মায়ানমারে বিদ্রোহী জোটে ভাঙন ধরাল চিন! যুদ্ধ থামিয়ে জুন্টার সঙ্গে সন্ধি দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীর

মায়ানমারে গৃহযুদ্ধ থামাতে চিনের তৎপরতার ফল মিলল। বেজিংয়ের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) সে দেশের সামরিক জুন্টা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছে। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থক স্বঘোষিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাওয়াদি’ বুধবার এই খবর জানিয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে নতুন জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ গড়ে সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’। ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ)-র পাশাপাশি সেই ত্রিদলীয় জোটের অন্যতম সহযোগী ছিল এমএনডিএএ। চিন সীমান্তঘেঁষা শান প্রদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে ওই গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। এই আবহে এমএনডিএএ-র শীর্ষনেতা পেং ডাক্সুং (পেং ডেরেন নামে পরিচিত) চিনা মধ্যস্থতায় সংঘর্ষবিরতির পথে হাঁটায় বিদ্রোহী জোট ধাক্কা খেল বলেই মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

ঘটনাচক্রে, চলতি মাসের গোড়াতেই জুন্টা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রী কান জাও দাবি করেছিলেন, কিয়াউকফিউতে জুন্টা ফৌজের ঘেরাটোপে নিরুপদ্রবে কাজ চালাচ্ছে চিনা ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলি। তিনি জানিয়েছিলেন, জুন্টা সরকার পরিচালিত সংস্থা ‘কিয়াউকফিউ এসইজেড কনসোর্টিয়াম’ এবং চিনা সংস্থা সিআইটিআইসির যৌথ উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং গভীর সমুদ্রবন্দরে কোনও হামলা চালাননি ওই এলাকায় সক্রিয় এমএনডিএএ যোদ্ধারা।

গত দেড় বছরের গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সে সময়ই তাঁরা জানিয়েছিলেন, এই ঘটনায় বিদ্রোহীদের একাংশের সঙ্গে চিনের যোগাযোগ স্পষ্ট। কিয়াউকফিউ সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমেই ভারত মহাসাগরের সঙ্গে বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরি করতে সক্রিয় চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার। এই বন্দর ১৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডরে’র অন্যতম অংশ।

তবে বিদ্রোহী সশস্ত্র জোটের বৃহত্তম শরিক আরাকান আর্মি এবং আর এক গোষ্ঠী টিএনএলএ এখনও জুন্টার সঙ্গে আপসে আসতে নারাজ। পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হওয়া ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপল্‌স ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)-ও এখনও লড়াই থেকে সরে আসার বার্তা দেয়নি। শান প্রদেশে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ এবং তাদের সশস্ত্র শাখা শান স্টেট আর্মিও জুন্টা অভিযান লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় বলে প্রকাশিত একটি খবরে দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.