পূর্ণিমা শীল। আজ থেকে দশবছর আগে, পূর্ণিমা যখন তেরো বছরের এক কিশোরী, সেই সময় বাংলাদেশে পূর্ণিমার পরিবার আক্রান্ত হয়। আক্রমণের একটিই কারণ–পূর্ণিমারা ধর্মে হিন্দু। আক্রমণকারীরা পূর্ণিমার। পিতা-মাতাকে মারধর করে পূর্ণিমাকে একটি ঘরে টেনে নিয়ে যায়, এবং সেখানে তাকে গণধর্ষণ করে। পূর্ণিমার অসহায় মা আক্রমণকারীদের পায়ে ধরে কাতর আবেদন করেছিলেন—“বাবা, আমার মেয়েটা বড় ছোট। তোমরা একসঙ্গে সবাই ওই ঘরে যেও না। ওর কষ্ট হবে। একজন একজন করে যাও।’ কতটা অসহায় হলে একজন মা তার কন্যাসন্তানকে ধর্ষিতা হতে দেখে এরকম কাতর আকুতি করতে পারেন ভাবুন। সুদীপ অধিকারী। বাংলাদেশের বাগেরহাট থেকে পালিয়ে চলে এসেছিলেন এপার বাঙ্গলায়। শুধুমাত্র হিন্দু—এই কারণে তাকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। সুদীপবাবু তার স্মৃতিচারণায় লিখেছেন—“সেই রাতেই মৃত্যুদূতেরা সশস্ত্র হয়ে হানা দিল আমাদের বাড়িতে। লাথি মেরে দরজা ভেঙে টেনে বের করল বাবা মামা আর দাদাদের। রাইফেল উচিয়ে টেনে নিয়ে গেল অন্ধকারে। আধো অন্ধকারে তাদের চেনা গেল—তারা আমাদের গ্রামের হাতেম আলি, রহমান মিঞা আর বাসাবাটির মওলানার মদতপুষ্ট এনায়েতের ভাই ছোটু। তাদের আরও দুই সঙ্গী বিষ্ণুপুর কলাগাছিয়ার দুই দুষ্কৃতী। মা মঞ্জুকে বুকে জড়িয়ে। অন্ধকার ঠাকুর ঘরের কোণে লুকিয়ে ছিল। মায়ের বুক থেকে ওরা হ্যাচকা টানে ছাড়িয়ে নিল মঞ্জুকে। মা উপুর হয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরল একজনের পা। চিৎকার করে উঠল—তোমাদের পায়ে পড়ি ওকে ছেড়ে দাও। একটা লাথি পড়ল মার মুখে। অন্ধকার রাত ভেদ করে বাঁচাও, ওমা আমাকে বাঁচাও’আর্ত চিৎকারে কেঁপে উঠল সারা গ্রাম। পুঁটিমারি নদীর তীর থেকে সে আর্তনাদ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেল। অন্ধকার রাস্তায় হোঁচট খেতে খেতে ছুটেও মা মঞ্জুকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করতে পারল না।
তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের জন্য কী ভবিতব্য অপেক্ষা করে আছে চল্লিশের দশকের গোড়া থেকেই তা বোঝা যাচ্ছিল। চল্লিশের দশকের গোড়াতেই মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবিতে মুসলিম লিগের আন্দোলন ক্রমশ চড়া আকার ধারণ করছিল। এবং সেই সঙ্গে পূর্ববঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নেমে আসছিল। দিন যত এগোচ্ছিল, এই আক্রমণের মাত্রাও তত চড়ছিল। তার চূড়ান্ত প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৪৬-এর আগস্টে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস এবং ওই বছরই অক্টোবরে নোয়াখালির হিন্দু নিধনে। স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবিতে সরব হওয়া মুসলমান নেতারা পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম পঞ্জাবে মুসলমান জনগোষ্ঠীর ভিতর তীব্র হিন্দু বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমিতে হিন্দুদের যে কোনো অধিকারই থাকতে পারে না—এমনই ধারণা তৈরি করেছিলেন তারা। দ্বিজাতি তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা সৈয়দ আহমেদ খান লিখেছিলেন—‘বাঙ্গালিদের নেতৃত্ব আমাদের মানলে চলবে না। কোরানের নির্দেশ মতো আমরা স্বতন্ত্র পথে চলব।’ ‘বাঙ্গালি’ বলতে সৈয়দ আহমেদ খান পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালি হিন্দুদেরই বুঝিয়েছিলেন। এসব ছাড়াও সর্বোপরি ছিল মহম্মদ আলি জিন্নাহ এবং মুসলিম লিগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের হুংকার।১৯৪৬-এর আগস্টে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের প্রাক্কালে সমগ্র কলকাতা শহর একটি পোস্টারে ছয়লাপ। করে দেওয়া হয়েছিল। ওই পোস্টারে জিন্নাহর একটি তরবারি হাতে ছবির তলায় লেখা ছিল—‘কাফেরগণ, তোমাদের শেষ দিন সমাসন্ন। এখানে আবার মুসলমানের ন্যায়দণ্ড প্রতিষ্ঠা হবে। ১৯৪৬-এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস এবং নোয়াখালির দাঙ্গার পরই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল সমগ্র পঞ্জাব এবং বাংলা যদি জিন্নাহর দাবি মতো পাকিস্তানে চলে যায়, তাহলে ওই দুই প্রদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু-শিখদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তড়িঘড়ি স্বাধীনতালাভের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল কংগ্রেসের হিন্দু নেতারা অবশ্য ওই দুই প্রদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু এবং শিখদের ভবিতব্যটি বিবেচনার মধ্যে আনতেই চাননি। কংগ্রেস নেতা সি রাজাগোপালাচারি দেশ বিভাজন সংক্রান্ত যে পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন, তাতে স্পষ্টই বলা ছিল—সমগ্র পঞ্জাব এবং বাঙ্গলাকে পাকিস্তানে দিয়ে দেওয়া হোক। রাজাগোপালাচারি এও বলেছিলেন, পঞ্জাব এবং বাঙ্গলা ভারতের স্বাধীনতা লাভের পক্ষে বড় অন্তরায়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালিদের দুর্ভাগ্য যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই রাজাগোপালাচারিই এই রাজ্যের প্রথম রাজ্যপাল হয়ে এসেছিলেন। জওহরলাল নেহর বলেছিলেন—“আমাদের এখন বয়স হয়ে গেছে, আর দীর্ঘ আন্দোলন করার মতো ক্ষমতাও আমাদের নেই। কাজেই তখন একটা সমঝোতায় আসার দরকার ছিল। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেছিলেন—“আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে দেশভাগ হবে। দেশ কিন্তু ভাগ হলো গান্ধীর জীবিতাবস্থাতেই। গান্ধী বললেন—“আমার এখন মৌনতা পালনের সময়। এ প্রসঙ্গে নেহরু অবশ্য পরে বলেছিলেন—“মহাত্মা যদি একবার মুখ ফুটে বলতেন তিনি দেশভাগ চান না, এবং আমাদের আরও আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলতেন, তাহলে আমরা আন্দোলন করতাম। সমগ্র পঞ্জাব এবং সমগ্র বাঙ্গলা ইচ্ছা থাকলেও জিন্নাহ নিতে পারেননি।
ওই দুই প্রদেশের হিন্দুপ্রধান অংশ ভারতে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৬-এ মুসলিম লিগের হিন্দু নিধন প্রত্যক্ষ করে দুই ব্যক্তিত্ব বুঝেছিলেন, পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম পঞ্জাবে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু-শিখরা থেকে যাবেন, তাদের উপর ভয়াবহ আক্রমণ নেমে আসতে বাধ্য। এই দুই ব্যক্তিত্ব হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। বলতে গেলে, ১৯৪০-এর গোড়া থেকেই পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা দেখে শ্যামাপ্রসাদ ক্রমশ শঙ্কিত হয়েছিলেন এবং বুঝেছিলেন, সমগ্র বাংলা যদি জিন্নাহ এবং মুসলিম লিগের কবলে চলে যায়, তাহলে সমগ্র হিন্দু জাতি গোষ্ঠীর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। কাজেই অখণ্ড বাঙ্গলার পশ্চিম অংশ, যেটি হিন্দুপ্রধান তাকে ভারতে রাখতে তৎপর হয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। এবং তাতে সফলও হয়েছিলেন। তৎসত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন তিনি। শ্যামাপ্রসাদ এবং আম্বেদকর, দুজনেই নেহরুর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারত এবং পাকিস্তানের ভিতর সংখ্যালঘু বিনিময় হোক। সে প্রস্তাব নেহরু মানেননি। নেহর সেই মনোভাবকে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন ‘দুর পনেয় কলঙ্ক। যদি নেহর সেদিন শ্যামাপ্রসাদ এবং আম্বেদকরের সংখ্যালঘু বিনিময়ের প্রস্তাবটি মেনে নিতেন, তাহলে আজ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা নাগরিক পঞ্জিকরণের প্রশ্নই উঠত না ভারতে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকেই তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ থেকে দলে দলে হিন্দুরা অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন। ১৯৪৭, ১৯৫০ এবং ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ হিন্দু সবকিছু খুইয়ে একবস্ত্রে পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু এতেই শেষ নয়। শরণার্থীর ঢল কম-বেশি সবসময়ই লেগে থেকেছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্ম হলেও হিন্দুদের উপর আক্রমণ বন্ধ হয়নি। ফলে সরকারি তথ্য পরিসংখ্যানেই দেখা যাবে, প্রতি বছরই কমবেশি হিন্দু শরণার্থী এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরা কেউ পর্যটকের মতো এদেশে আসেননি। ভিসা পাসপোর্ট নিয়েও এদেশে আসেননি। নিজের স্ত্রী-কন্যাকে চোখের সামনে ধর্ষিতা হতে দেখে, নিজের জীবিকা এবং সম্পত্তি হারিয়ে প্রাণভয়ে এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। একটি সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে এক কোটিরও বেশি হিন্দুর কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না বাংলাদেশে। এদের অনেককেই বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। অনেককে খুন করা হয়েছে। অনেকে পালিয়ে গেছেন। আসলে এরা বরাবরই ভেবে এসেছে, ভারতই তাদের প্রকৃত আশ্রয়দাতা। কারণটা আর অন্য কিছুই নয়। ভারত রাষ্ট্রটিকে ভাগ করা হয়েছিল ধর্মের ভীত্তিতে। মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি যখন পাকিস্তান হয়েছিল, তখন পরোক্ষে এটাও স্বীকৃত হয়েছিল ভারত হিন্দুদের আবাসভূমি। সে কারণেই অত্যাচারিত হিন্দুরা বারবার ভারতেই আশ্রয় চেয়েছে। এই চাওয়ার ভিতর কোথাও কোনো ভুল ছিল না। কিন্তু ভারত রাষ্ট্র এতদিন এদের প্রতি কী আচরণ করেছে ? সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেছে কি এদের? প্রথম ভুলটি হয়েছিল দেশভাগের সময়। স্বাধীনতার স্বপ্নে মশগুল নেতারা এই হতভাগ্য হিন্দুদের কাছে জানতেই চাননি তারা কোন দেশের নাগরিকত্ব চান? হিন্দু প্রধান ভারতের, না জিন্নাহর ইসলামি দেশ পাকিস্তানের ? এই হতভাগ্য মানুষগুলি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন, তারা একটি ইসলামিক দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বনে গেছেন। সাত দশকে ভারত সরকার ও কিন্তু এই মানুষগুলির প্রতি। কোনোরকম মানবিক আচরণ করেনি। অথচ ভারত রাষ্ট্রের কর্তব্য ছিল এই অসহায় হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা। তা না করে, সুন্দরবনের মরিচঝাপিতে এই অসহায় শরণার্থীদের গুলি করে মেরেছে রাষ্ট্র।
হিন্দু শরণার্থীরা আজ সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকবেন দুই গুজরাতি ভদ্রলোক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী এবং অমিত শাহের প্রতি যে কর্তব্য কেউ কোনোদিন পালন করেনি, সেই কর্তব্যই এঁরা দুজন পালন করলেন। ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই ছিল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া হবে এবং নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এগিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ফরেনার রেজিস্ট্রেশন আইন এবং পাসপোর্ট আইনে কিছু পরিবর্তন আনে। তাতে বলা হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এদেশে শরণার্থীর মর্যাদা পাবেন। অর্থাৎ ইচ্ছা করলেই যে এদের এদেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে না—সেটি আইনত পাকাপোক্ত করে দেওয়া হলো। এরই পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকেও একটি বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেটি কীরকম? নরেন্দ্র মোদীই হচ্ছেন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ওখানকার হিন্দুদের অনত্যম ধর্মীয় স্থান ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন। এবং খান সেনাদের হাতে বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশের অন্যতম হিন্দু মন্দির রমনা কালীবাড়ির সংস্কারকল্পে অর্থমঞ্জুর করেন। এই দুটি কাজের মাধ্যমে একটি পরিষ্কারবার্তা তিনি বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন। বার্তাটি হলো—সে দেশের হিন্দুদের পাশে ভারত রাষ্ট্র রয়েছে। এবং অবশেষে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে এই হিন্দুশরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করলেন। একথা বলতেই হয়, এই অত্যাচারিত, নিপীড়িত, সর্বস্ব খোয়ানো হিন্দু শরণার্থীদের চোখের জলের মূল্য নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ যথার্থ বুঝতে পেরেছেন। এরপর থেকে হিন্দু শরণার্থীরাও ভরসা রাখবেন এই দুই গুজরাতির উপর।
অন্যদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের ভূমিকা কী? বামপন্থীরা অবশ্য দেশভাগের সময়ই পাকিস্তান প্রস্তাবের সমর্থক ছিল। আওয়াজ তুলেছিল, “আগে পাকিস্তান দিতে হবে, পরে ভারত স্বাধীন হবে। কংগ্রেস দেশভাগের সময় তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের অসহায় হিন্দুর আর্তনাদ উপলব্ধি করার প্রয়োজনই বোধ করেনি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙ্গালি প্রেমের অন্তরালে বাংলাদেশি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের পাকাপাকি বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে চাইছেন এই পশ্চিমবঙ্গে। এরা সকলে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব ঠেকাতে এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করতে আসরে অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা। অভিযোগ করছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপূর্ণ। এতে মুসলমানদের নাগরিকত্ব প্রদানের কোনো কথাই বলা হয়নি। বরং মুসলমানদের এই দেশ থেকে বিতাড়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদের এইসব অভিযোগের জবাবে বলা যেতে পারে, প্রথমত এই বিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলা নেই। বরং এই বিলে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যে অধিকার দেওয়া আছে, তা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। এই বিলে আরো বলা আছে, হিন্দু, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাইরেও অন্য দেশে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে নির্যাতিত কোনো ব্যক্তি যদি এ দেশের নাগরিকত্ব চায়, তা বিবেচনা করে দেখা হবে। দ্বিতীয়ত এই বিলটি শুধুমাত্র শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষেই তৈরি করা হয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা এই অপপ্রচার যখন চালাচ্ছে, তখন খুব চতুরতার সঙ্গে তারা রাষ্ট্রসংঘ প্রদত্ত শরণার্থীর সংজ্ঞাটিকে চেপে যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ পরিষ্কার বলেছে—কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি নিজ দেশে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে নির্যাতিত অত্যাচারিত হয়ে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেয় তবেই সে শরণার্থী। এই সংজ্ঞায় কিন্তু মুসলমানরা গণ্য হন না। পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মুসলমানরা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসেননি। তারা অন্য কোনো কারণে এসে থাকতে পারেন। আসলে এদের শঙ্কাটা অন্য জায়গায়। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কার্যকরী হলে এদের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি লাটে উঠবে। এদের বাঙ্গালি দরদি মুখোশটি খসে গিয়ে এবার হিন্দু বিরোধী মুখটি প্রকাশ্যে আসবে।
হিন্দু শরণার্থীরা এখন বুঝতে পারছেন কে তাদের বন্ধু, আর বন্ধুর ছদ্মবেশে কে তাদের শত্রু। কে তাদের এতদিন প্রতারণা করে এসেছে। প্রতারকদের সমুচিত শিক্ষা দেবেন সব হারিয়ে এই বাংলায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা।
রন্তিদেব সেনগুপ্ত
2019-12-27