মিছিল ডেকেছিল বিজেপি। সোমবার সেই মিছিলকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা। অভিনন্দনযাত্রার শেষে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে ভিড়ে ঠাসা জনসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা বললেন, “লোকসভায় ট্রেলর হয়েছে। একুশে সিনেমা দেখবে তৃণমূল।”
এদিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এর আগেও আমি বাংলায় এসেছি। কিন্তু এমন দৃশ্য দেখিনি। এইটুকু রাস্তা আসতে তিনঘণ্টার বেশি সময় লাগল। ছাদ থেকে মানুষ হাত নাড়ছেন। জানলা দিয়ে ফুল ছুড়ছেন। এটা বদলের সংকেত। এই সংকেত পৌঁছে গিয়েছে মমতা দিদির কাছেও।”
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও এনআরসির বিরোধিতায় গত দু’সপ্তাহ ধরে লাগাতার আন্দোলন চলছে বাংলায়। হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর চব্বিশ পরগনার মতো জেলায় হিংসার ঘটনাও ঘটেছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাস, ট্রেন। বাংলার হিংসার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন নাড্ডা। বলেন, “১৫দিন ধরে বাংলায় তাণ্ডবনৃত্য চলল, এত হিংসার ঘটনা ঘটল, আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমি আবেদন করছি! মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করবেন না ব্যবস্থা নেবেন? মুখ্যমন্ত্রী আপনি, পুলিশমন্ত্রী আপনি, আপনি ব্যবস্থা নেবেন না তো কে নেবেন? যারা হিংসার ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের কি ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজো করবেন না কি?” তাঁর কথায়, “বাংলায় হিংসা হচ্ছে আর দোষ চাপাচ্ছে কেন্দ্রের ঘাড়ে। নিজে বাজনা বাজিয়ে বলছে আওয়াজ কোথা থেকে আসছে।”
হিংসার ঘটনা নিয়ে নাড্ডার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেনি তৃণমূল।
শাসকদলের অন্যতম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সংবাদমাধ্যমে বলেন, “বাংলায় কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী কড়া হাতে তা সামলেছেন। আর উত্তরপ্রদেশে যোগীর রাজ্যে কী হচ্ছে? কত জনের মৃত্যু হয়েছে? ওঁর যদি কিছু বলার থাকে হিংসা নিয়ে তাহলে সেটা লখনউয়ে গিয়ে বলুন। কলকাতায় নয়।”
এদিন একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাংলায় চালু করতে না দেওয়া নিয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান নাড্ডা। বিজেপির কার্যকরী সভাপতি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম বাংলার মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পাক। কিন্তু মমতাদিদি করতে দিলেন না।” এরপর তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা আপনার শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকুক। কারণ ২১ সাল আপনাকে দেখতে হবে। কিন্তু আপনার যদি শরীর খারাপ হয় আপনি তো আমেরিকা, ইংল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। গরিব মানুষ কোথায় যাবেন?”
মাঝে মাঝে বাংলা বলেও মিছিলে আসা কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নাড্ডা। বলেন, “যা কিছু হয় মমতাদিদি শুধু বলেন, হবে না হবে না। আরে বাংলায় হবেটা কী বাবা!” তিনি আরও বলেন, “এরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক আর তুষ্টিকরণের রাজনীতি করতে চাইছে। সব মুসলিম দেশে তিন তালাক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখানে মমতাদিদি বলছেন, ডিফেক্টিভ অফ ল হয়েছে!”