দ্য ওয়াল ব্যুরো: নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এ ব্যাপারে দেশজুড়ে গণভোট চাওয়া হোক। বিজেপি বা তৃণমূল নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে হোক সেই ভোট।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাবকেই পাল্টা হাতিয়ার করে হই হই করে নেমে পড়ল বিজেপি। দলের রাজ্য নেতা মুকুল রায় শুক্রবার বলেন, “বাংলাতেও গণভোট হোক। দেখা যাবে কটা লোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পাশে রয়েছেন। আজ ভোট হলে আজই পড়ে যাবে সরকার!”
তৃণমূলনেত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে গতকালই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্ররা বলেছেন, নাগরিকত্ব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক দেশের মধ্যে হতেই পারে। সুপ্রিম কোর্টেও এই আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিণত গণতন্ত্রের সেটাই নিয়ম। একমাত্র পাকিস্তানই বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চাইতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় তারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, বাংলাতেও এ ব্যাপারে শুক্রবার থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার জোরদার করতে চাইছে বিজেপি। মুকুলবাবু বলেন,“সংবিধানের শপথ নিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন সেটাই আশ্চর্যের। ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের কোথাও গণভোটের কথা নেই। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা ভয় পেয়েছে তৃণমূল!”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, তৃণমূলও এ ব্যাপারটা নিয়ে এখন ব্যাকফুটে। সূত্রের খবর, গতকাল ধর্মতলার সভায় ওই দাবি তোলার পর সন্ধ্যা থেকেই তৃণমূলের মুখপাত্রদের কাছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ফোন যায়। সবাইকে বলে দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া বা ব্যাখ্যা যেন না দেন।
কিন্তু তা না হয় হল, দলের মধ্যে এখন কৌতূহলের বিষয় কেন নেত্রী এই দাবি তুললেন! এর নেপথ্যে তাঁর ভাবনা কী! দলের এক নেতার কথায়, এক সময়ে শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরে গণভোট করানোর দাবি তুলতেন। গণভোটের প্রস্তাব শুনেই সংখ্যালঘুদের অনেকের মাথায় প্রথমে কাশ্মীরের কথা মনে পড়ে। হতে পারে সেকারণেই বলেছেন দিদি।
আবার দলের অন্য কয়েক জন নেতার মতে, উনিশের লোকসভা নির্বাচনে দেশের মোট ভোটারের ৩৮ শতাংশের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ভোটার বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সুতরাং বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে সরকার গড়লেও দেশের বেশিরভাগ মানুষই তাদের বিরুদ্ধে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গণভোট হলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির পরাস্ত হওয়ার কথা। সম্ভবত, এই অঙ্কটা মাথায় নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তিনি তা ব্যাখ্যা করেননি।