নেতানিয়াহুর গাজ়া দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, ট্রাম্পের সফরের আগেই পদক্ষেপ?

দৈর্ঘ্যে ৩০ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ২৩ লক্ষ প্যালেস্টাইনি নাগরিকের আবাসভূমি গাজ়া ভূখণ্ড পুরোপুরি দখল করার জন্য সোমবার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা। তার পরেই তেল আভিভের সেই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস ইজ়রায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে সোমবার রাতে সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আল কাশিম ব্রিগেড ইজ়ারায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পরে নেতানিয়াহুর ফৌজ ধারাবাহিক ভাবে গাজ়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এর পর কাতারের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও মিশরের প্রচেষ্টায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল ইজ়রায়েল সরকার এবং হামাস।

১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছিল। কিন্তু পণবন্দি মুক্তি ঘিরে টানাপড়েনের জেরে মার্চের গোড়ায় একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজ়ায় আবার হামলা শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনা। অবরুদ্ধ গাজ়ায় সর্বাত্মক ভাবে ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে। পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে না আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলির মানবিক সাহায্যও। এই আবহে সোমবার দুই ইজ়রায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শীঘ্রই পুরো গাজ়া উপত্যকা দখল করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার পরিকল্পনা করছে ইজ়রায়েল।

ইজ়রায়েলের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলের অভিযান ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হবে। এর ফলে গাজ়ায় হামাসকে নির্মূল করা এবং পণবন্দিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে সফলতা মিলবে বলে মনে করছেন সে দেশের প্রশাসনিক প্রধানেরা। গাজ়ার ৫০ শতাংশের বেশি ভূখণ্ডে ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। দক্ষিণের খান ইউনূস, রাফার মতো শরণার্থী শিবির এবং উত্তর গাজ়ার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকাই এখন কয়েক লক্ষ প্যালেস্টাইনির আশ্রয়স্থল।

এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলের গাজ়া দখলের পরিকল্পনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। কারণ, নতুন করে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’! শুরু হলে বহু সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সংঘাতের এই আবহেই আগামী সপ্তাহে পশ্চিম এশিয়া সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইজ়রায়েল সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সফরের আগে পণবন্দি মুক্তির বিষয়ে শেষ সুযোগ দেওয়া হতে পারে হামাসকে। নেতানিয়াহুর সরকারের দাবি, এখনও আনুমানিক ৫৯ জন ইজ়রায়েলিকে পণবন্দি করে রেখেছে হামাস। তাঁদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধবিরতি হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.