নরেন্দ্র মোদী সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ দেশের সংস্কার, উন্নয়ন ও সুরক্ষার প্রশ্নে আশাতীত সাফল্য, বিরোধীদের ক্রমশ কোণঠাসা করে ফেলছে।
বর্তমানে এনআরসি নিয়ে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে জনমানসে ভীতির সঞ্চার করতে উঠেপড়ে লেগেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমের নাগরিক পঞ্জি তৈরি হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও পর্যবেক্ষণে। বিজেপির কোনো ভূমিকাই ছিল না। বরং ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে চুক্তির ফলস্বরূপ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আমি এই প্রসঙ্গে CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রসঙ্গে আসতে চাই। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫ থেকে ১১ (পার্ট-২) অনুসারে। এবং সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৬, যা পরে অ্যামেন্ডমেন্ট হয় ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০৩, ২০০৫ এবং সর্বশেষ ২০১৫-তে।
পূর্বতন নাগরিকত্ব আইনে বলা আছে যারা অবৈধভাবে পাশপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করবে বা ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও অবৈধভাবে দেশে থাকবে এবং মিথ্যা ও নকল দস্তাবেজ দেখিয়ে দেশে থাকবে, তারা দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবে না। অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী যারা নিজের থেকে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেবে, তারা ভারতের নাগরিক থাকতে পারবে না।
শুনেছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর দুইটি দেশের পাশপোর্ট আছে। অতএব তার নাগরিকত্বও পর্যবেক্ষণের মধ্যে পড়ে। ৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পর ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি ভারতের নাগরিক থাকতে পারে না, যদি না সে তার জন্ম ভারতে নথিভুক্ত করায় নাগরিক হিসেবে ভারতে থাকাকালীন। এখানে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে এই ডিসেম্বর মাসেই। কারণ কে ভারতের নাগরিক আর কে নয় তা স্থির করার অধিকার ভারতের আছে।
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে প্রশ্ন তোলেন যে অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ ও পাশ্ববর্তী দেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। অবশ্য সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী শাসন ছিল। তিনি বিরোধী নেত্রী ছিলেন। সুতরাং এই বহিরাগতরা যে বামেদের অবৈধ ভোটব্যাঙ্ক হয়ে উঠেছে তা তিনি বুঝেছিলেন। এখন তিনি শাসন ক্ষমতায় এসে সেই ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগাচ্ছেন। যার জন্য এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় নেমেছেন। মোদী সরকার দেশের স্বার্থে এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে যাতে দেশের বাইরে করা যায় তার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনেছেন। বামপন্থী, কংগ্রেস ও তৃণমূলের তাই সবথেকে বেশি মাথাব্যথা। এরা দেশের সুরক্ষা, উন্নয়নের আগে নিজেদের উন্নয়ন ও ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ভুল বোঝানোর কাজে নেমে পড়েছে। এখানে অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর সংজ্ঞার প্রকারভেদ বোঝা দরকার।
ইউ এন দ্বারা যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তাতে বলা আছে, যে-সমস্ত দেশের সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় ভাবে উৎপীড়িত হচ্ছে বা সামাজিক ভাবে বঞ্চনার শিকার হওয়ার জন্য তাদের নিজেদের দেশে অসুরক্ষিত, তারা অন্য দেশের শরণ নিলে তাদের শরণার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে। অন্য কেউ এই সুযোগ পারে না। অর্থাৎ মোদী বলেছেন যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, ইশাই, এই ভাবে অত্যাচারিত হয়ে আসে তবে তাদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে ভারতে। কী ভুল বলেছেন ? এরা তো ওই সমস্ত দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরুরা তো ওই সমস্ত দেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হন না। অর্থাৎ সোজা কথায় মুসলমানরা। সুতরাং তারা যদি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন, তারা অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই চিহ্নিত হবেন। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। তারা এদেশের মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানে ভাগ বসাচ্ছেন। দেশকে সন্ত্রাসবাদের বেড়াজালে জর্জরিত করছেন। এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীর হয়ে দাবি করেছি যে ছয় বছরের যে সময় দেওয়া হয়েছে ভারতে থাকার জন্য ও নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য তাও তুলে নিতে। কোনো দস্তাবেজের বা দলিলের দরকার হবে না। এই ধরনের যারা শরণার্থী তারা যে মুহূর্তে আবেদন করবেন একটি নির্দিষ্ট ফরমে, সেই মুহূর্তে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে যত শরণার্থী আছেন তারা প্রত্যেকেই দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। সুতরাং একবার নাগরিকত্ব পেলে ও তার শংসাপত্র থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই এন আর সি-তে নাম উঠে যাবে।
আমাদের দেশ ১৩০ কোটির দেশ হতে পারে কিন্তু ধর্মশালা হতে পারে না। প্রত্যেক দেশেই নিজস্ব জনসংখ্যার নথি আছে। ভারতের বিরোধীদের নােংরা রাজনীতি, অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক করে ভোটে জেতার যে অন্যায় প্রবণতা তাই আজ মোদী সরকারের এই সঠিক পদ্ধতির বিরোধিতার একমাত্র কারণ।
ভাস্কর ভট্টাচার্য্য
(লেখক বিশিষ্ট আইনজীবী)
2019-12-26