চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সীমান্ত বৈঠকে ডোভাল, সংঘাতে এড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা

পশ্চিম, মধ্য এবং পূর্ব— ভারত এবং চিনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-র এই তিনটি সেক্টরকে পৃথক ভাবে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসে এক এক করে জট ছাড়াতে‌ আগ্রহী বেজিং। ভারত চায়, এক সঙ্গে গোটা সীমান্ত নিয়েই আলোচনা এবং সমাধান সূত্র তৈরি করা হোক। বুধবার বেজিংয়ে বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের দু’দিনের সীমান্ত বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ওয়াং ইর বৈঠকে এই বিষয়টি উঠে এসেছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পরে এই প্রথম বার মুখোমুখি বৈঠক করছেন ডোভাল-ওয়াং। ‘টহলদারির সীমানা’ নির্ধারণ এবং ডিসএনগেজমেন্টের পালা শেষ হলেও এখনও পূর্ব লাদাখের এলএসিতে দু’পক্ষেরই বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হিমালয়ের উচ্চ পর্বতক্ষেত্রে ভারতীয় সেনা এবং চিনা পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সংখ্যা কমানোর (ডিএসক্যালেশন) বিষয়ে ২৩তম বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে দুই নেতার আলোচনা হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘২০২০ সালের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা (ডোভাল এবং ওয়াং) এই উদ্দেশ্যে প্রাসঙ্গিক কূটনৈতিক এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার ব্যবহার, সমন্বয় ও পরিচালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ বুধবারের বৈঠকে দুই নেতাই সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিক ভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র সন্ধানের উপর জোর দিয়েছেন। সামগ্রিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

চিনের এমন প্রায় কোনও প্রতিবেশী নেই, যাদের সঙ্গে তাদের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ নেই। ১৯৬২ সালে ভারতীয় ভূখণ্ডে আগ্রাসন, ১৯৬৭-তে সিকিমের নাথু লা এবং চো লায় সংঘর্ষ এমনকি, ২০২০-র জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকাও চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মির আগ্রাসী চেহারা দেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব লাদাখের পাশাপাশি ভুটান সীমান্তবর্তী ডোকলাম এবং অরুণাচলের তাওয়াংয়েও চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ডোভাল-ওয়াং বৈঠকের সিদ্ধান্ত তৃণমূল স্তরে কতটা প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাঁদের মতে, পূর্ব সেক্টর অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশ, মধ্য সেক্টর অর্থাৎ উত্তরাখণ্ড এবং পশ্চিম সেক্টর অর্থাৎ লাদাখ নিয়ে আলাদা আলাদা করে আলোচনা করলে বেজিংয়ের লাভ। ভূখণ্ডের অধিকার নিয়ে দর কষাকষি তীক্ষ্ণ করতে সুবিধা হয়। তাইওয়ান ‘কাঁটা’ মাঝে কালক্ষেপের সুযোগ মেলে। তা ছাড়া, অরুণাচল প্রদেশকে পৃথক ভাবে আলোচনা করে নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসাটাই বেজিংয়ের অন্যতম লক্ষ্য বলেও মনে করছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.