‘লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্থান’-এর স্বপ্ন চুরমার হতেই এত‌ আগুন, এত অসন্তোষ

পাকিস্তান দাবি আদায়ের পর মুসলিম লিগের জনপ্রিয় স্লোগান ছিল ‘হাসকে হাসকে পাকিস্তান, লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্থান। তা হিন্দুস্থান দখলের জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী বাহাত্তর বছরে ছল-বল-কৌশল নানাভাবে কার্যকরী করা হয়েছে। যার নিট ফল ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর নামে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য পাকিস্তানের দখলে, অরুণাচল-সিকিমে চীনের উৎপাত লেগেই আছে। ভারতের মাটিতে নির্বিচারে পাকিস্তানের পতাকা উড়ছে। কাশ্মীরে সেনা-জওয়ান হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলমান ভোট-লোলুপ রাজনৈতিক দলগুলির সৌজন্যে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের দীর্ঘদিন বঞ্চনা। সবার ওপরে সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি-বাংলাদেশি মুসলমানদের অবাধ অনুপ্রবেশ মোটামুটি ভাবে ‘লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্থান’-এর মুসলিম লিগের অ্যাজেন্ডার সাফল্যের পথে কোনও বাধা ছিল না। মুসলিম লিগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সেরকমভাবে নেই তো হয়েছে কী! তাদের সুদীর্ঘকালের দোসর কমিউনিস্টরা রয়েছে, নেহরপন্থী কংগ্রেস আছে, আর মুসলমান-তুষ্টিকরণের গুণাগুণে দেশের রাজনৈতিক জল আবহওয়া তাতে মুলাময়-মমতার মতো মুসলিম লিগপন্থী রাজনীতিবিদ জন্মাতেও বেশি সময় নেয় না। সর্বোপরি পাকপন্থী চীনের এদেশীয় রাজনৈতিক ভৃত্য হরেক প্রকারের মাওবাদী নকশালদের কথা তো না বললেই নয়, প্রভু পাকিস্তানের আজ্ঞা হলে ভারতে পরমাণু হামলা চালাতেও তারা চেষ্টার কসুর করবে না।
মুসলিম লিগ প্রকাশ্যে না থাকলেও তার পতাকাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার লোকের তাই অভাব ছিল না। সেকুলার ভারত’-এর আড়ালে ইসলামিক উগ্রপন্থাকে আরও শান দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছিল, সন্ত্রাসবাদ জর্জরিত ভারতের ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে। তবে এই অ্যাজেন্ডায় এবার সর্বপ্রথম এত বড়োসড়ো আঘাত হানবার চেষ্টা করলো কোনও কেন্দ্রীয় সরকার। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ দিয়ে শুরু, আপাতত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নেওয়া। মাঝে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে দেশ-অস্মিতার প্রতীক রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায়, কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের প্রয়াস আসলে ‘সেকুলার ভারত’-এর মুখোশের আড়ালে আরেক পাকিস্তান তৈরির ছক বানচালের চেষ্টা। যার সর্বশেষ আঘাত এসেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করার মধ্যে দিয়ে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, এই বিল, যা বর্তমানে আইনে পরিণত হয়েছে তাতে কোথাও মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা কিংবা মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়নের কথা বলা হয়নি। তা সত্ত্বেও রাস্তায় এত ফেজ টুপি লুঙ্গি পরিহিত জেহাদি সন্ত্রাসী আর তাদের দালাল লাল টুপি গুন্ডাবর্দির আবির্ভাব হলো কেন? যাদের হাতে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন বিনা কারণে, সোশ্যাল-মিডিয়া জুড়ে চলছে চূড়ান্ত অসভ্যতা, উস্কানি, জাতীয় সড়ক অবরোধ বাস, রেল পুড়িয়ে, টায়ার জ্বালিয়ে যোগাযোগব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে অসুস্থ মানুষকেও নাজেহাল -উদ্বিগ্ন করা— এগুলো কোন ধরনের প্রতিবাদের নিদর্শন? এই গুন্ডাদের প্রতি দেশদ্রোহী ‘বুদ্ধিজীবীদের সহমর্মিতার শেষ নেই, এ আর এমন কী ব্যাপার’ গোছের অঙ্গভঙ্গিতে তারা মাঝে-মধ্যে বকুনি দিলেও সেটা লোক দেখানো সহজেই বোঝা যায়।
হিটলারি, ফ্যাসিবাদ এমনতরো নানাবিধ শব্দ ২০১৪-য় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উড়ছে। কিন্তু এই দৃষ্টান্ত কি পৃথিবীর আর কোথাও আছে যে দেশের সংসদে হামলাকারীর জন্মদিন সাড়ম্বরে দেশেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়, দেশের বিরোধী দলের পারিবারিক সূত্রে সর্বোচ্চ নেতা শক্রদেশের সঙ্গে গোপন সাক্ষাৎ-বৈঠক করে? দেশের সেনা জওয়ান আক্রান্ত হলেও আক্রমণকারী শত্রু-দেশেরই গুণগানে মুখরিত হয়ে ওঠে দেশেরই কিছু সংবাদমাধ্যম? দেশেরশাসকদলের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট একটি মতাদর্শ থেকে ক্রমাগত ঘৃণা ছেটানো হয়? জাতি-বিদ্বেষ, জাতি-দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয় স্বেচ্ছাকৃতভাবে? ‘টুকরে, টুকরে’, ও ‘আজাদি’র স্লোগান দিয়ে দেশভাগের ষড়যন্ত্র করা হয়? এমন ভূখণ্ড পৃথিবীর মানচিত্রে বিরল। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রায়ে নির্বাচিত সরকারের ন্যূনতম বাস্বাধীনতা হরণ করছে, মানুষের রায়ে প্রত্যাখ্যাত কিছু লোক এমন ইতিহাস বিরল।
তবে ভারতের সৌভাগ্য আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একজন দৃঢ়চেতা মানুষ যিনি বাঙ্গালি হিন্দুর পরিত্রাতাও বটে। তার নেতৃত্বে ‘লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্থান’ আর ‘এ হিন্দুস্থান হামারা’ পাকপন্থীদের বাহাত্তর বছরের স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটেছে, তাই একটু জ্বলবেই, নিভতেও বেশি সময় লাগবে না।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.