ধোনিকে হারিয়ে তাঁরই পা ছুঁয়ে প্রণাম বৈভবের, দিল্লির মাঠে সূর্যবংশীর ‘গুরুদক্ষিণা’

১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী যখন ১৮৮ রান তাড়া করতে নেমেছিল তখন উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাতে ঘাবড়ে যায়নি বৈভব। বিশ্বক্রিকেটের সেরা মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে মগজাস্ত্রের লড়াই দেখিয়েছে সে। ধোনির সব অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়ে রাজস্থানের জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছে বৈভব। তবে ম্যাচ শেষে দেখা গেল এক বিরল দৃশ্য। মাঠেই ধোনির পা ছুঁয়ে প্রণাম করল বৈভব। দিল্লির মাঠে ‘গুরুদক্ষিণা’ দিল সে।

চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৩৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেছে বৈভব। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আউট হয়ে যখন সে ফিরে যাচ্ছে, তখন দেখা যায় রাজস্থানের কোচ রাহুল দ্রাবিড় হাততালি দিচ্ছেন। চেন্নাইয়ের অভিজ্ঞ স্পিনারদের বিরুদ্ধে যে ভাবে বৈভব হাত খুলে খেলেছে তা সত‍্যিই প্রশংসার যোগ্য। ধোনি খুব কাছ থেকেই সেই সব শট দেখেছেন। ১৪ বছরের কিশোরের প্রতিভা দেখেছেন তিনি। বৈভবও জানে, ধোনিকে সব সময় কাছে পাওয়া যায় না। সেই কারণেই ম্যাচ শেষ হতে ধোনির পা ছুঁয়ে তাঁর আশীর্বাদ নিল বৈভব। তাকে দেখে বোঝা গেল, ব্যাট হাতে ঝড় তুললেও কতটা নম্র সে। ধোনিও মুগ্ধ হলেন তার ব্যবহারে। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘জেন ওয়াই’-এর কাছে ধোনিই গুরু। পা ছুঁয়ে গুরুদক্ষিণা দিল বৈভব।

ম্যাচ শেষে ধোনির মুখেও শোনা গেল বৈভবের কথা। বৈভবকে পরামর্শ দিলেন তিনি। বিশ্বক্রিকেটে সাফল্যের গুরুমন্ত্র দিলেন। ধোনি বললেন, “ওর বয়স কম। বড় শট খেলতে পারে। সাফল্য পেলে প্রত্যাশা বাড়বে। তবে চাপ নিলে হবে না। দলের সিনিয়র এবং কোচিং স্টাফদের কাছ থেকে ওকে আরও শিখতে হবে। ম্যাচের গতি প্রকৃতি বুঝতে হবে। যে সব তরুণ খেলোয়াড়েরা ভাল খেলছে, তাদের এটাই বলব। এখনও অনেক কিছু শেখার আছে।”

ধোনির কথা থেকে স্পষ্ট, বৈভবকে মাটিতে পা রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ, এই ১৪ বছর বয়সেই তারকা হয়ে গিয়েছে বৈভব। নিজের প্রথম আইপিএলেই শতরান করেছে। বৈভব বুঝিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে ভারতের হয়ে খেলার সব প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু শুরুতেই এই প্রত্যাশার চাপ অনেক সময় ক্রিকেটারের ক্ষতিও করতে পারে। সেটা যাতে না হয়, ভারত যাতে আরও এক তারকা পায়, সেই পরমার্শই দিয়েছেন ধোনি। বৈভব নিজেও নিশ্চয় ধোনির কথা শুনেছে। বুঝেছে, আগামী দিনে কী করতে হবে তাকে।

এ বারের আইপিএলে শুরুর ম্যাচগুলিতে প্রথম থেকে চালিয়ে খেলার চেষ্টা করত বৈভব। প্রতি বলে ছক্কা মারতে যেত। সেটা করতে গিয়ে অনেক সময় আউটও হতে হত। সেখান থেকে যে বৈভব শিক্ষা নিয়েছে তা এই ম্যাচে দেখা গিয়েছে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম বল থেকে মারার চেষ্টা করেনি বৈভব। পিচে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছে। বুঝে নিতে চেয়েছে ২২ গজের চরিত্র। প্রথম ১০ বলে ১২ রান করার পর হাত খুলেছে। আক্রমণের জন্য বেছে নিয়েছে ধোনির প্রধান তিন বোলিং অস্ত্র রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা এবং নুর আহমেদকে।

যেন ধোনির ক্রিকেট মস্তিষ্কের পরীক্ষা নিয়েছে বৈভব। অশ্বিন, জাডেজাদের অভিজ্ঞতাও তাকে বাগে আনতে পারেনি। বৈভবের দাপটে একটা সময় ধোনিকেও খানিকটা দিশাহারা দেখাচ্ছিল। ধোনির সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে সে। দলকে জিতিয়েছে। তবে সেই ইনিংসের পরে সে যা করেছে তাতে ভারতীয় সমর্থকদের মধ্যে তার প্রতি সম্মান ও ভালবাসা যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.