ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের আশিতম অধিবেশন। সহিষ্ণুতার অপূর্ব নিদর্শন ভারতবাসী ও বিশ্ববাসী সেদিন প্রত্যক্ষ করলেন। গত ২৯ ডিসেম্বর এই অধিবেশনের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান এবং সেই মহান ঐতিহাসিক, মার্কস লেলিনের পরেই এদেশ-জাত বামপন্থীদের বোধহয় সবচাইতে পূজ্য ঐতিহাসিক তকমাধারী ইরফান হাবিব। মৌলনা আবুল কালাম আজাদের একটি প্রাসঙ্গিক বচন উদ্ধৃত করছিলেন কেরলের রাজ্যপাল। বচনটি শুনবেন? আজাদ বলেছিলেন : ‘দেশভাগের পর আপদ বিদায় হয়েছে।তার বক্তব্যের সারমর্ম করলে যার অর্থ হয়। পাকিস্তান জন্ম নেওয়ায় এদেশের সমস্ত সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ওই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হয়েছে। যদিও এটা যে বাস্তব নয় তা ভারতবাসী মাত্রই জানেন, এদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন অপরিনামদর্শিতার বৈদেশিক সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসাবেই যে পাকিস্তান আজ ভারতের মাথাব্যথার কারণ, তা-ই নয়; তার চেয়েও সাংঘাতিক বিপদ ভারত রাষ্ট্রের মধ্যে দেশের শত্রা পাকিস্তানের বন্ধুরূপে স্বমহিমায় রয়েছে।
সেদিন এই কথাই বলেছিলেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান, কালামকে উদ্ধৃত করে তাঁর মনে হয়েছিল সব আপদ পাকিস্তানে যায়নি, বিষবৃক্ষের বীজ ভারতের ভূমিতেও তার বংশবিস্তার করে চলছে। পাক-বিরোধী এহেন ‘অপবাদ’ শুনে বেজায় চটে যান, সেই মহান ‘মার্কসবাদী ঐতিহাসিক’, রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে উত্তেজিত ভাবে তিনি তেড়ে যান মহামহিম রাজ্যপালের দিকে। বলতে শোনা যায় আরিফের উদ্দেশ্যে, গান্ধী বা আজাদের উদ্ধৃতি কেন চিচ্ছেন? গডসের উদ্ধৃতি দিন। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও ইরফন হাবিবের প্রাক্তন ছাত্র কে কে মহম্মদ তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন কীভাবে তার এককালের ‘পরম শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাইটি নিজের অপছন্দের লোককে ‘হিন্দুত্ববাদী’ বলে দেগে দিয়ে দিয়ে নাকাল করার চেষ্টা করতো।
আসলে এই সামান্য কথার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে, আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য। নইলে যে বামৈশ্লামিক শক্তি দেশভাগ করল, আজ তাদের অবদানকে দেশদ্রোহিতার মাপযন্ত্র (কুনকে) হিসাবে দেখা উচিত ছিল, তা না হয়ে তারা ইতিহাস-শিক্ষা দিচ্ছে, কেবল ‘ইতিহাস’-এর মুখোশ পড়ে মিথ্যা প্রচারের নামান্তর মাত্র। অথচ আজ এমনভাবে তা প্রচার করা হচ্ছে যেন এটাই মূলধারার ইতিহাস। ইতিহাস-চেতনা দিয়েই এর প্রতিবাদী কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, ‘সঙ্গীদের তৈরি ইতিহাস বলে দেগে দিয়ে অন্যদিকে নজর ঘোরানোর, সত্যকে আড়াল করার সংগঠিত চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।
ইরফান হাবিবের মতো ঐতিহাসিকরা, ইতিহাস বিষয়টা যাদের কাছে কমিউনিস্ট নামক চূড়ান্ত ভারত-বিরোধী তথা দেশদ্রোহী মতবাদ প্রচারের উপকরণ মাত্র, চিরকাল ‘হিন্দুত্বে’র জুজু দেখিয়ে এসেছেন, কারণ প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হলে এদের বহুদিনের সযত্ন লালিত ভারত-বিরোধিতার নগ্ন চেহারাটি দেশবাসী ধরে ফেলবেন। কথায় কথায় বামপন্থীরা হাবিব, কিংবা রোমিলা থাপার বা বিপনচন্দ্রের মতো ঐতিহাসিককে ‘কোট’ (উদ্ধৃত) করে, যার মাধ্যমে ভারতবর্ষ মানেই একটি আদ্যন্ত অপকৃষ্ট দেশের ছবি ভাসিয়ে তোলা মৌলনা আবুল কালাম আজাদ সাহেবের ভাষায় ‘সব আপদ পাকিস্তানে গেছে’, এমন ধারণা সঠিক নয়, আরিফ সাহেব যা বলেছেন- “বিষবৃক্ষ এদেশের মাটিতেও রোপণ হচ্ছে এই ধারণাই ঠিক। বামপন্থী ঐতিহাসিকতা নামক বিষবৃক্ষের উচ্ছেদের দায় আমাদেরই।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2020-01-03