২০০৯ থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে ডিটেনশন সেন্টার, সুপ্রিম কোর্টও ওয়াকিবহাল

ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে বিতর্ক এখন রাজনীতির দাবাখেলার গুটি। এই ডিটেনশন ক্যাম্প সরাসরি এনআরসির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়েছে। আজ রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করার পরে, বিজেপি তাকে তীব্র প্রত্যাঘাত করে। তাকে মিথ্যার সর্দার বলে অভিহিত করে। সত্যিটা হ’ল ২০০৯ সালে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকেই নির্দেশন জারি করা হয়।

২২ শে ডিসেম্বর, দিল্লির রামলীলা ময়দানের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে ডিটেনশন ক্যাম্প কংগ্রেস এবং আরবান নকশাল দ্বারা ছড়ানো গুজব । এই দেশের মুসলমানদের না কোনও ডিটেনশন সেন্টারে প্রেরণ করা হবে, না ভারতে কোনও ডিটেনশন সেন্টার আছে। এটি একটি নির্জলা মিথ্যে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় সমস্ত মহল।

রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঝে বুঝে নেওয়া যাক যে দেশে কখন এবং কোথায় ডিটেনশন সেন্টারগুলি নির্মাণ করা শুরু হয়েছিল এবং সেগুলি কোথায় নির্মিত হয়েছে ।

♦ ডিটেনশন সেন্টারের বিস্তারিত ম্যানুয়াল প্রকাশ করা হয়

লোকসভায় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০০৯ সালেই রাজ্য সরকারকে ডিটেনশন সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ বিদেশীদের যে কোনও পরিস্থিতিতে তত্ক্ষণাত্ বাড়ি পাঠানো যেতে পারে। কেন্দ্রে সেই সময় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ছিল।

জুলাই ২, ২০১৯-তে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় সংসদে বলেন যে ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এই জাতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি এও জানিয়েছিলেন যে, ৯ ই জানুয়ারী ২০১৯ এ, সমস্ত রাজ্যে মডেল ডিটেনশন সেন্টারগুলির বিস্তারিত ম্যানুয়াল জারি করা হয়েছিল ।

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে , সমাজকর্মী হর্ষ মন্দার সুপ্রিম কোর্টে একটি আর্জি দাখিল করেন যাতে আসামে স্থাপিত ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে রাখা মানুষের পরিবারের পরিস্থিতি ঘোষণা ছিল। বিদেশি ঘোষিত নাগরিকদের তাদের পরিবার থেকে পৃথক করার পরে ১১ পৃষ্ঠার ম্যানুয়ালটি জারি করা হয়েছিল ।

বিষয়টি নিয়ে আদালতে বিতর্ক হয়েছিল যে রাজ্য সরকার কারাগার এবং ডিটেনশন সেন্টারের মধ্যে পার্থক্য করছে না এবং তাই আসামের জেল ম্যানুয়াল অনুসারে শিবির পরিচালনা করা হচ্ছে। ৫ নভেম্বর ২০১৮এ আদালতে বিতর্ক চলাকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছিল যে শীঘ্রই সারাদেশে ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে রাখা বিদেশীদের জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে। এরপরেই সমস্ত রাজ্যে ম্যানুয়াল জারি করা হয়েছিল ।

♦ম্যানুয়াল কী বলে?

ম্যানুয়ালটির ৩৯ পয়েন্টে বলা হয়েছে যে ডিটেনশন সেন্টার বা শিবির স্থাপনের জন্য রাজ্যগুলিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি প্রয়োজন নেই। বলা হয়েছিল যে কারাগারের বাইরে ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করা উচিত এবং তাদের সংখ্যা এবং আকার অবৈধ বিদেশী সংখ্যার অনুপাত এবং তাদের প্রত্যাবাসনের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ।

আসামে বর্তমানে ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে, যা অন্য কোনও রাজ্যের তুলনায় সর্বোচ্চ। এনআরসি প্রকাশের পরে আরও ১০ টি তৈরি করা হবে। ৩১আগস্ট ২০১৯ এ প্রকাশিত এনআরসিতে ১৯ লাখ লোকের নাম রয়েছে এবং ৩.২৯ কোটি লোক এতে আবেদন করেছে। যারা তালিকার বাইরে রয়েছেন তাদের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল এবং আদালতে যেতে হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.