ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহানের মন্তব্য ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে দেশে। পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহানের মন্তব্য ঘিরে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। দেশবাসীকে আগে না জানিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে কেন এ কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসও।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারের অংশ সমাজমাধ্যমে শেয়ার করে সাগরিকার প্রশ্ন, “বিদেশি সংবাদমাধ্যম কেন প্রথমে এই খবর প্রকাশ করবে? এই তথ্যগুলি কেন প্রথমে ভারতীয়দের, দেশের সংসদকে এবং জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়নি?” সেনা সর্বাধিনায়কের ওই সাক্ষাৎকারের পরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে, একমাত্র তখনই এই প্রশ্নগুলি করা যাবে।” মোদী সরকার দেশকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
‘ব্লুমবার্গ টিভি’র ওই সাক্ষাৎকারে সেনা সর্বাধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পাকিস্তান ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল কি না। ওই প্রশ্নে প্রথমে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ তখনই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তার মানে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছিল? ওই প্রশ্নে সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ জবাব বলে ভারতীয় সেনার কৌশল ব্যাখ্যা করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান আরও বলেন, ‘‘ইতিবাচক দিক হল, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলটা তখনই বুঝতে পেরেছি এবং তা শুধরে দু’দিন পর আবার সেই কৌশল প্রয়োগ করেছি। সব যুদ্ধবিমান আবার আমরা উড়িয়েছি এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।’’ সেনা সর্বাধিনায়কের মন্তব্যের এই অংশটিও সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছেন কংগ্রেস সভাপতি। বাহিনীর দৃঢ় সাহসী মনোভাবকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে খড়্গের দাবি, এই সময় একটি কৌশলগত পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কার্গিল পর্যালোচনা কমিটির মতো একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির পর্যালোচনার দাবি তুলেছেন তিনি।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির সময় থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে ওই সংঘর্ষবিরতির কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বার বার তিনি দাবি করেছেন, তাঁর প্রশাসন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ করেছেন। ট্রাম্পের এই ধরনের দাবিগুলির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কেন স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন খড়্গের। কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, ট্রাম্পের ওই দাবির প্রেক্ষিতে স্পষ্ট ভাবে কোনও জবাব দেওয়ার বদলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। দেশের সামরিক বাহিনীর শৌর্যকে তিনি নিজের কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ খড়্গের। ট্রাম্পের সমাজমাধ্যম পোস্টের পরে যে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করেছিলেন, তা-ও নিজের পোস্টে উল্লেখ করছেন কংগ্রেস নেতা।