মঙ্গলেও শুনানি হবে না ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের মামলার, তালিকা থেকে মুছে দিল সুপ্রিম কোর্ট!

সুপ্রিম কোর্টের ‘শুনানি তালিকা’ থেকে বাদ দেওয়া হল রাজ্যের ১২ লক্ষ ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়) শংসাপত্র বাতিল সংক্রান্ত মামলা। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো শুনানির তালিকায় ছিল মামলাটি। সোমবার অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ওই মামলাটি তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হল। তবে নির্দিষ্ট কোনও কারণ শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, মার্চ মাসে মামলার শুনানি হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত ফলে আপাতত ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ই বহাল রইল। প্রসঙ্গত, গত ২২ মে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল। হাই কোর্টের নির্দেশে প্রায় ১২ লক্ষ সার্টিফিকেট অকেজো হয়ে যায়। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। হাই কোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরও।

গত ডিসেম্বরে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, রঙ্গনাথ কমিশন মুসলিমদের সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল। যার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে কারও সংরক্ষণ পাওয়া উচিত নয়। এর পর জানুয়ারিতেও মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছিল শীর্ষ আদালতে।

মূল মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়া সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে জানিয়েছিলেন, হাই কোর্ট রায়ে বলেছে ওবিসিদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সমীক্ষা করা হয়নি। নির্দিষ্ট কোনও তথ্য ছাড়াই ওবিসি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিশনকে এড়িয়ে ওই কাজ করা হয়েছে। রাজ্যের তরফে হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হলেও সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।

মূল মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও ওবিসি শংসাপত্রের বিষয়ে গত ৬ জানুয়ারি দায়ের হওয়া একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩১ জানুয়ারি ওই মামলায় বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চ জানায়, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না। এই অবস্থায় ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত মামলা রাজ্যের আবেদনের মূল মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে অনেকের মনে।

মামলাটি নিয়ে আইনজীবী মহলে দুই রকম মত উঠে আসছে। আইনজীবীদের এক পক্ষের মতে, ওই সংক্রান্ত অন্য আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফলে মূল মামলাটিও খারিজ হয়ে যেতে পারে। তা না-হলে ওই আবেদনটি মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিত সুপ্রিম কোর্ট। যেমন এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় একাধিক আবেদন খারিজ না করে মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আবার অন্য পক্ষের আইনজীবীদের মতে, যে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে, তাতে বিবাদী পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মূল মামলা যে খারিজ, এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মূল মামলার শুনানি অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে। সব পক্ষের আইনজীবীরা একে একে সওয়াল করছেন। মাঝখানে মামলা খারিজ, এটি ধরে নেওয়া মুশকিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.