হিজাজির এক ভুলে পয়েন্ট হাতছাড়া ইস্টবেঙ্গলের, মুম্বইয়ের কাছে ঘরের মাঠে হারল লাল-হলুদ

হিজাজি মাহেরের একটা ভুল। আর তাতেই ‘পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো ভয়ঙ্কর’ প্রবাদ বিফলে গেল। দু’গোলে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরেও হিজাজির একটি ভুলে অন্তত পক্ষে এক পয়েন্ট হাতছাড়া হল ইস্টবেঙ্গলের। সোমবার যুবভারতীতে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ২-৩ গোলে হেরে গেল তারা। প্রথমার্ধে দু’গোল হজম করা ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোলই শোধ করে দিয়েছিল। তবু ম্যাচ জিততে পারল না দলের ডিফেন্ডারের ভুলে।

হিজাজির ক্ষমাহীন অপরাধ

২০২৪-এর শুরুতে সুপার কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই জয়ে অন্যতম ভূমিকা ছিল হিজাজি মাহেরের। বছর যত গড়িয়েছে তত খারাপ হয়েছে তাঁর খেলা। ২০২৫-এর শুরুটা আরও খারাপ হল ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারের। ঠিক যখন দু’গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে এনে আত্মবিশ্বাসে ফুটছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই মুহূর্তে স্কুলছাত্রের মতো একটি ভুল করে দলকে ডোবালেন তিনি। গোটা ম্যাচে এমনিতেই অসংখ্য ভুল করেছেন। রক্ষণে যে দায়িত্ব তাঁর থেকে আশা করা হয় তার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি। উল্টে আরও এক বার তাঁর দোষে ইস্টবেঙ্গলের হাত শূন্য থাকছে। হিজাজি নিয়ে এ বার সত্যি করেই ভাবনাচিন্তার সময় এসে গিয়েছে।

ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের বোঝাপড়ার অভাব

রক্ষণে আনোয়ার আলি না খেললে কী হয় সেটা আরও এক বার টের পেল ইস্টবেঙ্গল। রক্ষণের মাঝে হিজাজি এবং হেক্টর ইয়ুস্তেকে রেখেছিলেন অস্কার। কিন্তু দু’জনের মধ্যে যে এখনও বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে তা প্রমাণিত। ইস্টবেঙ্গল দু’টি গোলই খেয়েছে এই দু’জনের ভুলে। কে কোথায় দাঁড়াবেন, কে কাকে মার্ক করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে এখনও অনেকটা সময় নিচ্ছেন তাঁরা। মুম্বইয়ের মতো আগ্রাসী দলকে সেই সময় দিলে তা হিতে বিপরীত হয়। সেটাই হয়েছে। মুম্বইয়ের দ্বিতীয় গোলের সময় হেক্টর বুঝতেই পারেননি কারেলিস তাঁর থেকে এগিয়ে রয়েছেন। ফলে শেষ মুহূর্তে দৌড়েও ধরতে পারেননি। প্রথম গোলের ক্ষেত্রেও দায় এড়াতে পারে না তারা। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল প্রভাত লাকরার। প্রথমার্ধে বিক্রম প্রতাপ সিংহ তাঁকে পকেটে পুরে রেখেছিলেন। কত বার যে লাকরাকে গতিতে পরাস্ত করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।

মুম্বইয়ের ‘হাইলাইন’ ফুটবল

প্রথমার্ধেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল মুম্বই। বিপিন সিংহ, বিক্রম প্রতাপ, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতেরা একের পর এক আক্রমণ করে ইস্টবেঙ্গলের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন। বল পেলেই সামনের দিকে পাস খেলছিলেন মুম্বই ফুটবলারেরা। ইস্টবেঙ্গলের অর্ধে হাজির হয়ে যাচ্ছিলেন মুম্বইয়ের পাঁচ জন। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন। মুম্বই কোচ পিটার ক্রাতকি জানতেন ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতা কোথায়। তাই আক্রমণের জন্য ইস্টবেঙ্গলের বাঁ প্রান্তটাই বেছে নিয়েছিল তারা। বিক্রম এবং ব্রেন্ডন ফের্নান্দেসের যৌথ আক্রমণ চাপে ফেলে ইস্টবেঙ্গলকে। নিজেদের অর্ধ থেকে ছাংতেকে নিখুঁত পাস দিয়ে যে ভাবে গোল করালেন ব্রেন্ডন তা অনেক দিন মনে রাখার মতো।

ম্যাচের পর হতাশ ইস্টবেঙ্গলের কোচ।

অস্কারের কৌশল বদল কাজে লাগল না

ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পরেই ক্যামেরায় দেখা গেল তাঁর মুখ। মাথার পিছনে হাত। মেনে নিতে পারছিলেন না এই হার। বিধ্বস্ত চোখমুখে তা ছিল স্পষ্ট। বুদ্ধিতে বিপক্ষ কোচকে টেক্কা দিয়ে আর একটু হলেই ম্যাচ জিতে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে একটা ভুলে পুরো পয়েন্টই নষ্ট হল। প্রথমার্ধেই দলের দুর্বলতা ধরে ফেলেছিলেন অস্কার। বিরতির পরেই তাঁর কৌশল বদলে যায়। লাকরাকে তুলে নিশু কুমার এবং নন্দকুমারকে তুলে নাওরেম মহেশকে নামিয়ে দেন। ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ প্রাণ ফিরে পায়। এক দিকে যেমন বিক্রমের আক্রমণ থেমে যায়, তেমনই ইস্টবেঙ্গলের ডান দিক দিয়ে আক্রমণ বেড়ে যায় অনেকটাই। পাশাপাশি আনোয়ারকে রক্ষণে ফিরিয়ে হেক্টরকে উপরে তুলে এনেছিলেন অস্কার। মুম্বই সেই কৌশল সামলাতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে মুহুর্মুহু আক্রমণ করতে থাকে ইস্টবেঙ্গল। বিপক্ষকে চাপে ফেলে বাধ্য করে আত্মঘাতী গোল করাতে। সাহিল পানওয়ারের পায়ে লেগে যে বলটি গোলে ঢুকল তা ইস্টবেঙ্গলের কোনও ফুটবলারই পেতেন না। তবু লাল-হলুদের চাপের মুখে কার্যত বসে বসে আত্মঘাতী গোল করেন পানওয়ার। দ্বিতীয় গোলও সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণের ফসল। ক্লেটনের কর্নার ক্লিয়ার করেছিল মুম্বই রক্ষণ। তা পেয়ে জিকসন সিংহ ক্রস করেন বক্সে। হেড করে বল দ্বিতীয় পোস্টে রেখেছিলেন হেক্টর। ঠান্ডা মাথায় সেই বল নিখুঁত জায়গায় রেখে গোল করেন ডেভিড। তবে কৌশল বদলেও অস্কারের মুখে হাসি ফিরল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.