এ কোন সকাল ? রাতের চেয়েও অন্ধকার!
এ কোন পশ্চিমবঙ্গ ? এ কোন ধ্বংস, লুণ্ঠন, অরাজকতার রাজ্য ?
এ রাজ্যকে আমি চিনি না। এ পশ্চিমবঙ্গ আমাদের রাজ্য নয়। এ পশ্চিমবঙ্গ আমার চেনা বাসভূমি নয়।
এ পশ্চিমবঙ্গ অন্য কোনও হানাদারের যারা রাতের অন্ধকারে হায়নার মতো নিঃশব্দ পদচারণা করে পেরিয়ে আসে সীমান্ত। যাদের শরীর মোড়া থাকে কালো জোব্বায় কিংবা হিজাবে কিংবা বোরখায়।
এ পশ্চিমবঙ্গ অন্য কোনো চক্রান্তকারীদের যারা জানে যে কোনো মুহূর্তে সার্জিকাল স্ট্রাইক আছড়ে পড়বে তাদের ওপর। তার আগে রাজ্যের যতটা পুড়ে যায় যাক। যতটা ধ্বংস হয় হোক। যতটা লুণ্ঠন করে কেড়ে নেওয়া যায়, যাক।
এ পশ্চিমবঙ্গ সেইসব জেহাদিদের যারা ধ্বংস করতে চায় বাঙ্গলার কৃষ্টি, বাঙ্গলার সংস্কৃতি, বাঙ্গলার ঐতিহ্য, বাঙ্গলার শান্তি।
এ পশ্চিমবঙ্গ সেইসব রাজনীতিবিদদের যাদের উস্কানিতে বিদেশি হানাদাররা প্রশ্রয় পায়। পাকিস্তান বানাতে চায় বাঙ্গলার মাটিতে। জুড়তে চায় এক নয়া ইতিহাস শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভারতবর্ষের ইতিহাসে।
না। আমি বিশ্বাস করি না, এরা বঙ্গসন্তান, বঙ্গবাসী, বঙ্গভাষী। না, আমি বিশ্বাস করি না এরা ভারতীয় এরা ভারতবাসী, এরা ভারতীয় সভ্যতার ধারাবাহিক উত্তরাধিকারী। না, আমি মানি না, ওইসব লুণ্ঠনকারীরা আমার ভাই, আমার বোন, আমার মাতৃসমা কিংবা পিতৃসম।
না, আমি ভাবতে পারি না, এতদিন যা ভেবে এসেছি—আমরা রাম হলে ওরাও রহিম।
না, আমি বুঝতে পারি না— এই বাঙ্গলার একই গাছের ছায়ায়, একই সূর্যালোকে, একই শীতল বাতাসে, একই মাতৃদুগ্ধে, একই দেশমাতৃকার কোলে আমাদের বেড়ে ওঠা একসঙ্গে। না, সত্যিই ভাবতে কষ্ট হয় ওই বর্বর ডাকাতের দল যারা দিনে-দুপুরে ছিনিয়ে নিতে চায় একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অঙ্গীভূত রাজ্যের মানুষের মৌলিক অধিকার ছিনতাইবাজের মতো। তারা আমার রাজ্যের বাসিন্দা। বিশ্বাস। করুন, আমার দুচোখ জলে ভরে আসে যখন দেখি ওরা দল বেঁধে পাথর ছুঁড়ছে পাক-জঙ্গি যুবকদের মতো পুলিশকে লক্ষ্য করে, অসহায়। নিরস্ত্র সাধারণ ট্রেনযাত্রী, বাসযাত্রীদের লক্ষ্য করে। যখন দেখি ওরা লাঠি তুলছে আমার বৃদ্ধা প্রতিবেশীর মাথা লক্ষ্য করে। যখন দেখি আমার সন্তানসম শিশুটির আকুল কান্নাও তাদের নিরস্ত করতে পারছে না।
আর আমার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে, যখন দেখি ওইসব নিরীহকৃষক, নিরীহরাজমিস্ত্রী যাদের এতদিন ডেকেছি চাচা বলে, ভাইজান বলে, তারাই বাবর, নাদির শা, আওরঙ্গজেবের উত্তরাধিকারের তকমা নিয়ে আমার বোনকে বেইজ্জত করে, ধর্ষণ করে, পুড়িয়ে মারে। আমার স্ত্রীর শাড়ির আঁচল ধরে টানে আর সেই সেদিনের কাশ্মীরের মতোই প্রায় চিৎকার করে বলতে চায় বিদেশি মদত পুষ্ট অনুপ্রবেশকারীরা— অপলোগ পশ্চিমবঙ্গ ছছাড়কে চলা যাইয়ে, আপকা বিবিকো লেড়কিকো ইধার ছছাড়কে।
আপনার মাথায় আগুন জ্বলবে না একথা শুনে? আপনি আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে পড়বেন না এরপরও? আপনি এরপরও বলতে পারবেন আমিরাম—ওরা রহিম? আপনি এরপর চোখের জল ফেলবেন আপনার হারিয়ে যাওয়া চাচা চাচি ভাইজানের স্মৃতিচারণা করে?
না। একদিন নয়। দুদিন নয়। তিনদিন নয়। টানা এক সপ্তাহ ধরে রাজ্যে আগুন জ্বলেছে। একটি নির্বাচিত সরকারের চোখের সামনে স্টেশনের পর স্টেশন জ্বলেছে। ট্রেনের পর ট্রেন পুড়েছে। ভাঙচুর চলেছে নির্বিবাদে। বিনা বাধায়। বিনা প্রতিরোধে। পুলিশ এসেছে। কতিপয়। দাঁড়িয়ে দেখেছে। মজা লুটেছে। ঝকঝকে ভলভো বাসগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যাবার পর ওইসব লুটেরাদের পায়ে পায়ে ঘরে ফিরেছে পুলিশ। সরকার প্রথম দু’দিন চোখ বুঝে থেকেছে।
কেন?সরকারকেও কেউ বুঝিশাসিয়েছিল, সেই প্রবাদবাক্যটি উদ্ধৃত করে—-মাস্টারমশাই (পড়ুন দিদিমণি) আপনি কিছু দেখেননি? যিনি নিজেকে মাঝে মাঝেই হিজাবের ঘেরাটোপে ঘিরে নেন, বসে পড়েন নমাজের কায়দায়, তাকেও কি ওই হানাদাররা শাসিয়েছিল মিস্টার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন (পড়ুন দিদিমণি) আমি তো আপনারই সৃষ্টি, তাহলে আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন?
প্রাথমিক হিসেব— শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খঙ্গপুর ডিভিশনে ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। তারপর রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বাস পোড়ানো, দোকান পোড়ানো, ভাঙচুর, রাহাজানি—এসব মিলিয়ে ন্যূনতম চার কোটি! অর্থাৎ ২৪ কোটি শেষ। তার সঙ্গে যা অঙ্গীভূত হলো—মানুষের হয়রানি, নারীর চোখের জল, শিশুর খিদে, তৃষ্ণার্তের আর্তি, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পিতা-মাতা, মাতামহী, পিতামহীদের অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠা বুকের হাহাকার ধ্বনি। এসবের হিসেব কিমাপা যাবে অঙ্কের হিসেবে? কিন্তু কেন?
একটাই কারণ দেশের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে? অসহায় উদ্বাস্তুদের, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মান জানানোর জন্য। তারা নামলেন পথে? তারা ভাঙচুর করলেন? তাঁরা আগুন জ্বালালেন?
না। আমরা শুনেছি- ধ্বংস যেখানে, সেখানেইনারা—“আল্লাহু আকবর। পাকিস্তান তেরা নাম হ্যায় ইনসান।না, এ স্লোগান আমার নয়। আপনার নয়। আপনিও জানেন। হ্যা আপনিও জানেন, এ স্লোগান এপারের নয়। ওপারের। যেখানে তারও পরপারের দেশ থেকে এসেছে জঈশ-ই-মহম্মদ, জামাত-ই-ইসলামির মতো আন্তর্জাতিক ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের হাতে তৈরি আত্মঘাতী মূখ পাকপন্থী ইসলামির দল।
এতদিন তারা ছিল বুক ফুলিয়ে । রাজনৈতিক ধান্দাবাজির বেলুনের হাওয়ায় ফুলে ফেঁপে। এবার বুঝেছে সন্ধিক্ষণ এগিয়ে এসেছে। এবার তাদের পিঠে ছাপ পড়বেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং নিশ্চিন্তে ভারতবর্ষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবার মতো পরিকল্পনাকারীদের এবার বার করে দেওয়া হবেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে। কারণ রাজনীতির তোষণের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে।
একটু তাকিয়ে দেখুন। জ্বলেছে অসম। জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ। বাকি ভারতবর্ষ ? –না কোথাও আগুন দেখা যায়নি। কোথায় সন্ত্রাসের ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়নি আকাশ। না কোথাও ভাঙচুর হয়নি। লুটতরাজ হয়নি। বাস পোড়েনি। দোকান পোড়েনি।
এরপরেও কি মানতে হবে না, গোটা ভারতবর্ষই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর বিরোধী? গোটা দেশ যেমনটি বলছেন ওই হিজাব পরা মাননীয়া? এর পরেও কি শুনতে হবে, এসব আইন মানি না, মানব না যেমনটি দাবি করছেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে? যে মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার সময় জনসমক্ষে 7611360191, I do swear in the name solemnly affirm that I will bear true faith and allegiance to the constitution of India as by law established…? এরপরেও কি আমরা ভুলে যাব— তিনিই ২০০৫ সালে বিজেপির জোটসঙ্গী হয়ে ২২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জির দাবি তুলেছিলেন ? লোকসভায় প্রস্তাব পেশ করার অনুমতি না পেয়ে লোকসভার ডেপুটি স্পিকারকে নাগরিক পঞ্জির নথি ছুড়ে মেরেছিলেন তিনি নিজের হাতে?
না, আমি বা আপনি কিছুই ভুলিনি। ভুলিনি। এই বাঙ্গলার আত্মা রবীন্দ্রনাথের সেই সত্যি। কথা—“পৃথিবীতে দুটি ধর্মসম্প্রদায় আছে অন্য ধর্মমতের সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধতা অত্যুগ্র সে হচ্ছে খ্রিস্টান আর মুসলমান ধর্ম। তারা নিজেদের ধর্মকে পালন করেই সন্তুষ্ট নয়, অন্য ধর্মকে সংহার করতে উদ্যত।” না, আমি বা আপনি— আমরা কেউই ভুলিনি ওইসব ধান্দাবাজি মানুষের প্রচার হিন্দুটি বুঝি না, আমি মানুষ (মানবাধিকারবাদী), আমি মার্কসবাদী (নব্য সাম্যবাদী), আমি বুদ্ধিজীবী (সবচেয়ে বড়ো ধান্দাবাজ), তাদের উদ্দেশ্য করেই রবীন্দ্রনাথ নিঃশঙ্ক চিত্তে লিখে গিয়েছেন—“হিন্দু ভারতবর্যের একটি জাতিগত পরিণাম।” বলেছেন- “আমি হিন্দু একথা বলিলে যদি নিতান্তই কোনো লজ্জার কারণ থাকে তবে সে লজ্জা আমাকে নিঃশব্দে হজম করিতে হইবে। কারণ বিধাতার বিরুদ্ধে নালিশ করিতে হইলে সেই আপিল আদালতের জজ পাইব কোথায়?”
মনে পড়ে ১৯৪৬-এর দাঙ্গা? না, আমরা জানি না কারণ আমরা তখন মাতৃগর্ভেও আসিনি। কিন্তু ইতিহাস তো থেকে যায়। থেকে যায় আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিচারণ। কলকাতা শহরের রাস্তায় সেদিন হিন্দুর মৃতদেহের স্থূপ জমেছিল আর দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যিনি সেই সুরাবর্দিকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চিন্তে অনশনে বসেছিলেন গান্ধীজী। পেশাদারি এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে।
আমরা ভেবেছিলাম— সেটাই হবে এ বাঙ্গলার শেষ দাঙ্গা। এমনকী, ১৯৯২-এ ডিসেম্বরের দাঙ্গায় গোটা দেশ জ্বললেও পশ্চিমবঙ্গ জ্বলেনি। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু রাজ্য পুলিশের অপারগতা অনুমান করে গোটা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীর হাতে।
না, মিথ্যে বলব না। ২০১৯-এর এই বারবেলায় পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হয়নি। যা হয়েছে তা একপেশে ধর্মীয় আক্রমণ (যদিও আজকের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় তা প্রতিবাদ)। কিন্তু অস্বীকার কি করা যাবে (সম্ভবত মাননীয়াও অস্বীকার করবেন না) যে অদূর ভবিষ্যতে দাঙ্গা-পরিস্থিতির সম্ভাবনাটা উস্কে দেওয়া হলো? এবার জ্বলেনি। কারণ হিন্দুরা, বৌদ্ধরা, শিখরা, জৈনরা, বাহাইরা, মতুয়ারা, জরাথুস্টরা প্রতিরোধের সবরকম প্ররোচনাকে এড়িয়ে গেছেন। কারণ আমরা ভুলিনি রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ সত্য—“হিন্দু কোনো বিশেষ ধর্ম নয়, হিন্দু ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটা জাতিগত পরিণাম। জাতি জিনিসটা মতের চেয়ে অনেক বড়ো।”তাই সামলে গেছেন হিন্দুরা। কিন্তু যদি তারা পথে নামতেন? যদি তারা সিদ্ধান্ত নিতেন পথ অবরোধে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সকে পথ করে দেবেন তাঁর শেষযাত্রায়?যদি তারা সিদ্ধান্ত নেবেন স্কুলফেরত শিশুদের, দূর যাত্রা শেষে ফেরত ট্রেনযাত্রীদের পৌঁছে দেবেন যে যার গন্তব্যস্থলে? না, কেউ তা করেননি। হিন্দুরা করেননি কারণ করলে দাঙ্গা হতো। কিন্তু বাকিরা? ওই মানবাধিকারের যাঁরা বড়াই করেন— সেনবংশজাত চলচ্চিত্র নাট্যশিল্পীরা, সরকার বংশজাত, গোস্বামী বংশজাত কবিরা, তৃণমূলি জমানায় প্রসন্নচিত্ত শিল্পীরা— তারাও তো নামেননি। প্রেসক্লাবে বসে বিনি পয়সার চায়ে চুমুক দিতে দিতে বড়ো বড়ো কথা বলেছেন—মানবপ্রেমের কথা, মানবাধিকারের কথা, মনুষ্যত্বের কথা! ধিক্। আপনাদের জন্য মুখের থুতু নষ্ট করতেও দু’বার ভাবতে হয়।
না, সংখ্যালঘুরা ভয় পাবেন না। যাঁরা। ভারতীয় সংখ্যালঘু তারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনাদের নাগরিকত্ব কেউ কেড়ে নেবে না, কেড়ে নিতে পারবে না। কোনও সংবিধান নয়। কোনো আইন নয়। কোনো রক্তচক্ষু নয়।
কিন্তু যেসব সংখ্যালঘু গত এক সপ্তাহ ধরে বীরত্ব দেখালেন ২০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে, ভারতের ইজ্জতকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে, তাদের জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, গোটা ভারতবর্ষই অনাদিকালের জন্য ধর্মশালার ভূমিকা পালন করবে না। হিন্দু সহনশীল। কিন্তু সহনশীলতারও একটা সীমা থাকে। নদীর বাঁধ যখন ভাঙে তখন যে সুনামির মতোই গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ওইসব বীরপুঙ্গবদের বলতেই হচ্ছে— আপনারা ভালোয় ভালোয় দেশে ফিরে যান আপনার। পড়শীর মতোই যাঁরা নিজেদের অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা করেই ভারত সীমান্ত পার হয়েছেন বাগদার কুলিয়া, রণঘাট, কাশীপুর, জিৎপুর, বাঁকাঘাটা বর্ডার পার হয়ে। বনগাঁ, বসিরহাটের বিস্তীর্ণ সীমান্ত আজও বিলকুল কাটাতারবিহীন। হে আল্লার বীরসন্তানেরা! নিশ্চিন্তে দেশে ফিরুন। আমরা আপনাদের মুখে জাতীয়তাবাদ আর গণতন্ত্রের কথা শুনতে চাইছি না। আমরা শ্রেণী সংগ্রাম, সর্বহারার বিপ্লবের কথাও অনেক শুনেছি। কিন্তু তাদেরও বিপ্লবী পতাকার আড়ালে তোষণবাদী ভোটযন্ত্রের খেলা আমরাও জেনেছি, বুঝেছি। ঠিক সার্জিকাল স্ট্রাইকের সময় আপনাদের দেশ পাকিস্তানের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্ব, ঠিক কাশ্মীরকে শাপমুক্ত করার সময় যেমনভাবে গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছে ভারতবর্ষের পাশে, ঠিক যেমনভাবে জঈশ নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করতে গোটা বিশ্ব একমত হয়েছিল। এবারও দেখবেন, আপনাদের পায়ের তলায় ভারতবর্ষ তো নেই-ই। গোটা বিশ্বই নেই। এমনকী নেই পাকিস্তানও। ঠিক আজ যেমন বাংলাদেশ আপনাদেরই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরে জেলবন্দি করছে, কাল তেমনই যেখানে ঢুকতে যাবেন সেখানেই রোহিঙ্গাদের মতো আপনাদের পরিচয় হবে নাগরিকত্বহীন সংখ্যালঘু। সেদিন দেখব, আজকের বীরত্ব কতখানি মজবুত থাকে!
আমরা হিন্দু। সমগ্র ভারতবসী হিন্দু। ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ হয়েও হিন্দুরাষ্ট্র। কারণ হিন্দু কোনো ধর্ম নয়। হিন্দু একটি জাতি। এই হিন্দুর আত্মিক মন্ত্র—
‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ
সর্বে ভদ্ৰানি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখভাগভবেৎ।
আপনারা আগুন জ্বেলে অন্যায় করেছেন। আমরা আগুন দেবনা। আপনারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করেছেন। আপনাকে আমরা ধ্বংস করব না। শুধু হাতজোড় করে বলব— ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীরা, নিজভূমে ফিরে যান। সুখে থাকুন। শান্তিতে থাকুন। যাতে আমায় কখনও না বলতে হয়—
“এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না
এই জন্যুদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশানভূমি আমার দেশ না
আমি আমার দেশকে ঘিরে কেড়ে নেব।”
সুজিত রায়
2019-12-27