এক গুপ্ত আত্মোন্নতির কথা : চতুর্থ পর্ব

আরো আঘাত সইবে আমার ,

সইবে আমারো –

আরো কঠিন সুরে জীবন-

তারে ঝংকার।

যে রাগ জাগাও আমার প্রাণে

বাজে নি তা চরম তানে,

নিঠুর মূর্ছনায় সে গানে

মূর্তি সঞ্চারো।

এই যে প্রবন্ধ আমি লিখছি, তাতে যে সময়ের কথা বলছি অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের সূচনায় ওয়েলিংটন স্কোয়ার  অর্থাৎ বর্তমান নাম সুবোধ মল্লিক স্কয়ার,  ধর্মতলা স্ট্রিট অর্থাৎ যার বর্তমান নাম লেলিন সরণি ,চৌরঙ্গী রোড অর্থাৎ যার  বর্তমান নাম জহরলাল নেহেরু রোড ইত্যাদি অঞ্চলে সাহেব এবং ফিরিঙ্গিরা অযথা অকথ্য অত্যাচার করত, অশ্রাব্য গালাগালি দিতো, অকারণে শারীরিক বল প্রয়োগ করতো।  এই সব অপমানের জবাবের জন্য দরকার ছিল পাল্টা মার । সেই কাজে শারীরিক বলবৃদ্ধি দরকার  ঠিকই কিন্তু রাজনৈতিক চেতনার প্রসারের ফলে তারা সশস্ত্র বৈপ্লবিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে মনোযোগী হয়।

প্রথম পর্বে আত্মোন্নতি সমিতির সঙ্গে নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য বা রঘুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেও নেতা ছিলেন হরিশচন্দ্র শিকদার। তাঁকে বলা হতো নীরব কর্মী । ১৮৮৬ সালের ১১ জুন যশোর জেলার মশালিয়া গ্রামে  হরিশচন্দ্র শিকদারের জন্ম হয়। তাঁর পিতা গোবিন্দচন্দ্র শিকদার ও মাতার সখীবালা দেবী ।
যশোরে হরিশচন্দ্রের জন্ম হলেও তাঁর পৈত্রিক গৃহ ছিল কলকাতায়। মধ্য কলকাতার চাঁপাতলায় ছুতোরপাড়া এলাকায়, ডাফরিন হাসপাতালের সামনে এক নম্বর নিতাইবাবু লেনে( যার বর্তমান নাম হরিশ সরণি ) তাঁদের বসত বাটি ছিল। তাঁদের বাড়িতে থাকতেই তিনি আত্মোন্নতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন । ১৯৩৭ সালের ১২ ই আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। 
  ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রাজা সুবোধ মল্লিক এর বাড়িতে বিপ্লবী সম্মেলনে আত্মোন্নতি সমিতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হরিশচন্দ্র শিকদার । এরপর  আত্মোন্নতি সমিতির নেতা হন প্রভাসচন্দ্র দে এবং ইন্দ্রানাথ নন্দী। রংপুরে যখন প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রভাসচন্দ্র দে বিপ্লব সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে শিক্ষকতা করতে চলে যান। 
সেই রংপুরেই প্রভাসচন্দ্রের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় প্রফুল্ল চক্রবর্তী ও প্রফুল্ল চাকীর। এইভাবেই আত্মোন্নতির সঙ্গে উত্তরের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। তবে তখন আত্মোন্নতি অনুশীলনের মধ্যে একটি উপদল হিসাবে কাজ করছে। প্রফুল্ল চক্রবর্তী হলেন  প্রথম বিপ্লবী শহীদ । দেওঘরের কাছে নিজেদের তৈরী  বোমা পরীক্ষা করতে গিয়ে ইনি মারা যান । সেই দেশীয় এতই শক্তিশালী ছিল যে তাঁর শরীরের কোন অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি ।  প্রসঙ্গত সেই সময় বিপ্লবীরা যে সমস্ত বোমা বানাতেন , তা দেওঘরের পাহাড়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হতো। প্রফুল্ল চাকী মজফরপুরে কিংসফোর্ডকে বোমা মারতে ক্ষুদিরামের সঙ্গী ছিলেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন ।
তবে আত্মোন্নতি সমিতির সঙ্গে যাঁর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং প্রভাসচন্দ্র দে অধ্যাপনার কাজে চলে গেলে তিনি ছিলেন এই সংগঠনের অবিসংবাদিত নেতা ,এমনকি ১৯০২ সালের পর আত্মোন্নতি সমিতি অনুশীলনের মধ্যে মিশে গেলেও, ১৯০৬ সালে যুগান্তর পত্রিকা প্রকাশ ও যুগান্তর গোষ্ঠীর উদ্ভব হলেও, যাঁর নামে  আত্মোন্নতির ছেলেদের বোঝানো হতো তিনি হলেন বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী। 

#ক্রমশ:
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ বাংলার প্রথম বিপ্লবী গুপ্তসমিতি “আত্মোন্নতি সমিতি”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি
হিন্দুমেলার ইতিবৃত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.