দিল্লিতে সোমবার এসে পৌঁছোল বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-র প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার লোদী রোডে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সদর দফতরে কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ওই প্রতিনিধি দলের। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অরক্ষিত অংশে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে ‘জটিলতা’ তৈরি হয়েছে। কোচবিহারে বিএসএফ জওয়ানদের লক্ষ্য করে প্রতিবেশী দেশের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ঢিল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। এই আবহে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের বৈঠক ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর অগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। তার পরে এই প্রথম বার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তারা বৈঠকে বসতে চলেছেন। সোমবার বিমানে দিল্লিতে পৌঁছেছে বিজিবির প্রতিনিধিদল। নেতৃত্বে রয়েছেন ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আশরাফ-উজ়-জ়ামান সিদ্দিকি। মঙ্গলবার বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) দলজিৎ সিংহ চৌধরির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। ২০ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ দেশে থাকার কথা বিজিবি প্রতিনিধি দলের। সূত্রের খবর, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে তাঁদের।
গত সপ্তাহে বিএসএফ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় এবং দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দিল্লির বৈঠকে বিএসএফ জওয়ান এবং সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার নাগরিকদের উপর বাংলাদেশ আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলা, অরক্ষিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, বাংলাদেশে ভারতের ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠী’-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, সীমান্তে পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হবে দুই দেশের। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল গত বছর মার্চে। তখন ঢাকায় হয়েছিল বৈঠকটি।
সম্প্রতি ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতার বসাতে উদ্যোগী হলে বিজিবি তাতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও কাঁটাতারবিহীন রয়ে গিয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার, দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার এবং গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের অধীন বেশ কিছু অঞ্চলে কাঁটাতার নেই। মালদহের কালিয়াচকে এবং তার পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে কাঁটাতার বসানোর সময় বিজিবির বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই বিতর্কের আবহে বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় বর্মাকে ডেকে পাঠায় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। পরের দিনই আবার দিল্লিতে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরুল ইসলামকে ডেকে পাঠায় বিদেশ মন্ত্রক। এই আবহে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছে বিএসএফ এবং বিজিবি।
এই বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সে দেশের ‘প্রথম আলো’ সংবাদমাধ্যমকে জানুয়ারি মাসের শেষে জানিয়েছিল, এ বারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিজিবির ‘টোন’ আলাদা হবে। আগে যে ভাবে কথা হত, এ বার সে ভাবে হবে না।
অন্য দিকে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত জানুয়ারি মাসে জানিয়েছিলেন, সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, অপরাধ বন্ধ করতে সীমান্তে বেড়া দেওয়া দরকার। মানব পাচার, গরু পাচার এবং অন্য যে ধরনের অপরাধগুলি চলে, সেগুলি বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। সীমান্তকে অপরাধমুক্ত করার লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা জানতে নজর থাকবে মঙ্গলবারের বৈঠকে।