নরেন্দ্র মোদীজী আধুনিক ভারত নির্মাণের এক বিস্ময়কর ও
প্রভাবশালী সরকারের প্রধান। মাত্র ছয় বছর যার কর্মকাল। তিনি এক দুর্বার
সমাজ সংস্কারক। তিনি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তিনি
বৈষম্যহীন সর্বভারতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী এক আপোশহীন রাজনৈতিক নেতা ও
প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই তিনি গ্রহণ করেছেন অনেকগুলো যুগান্তকারী কর্মসূচি
পরিচ্ছন্ন ভারত, ডিজিটাল ভারত, মেক-ইন-ইন্ডিয়া, নারী শিক্ষা, গৃহহীনের
জন্য গৃহ এবং অনুরূপ। আরও অনেক। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১২০০ থেকে
২০০০ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্য ৩৩.৬৯ ভাগ থেকে নেমে দাড়িয়েছে ২১.৯ ভাগে।
এইসকল সম্ভব হয়েছে দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কারণে যার মাস্টার মাইন্ড মোদী
প্রশাসন। যে কাজ করে তার দায়িত্ব বাড়ে এটাই নিয়ম। মোদী সরকারের কাছে
ভারতবাসীর চাওয়া-পাওয়া একটু বেশি। বিশেষ করে বঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী
যার মধ্যে নারীই বেশি। দেশে বর্তমানে প্রায় ২২ ভাগ অর্থাৎ ২৮ কোটি মানুষ
দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। যার মধ্যে ৭০ ভাগই জনজাতি ও তপশিলি
সম্প্রদায়ভুক্ত। বাকি ৩০ ভাগ অন্যান্য সম্প্রদায়ের তবে পশ্চাৎপদ। ২০৩০
সালে টেকসই উন্নয়নের সীমারেখা টানা হয়েছে। ২৮ কোটি অবহেলিত মানুষকে পিছনে
ফেলে টেকসই উন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব? সহজ ও সত্য উত্তর ‘না’। তাহলে করণীয়?
একটি দারিদ্রমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লাগসই কর্মসূচি রূপায়ণ। কী সেই
কর্মসূচি যা মোদীজী নিতে পারেন? মার্ক্সীয় অর্থতত্ত্বের মৌলিক
বৈশিষ্ট ছিল। ভূমি, উৎপাদক ও উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে। মালিকানাহীন এক
সাম্যবাদী দর্শন। ব্যক্তি মালিকানা নয় রাষ্ট্রীয় মালিকানা। উৎপাদক শ্রেণী
ও শ্রমজীবী তারা শ্রমের বিনিময়ে নিশ্চিত জীবন পাবে। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব
পালন করবে। শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় উক্ত
পদ্ধতি বা দর্শনের প্রায়োগিক কোনও পরিবর্তন হয়নি। সকল ক্ষেত্রেইশ্রমিকের
ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার ব্যবস্থার কথা বলা হল।সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে
বিশ্বের আর্থসামাজিক বিবর্তনে মার্ক্সীয় দর্শনের তাত্ত্বিক মর্মার্থ
গুরুত্ববহ হলেও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কার্যত তা অচল হয়ে গেছে। কিন্তু
দারিদ্র্য রয়েছে ধনী গরিব ব্যবধানও রয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শোষণ কমেছে।
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো স্বীকৃতি পেয়েছে, কল্যাণ রাষ্ট্র সেগুলো পূরণের
চেষ্টা করছে। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লক্ষ কোটি টাকার
নানামুখী দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দারিদ্রের ভয়াবহতাও
ক্রমশ কমে আসছে। তারপরও বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস
করে। এই সেদিনও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ধারণকারী
দেশ ছিল ভারত, এখন নাইজেরিয়া।
অপ্রিয় হলেও সত্য সমাজতন্ত্র ও কল্যাণ
রাষ্ট্র এবং সরকারি ব্যবস্থা অনুরূপ দারিদ্র্য বিমোচনকে সুসংহত করতে
পারেনি। বিকল্প হিসেবে শতাব্দীকাল আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর সময়ে
প্রবর্তিত হয়েছিল ক্ষুদ্র অর্থায়ন যা ব্যাপকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে
পরিচিত। ক্ষুদ্র ঋণ একটি সামাজিক অর্থনৈতিক দাতব্য দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত
হলেও কালের চক্রে সেটি আজ শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপরিকল্পিত অর্থলগ্নি, উচ্চ সুদ ও নিষ্ঠুর কিস্তি আদায় পদ্ধতি দরিদ্র
অসহায় মানুষকে আরও অসহায় করে তুলেছে। দরিদ্র মানুষের প্রথম চাহিদা। ও
তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার পেটের ক্ষুধা নিবারণ, তারপর চিকিৎসা, কাজেই যে অর্থই
সে পায় তা বিনিয়োগ অন্তে লাভ খোঁজার সময় কোথায়। অর্থ ঋণনিয়েই তাই
চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফেরে অনাহারী সন্তান-সন্ততির জন্যে। অথবা স্ত্রী বা
সন্তান অসুস্থ এবং হাসপাতালে তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে। কাজেই বিনিয়োগ আর
হয়ে ওঠে না। তখন নতুন কোনো এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে নাম
লেখায় এবং সেই টাকা এনে পূর্বের ঋণ শোধ করতে থাকে। বাস্তবে সে তখন দুটি
ঋণের কিস্তির ফাঁদে পড়ে এবং দ্বৈত ঋণের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতে শুরু করে।
দৈবক্রমে যদি কেউ ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে কিছু আয় করে সেটিও সুদ ও আসলসহ
ঋণদাতা ফিরিয়ে নেয়। তখন সে নতুন করে মূলধন বা পুঁজি খুঁজে ফেরে শুরু হয়।
বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা ও দারিদ্র্যে পুনঃ পদার্পণ। এভাবেই উচচ সুদ ও কিস্তি
পরিশোধসহ গৃহিত ঋণের অর্থ আয়বর্ধক কাজে বিনিয়োগের সুযোগ না থাকা এবং অথবা
সে সুযোগের ধারাবাহিকতার অনিশ্চয়তা দারিদ্র্য থেকে মুক্তির পরিবর্তে
ঋণভারে জর্জরিত হয়ে নতুন নতুনভাবে গরিব মানুষেরা দারিদ্র্যে স্থায়ীভাবে
নিপতিত হয়ে পড়ছে। দরিদ্র আরও বেশি দারিদ্র্যের ঘোর প্যাচে পড়ছে—এটাই
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র।
বর্তমান পরিবর্তিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপটে দরিদ্র মানুষের বেশি প্রয়োজন নিশ্চিত আয়। কারণ বাজারে পণ্যের
অভাব নেই অভাব ক্রয় ক্ষমতার। কাজেই ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে গেলে আয় করা
প্রয়োজন। সে আয় কারো দয়ায় নয়। নিজের শ্রম কাজে লাগিয়ে জীবিকা
নির্বাহের মাধ্যমে নিজস্ব আয় নিশ্চিত করা এবং সেটি নিরন্তর হওয়া আবশ্যকতা
হলেই গরিবের দারিদ্র্য দূর হবে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই অতি সম্প্রতি
তৃতীয় বিশ্বের কোনো কোনো দেশ ক্ষুদ্র ঋণের দুর্বলতা ও অসংগতিকে দূর করে
নতুনভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
সার্কভূক্ত প্রতিবেশি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেল হিসেবে ক্ষুদ্র
অর্থায়নের একটি অগ্রসর ও আধুনিক মডেল বাস্তবায়ন শুরু করেছে গত প্রায় এক
দশক। আধুনিক ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব
একটা চিন্তা উৎসারিত দর্শন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে
বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা অনেকগুলো
দরিদ্রবান্ধব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন যার মধ্যে এটি
অন্যতম। দারিদ্র্যবিমোচনের এ মডেলটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নিজের হাতে প্রণয়ন করেছেন। তাই কর্মসূচিটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে
‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ-১’ হিসেবে ব্রান্ডেড করা। এ মডেলের প্রায়োগিক
রূপ হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার)
প্রকল্প।
আমি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬ বছর একটি বাড়ি একটি
খামার প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। পদোন্নতি পেয়ে
সচিব হিসেবে ওই প্রকল্পেরই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে পল্লী উন্নয়ন ও
সমবায় বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার
ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেল। দরিদ্র
জনগোষ্ঠী যেখানে এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীর সুদ ও কিস্তির জাঁতাকল থেকে
মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে। নিজেরাই সরকারি সহায়তায় অংশগ্রহণমূলক মূলধন
গড়ে তুলছে। গড়ে ওঠা মূলধন প্রতিটি গ্রামে গরিব ব্যক্তি যাদের ৫০ শতকের কম
জমি আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ৬০ জনের একটি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন
করেছে। যাবতীয় অর্থ উক্ত সমিতির ব্যাংকে জমা থাকছে। সদস্যগণ সাপ্তাহিক
উঠান বৈঠকে বসে নিজেরা ঠিক করছে কে কোন বিষয়ে বিনিয়োগ করবে। গ্রামীণ
জনপদে সাধারণত কৃষিভিত্তিক আয়বর্ধক কাজেই তারা বিনিয়োগ করছে কারণ যিনি যে
ধরনের কাজে পারদর্শী বা অভ্যস্ত তিনি সেটাই করবেন। কেউ কেউ অকৃষি বিনিয়োগ
যেমন ছোট মুদি দোকান, মিনি কম্পিউটার ও মোবাইল সেন্টার এবং হকারির মতো
কাজও করছেন। বিনিয়োগ শেষে গৃহীত অর্থ নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জসহ সুবিধামতো
সময়ে নিজেদের সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা করছেন। এভাবে নিজেদের তহবিল বৃদ্ধি
পাচ্ছে। সাপ্তাহিক উঠান বৈঠকে বসে নিজেদের ইচ্ছা ও পছন্দমতো কাজে অর্থ
বিনিয়োগ, বিনিয়োগ শেষে নিজেদের অ্যাকাউন্টে সার্ভিস চার্জসহ জমা এবং
পুনরায় বিনিয়োগ এবং পুনরায় জমা এভাবে স্থায়ী তহবিল ব্যবহার, নিরন্তর
বিনিয়োগ, নিরন্তর আয় ও ধারাবাহিক দারিদ্র্যবিমোচন প্রকৃতই
দারিদ্র্যবিমোচনে এক অনবদ্য ও টেকসই মডেলের জন্ম দিয়েছে। টেকসই মডেলটি
হচ্ছে—the fund is mobilized by the poor, utilized by the poor and also
managed by the poor। ক্ষুদ্র ঋণের বাইরে এই অগ্রসরমান আধুনিক মডেলটির
সুবিধাগুলো হচ্ছেঃ (১) ক্ষুদ্র ঋণে তহবিলে বা পুঁজিতে গরিবের মালিকানা থাকে
না যেটা এ মডেলে থাকে। (২) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এবং তহবিল পাবার ক্ষেত্রে
ক্ষুদ্র ঋণে নিশ্চয়তা নেই যেটা এখানে আছে কারণ অর্থের মালিকানা তাদের। (৩)
ক্ষুদ্র ঋণে উচ্চ সুদ দিতে হয় এবং সুদাসল ঋণদাতা নিয়ে যায় কিন্তু এ
মডেলে সুদ নেই ন্যূনতম একটি। সার্ভিস চার্জ আছে সেটিও আসলের সাথে গরিবের
সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বছর শেষে নিজেরাই লভ্যাংশ বণ্টন করে নিতে
পারে বা তহবিল বৃদ্ধির জন্য রেখে দিতে পারে। (৪) সার্ভিস চার্জের একটি অংশ
সদস্যদের আপকালীন ফান্ড হিসেবে থাকে যা কারো দুর্ঘটনা বা দুরারোগ্য ব্যাধি
বা কন্যাদায় বা শিক্ষার জন্য ব্যয় করার সুযোগ থাকে যা ক্ষুদ্রঋণ
ব্যবস্থায় নেই। (৫) এ মডেলে অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রামে বসেই যাতীয়
আর্থিক লেন-দেন সম্পন্ন হয়। বলে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। চুরি বা দুর্নীতির
সুযোগ থাকে না। (৬) সর্বোপরি এটি স্থায়ী তহবিল যা নিজেরাই ম্যানেজ করে এবং
পুরুষানুক্রমে এ অর্থ রিভলবিং (ঘূর্ণায়মান)। ফান্ড হিসেবে ব্যবহারের
সুযোগ রয়েছে অর্থাৎ দরিদ্র কোনো নাগরিককে পুরুষানুক্রমে অর্থের জন্য কারো
কাছে হাত পাততে হবে না এবং কিস্তির জ্বালায় জ্বলতে হবে না। এটি টেকসই
বিনিয়োগ ও নিরন্তর আয় নিশ্চিত করে যা একজন গরিবের বাজার অধিগম্যতাকে
নির্বিঘ্ন করে তোলে এবং টেকসই দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে একটি
দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গঠনকে ত্বরান্বিত করে।
আমার কর্মকালীন সময়ের
অর্জিত সাফল্য ও অভিজ্ঞতার কিছু তথ্য তুলে ধরে বিষয়টি স্পষ্ট করতে
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। বাংলাদেশের মোট ৬৪টি জেলায় ৪,৫০৩টি ইউনিয়নে
৪০,৫২৭ টি ওয়ার্ড আছে। যার প্রতিটিতে ৬০ জন দরিদ্র পরিবার প্রধানকে নিয়ে
১টি করে মোট ৪০,৫০৩টি সমিতি গঠন করা হয় যেখানে মোট উপকৃত পরিবার ছিল ২৩
লক্ষ অর্থাৎ ১ কোটি ২০ লাখ লোক। তাদের গড়ে ওঠা তহবিলের পরিমাণ ছিল ৩, ৩৯৫
কোটি টাকা যার মধ্যে গরিব সদস্যদের সঞ্চয় ছিল ১০৭০ কোটি টাকা এবং সরকার
অনুদান দেয় ২১৪০ কোটি টাকা। বাকিটা তাদের সার্ভিস চার্জ এবং ব্যাংক সুদ।
এসময়ে তারা ৪৫ লক্ষ পারিবারিক খামার গড়ে তোলে।
অন্তর্বর্তীকালীন এক
সমীক্ষায় দেখা যায় বছরে তাদের মাথাপিছু আয় বাড়ে ১০ হাজার টাকা।
দারিদ্র্য ৩০ ভাগ থেকে ১৭ ভাগে নেমে আসে। মধ্যম আয়ের পরিবারের সংখ্যাও ১০
ভাগ বৃদ্ধি পায়। এ সাফল্যের উপর ভিত্তি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের
বাকি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এ মডেলে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ দেন এবং তদানুযায়ী
দেশের ৩ কোটি দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যবিমোচনে ২০১৬ সালে ৮, ০০০ কোটি টাকার
বর্ধিত প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। দ্বিতীয়ত প্রকল্প শেষ হলেও
দারিদ্রবিমোচনের এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পল্লী
সঞ্চয় ব্যাংক নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংকও সৃষ্টিকরেছেন যার মালিক দরিদ্র
জনগোষ্ঠী।
নিজের ৭ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে আজকের এ লেখা। আমি বিশ্বাস
করি এ মডেলের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি স্বাবলম্বী ও স্থায়ী
দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গঠন করা সম্ভব। শুধু একটি দেশ নয় এ মডেলের মাধ্যমে
বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলাও
সম্ভব। তবে একটি কথা এটি কোনো গাণিতিক সূত্র নয় যে এই মডেল হুবহু
অন্যদেশে প্রযোজ্য হবে। মডেলটি সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা,
জলবায়ু, জীবন প্রণালী, খাদ্যাভ্যাস ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যপকতা ইত্যাদির উপর
ভিত্তি করে সংযোজিত ও বিয়োজিত করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমার মতে
ভারতে এ কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপক যৌক্তিকতা রয়েছে, কারণ এখনো সেখানে ২৮
কোটি দরিদ্র মানুষ উন্নত জীবনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমান সরকারের গৃহীত
বিপ্লবী। উদ্যোগগুলোর সাথে এটি নতুন একটি উদ্যোগ হতে পারে যার গুরুত্ব
অপরিসীম বলে আমি মনে করি।
পৃথ্বীশ মুখোপাধ্যায়
2019-12-13