় ধ্বনিতে। এমন বিশাল অথচ সুশৃঙ্খল জনজোয়ার কলকাতা অনেকদিন দেখেনি।
লক্ষণীয়, নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় প্রতিদিনই কলকাতায় পথে নামছেন মমতা, আর নাকাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তিনি রাজাবাজার থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত মিছিল করলেও সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান, বেলেঘাটা সিআইটি রােডে যান চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, মমতা পথে নেমেছেন, এটা উঁাড়া পিটিয়ে প্রচারের জন্যই প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ। অন্যদিকে বিজেপি দেখিয়ে দিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের ভিড়েও সুশৃঙ্খল ভাবে মিছিল করা যায়।
হেভিওয়েট তারকা নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও এতে সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা হয়। না, এমনটাই মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল।
অভিমন্যু গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.