এই প্রতিবেদন লেখার সময় সংসদের নিম্নকক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল
বিপুল ভোটে (ক্যাব) পাশ হয়ে গিয়েছে। আশা করা যায় সংসদের উচ্চকক্ষেও তা
আটকাবে না। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমাদের চারপাশে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে যে
সমস্ত কথাবার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে তা দেশের সুরক্ষার পক্ষে
অত্যন্ত বিপজ্জনক। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া কেন, পশ্চিমবঙ্গের কিছু নিউজ
মিডিয়াও যে আচরণ করছে, তা গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। ভাবতে
অবাক লাগে মহম্মদ আলি জিন্না যাদের সমর্থনে পাকিস্তান গড়ার ডাক
দিয়েছিলেন, তাদের সাংস্কৃতিক উত্তরসূরীরা আজ তাদের সেই ‘পিতৃদেব’কে আড়াল
করছে অদ্ভুত উপায়ে। জিন্নার নেতৃত্বে সেদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ডাক
শুনিয়ে হিন্দুদের নির্বিচারে ‘কোতল করা হয়েছিল। আজ সংসদে দাঁড়িয়ে
সিপিএমের ‘মুসলমান’ সাংসদ একইভাবে বলছেন ‘আমরা ভারতীয় বাঙ্গালি, ওরা
বাংলাদেশি বাঙ্গালি, কিন্তু মনে রাখবেন আমরা উভয়েই বাঙ্গালি। এই বাঙ্গালি
জিগিরের কথা ১৯৪৭-এ মনে পড়েনি। বাঙ্গালি মুসলমানরা কীভাবে “বাঙ্গালি
হিন্দুদের দেশত্যাগী করেছিল তাও ১৯৭১-এ অবশ্য পিঠ বাঁচাতে মনে পড়েছিল
‘বাঙ্গালিয়ানা’র কথা। তারপর আবার যে কে সেই। বাঙ্গালিওয়ালা বাংলাদেশ তার
মুসলমান সত্তা’ বিসর্জন দেবে কোন দুঃখে। বাঙ্গালি খানসেনা তৈরিতে
বাংলাদেশের কৃতিত্ব কী ভোলা যায় ?১৯৪৭ -এও কিছু হিন্দু-নামধারী
জেহাদে দীক্ষিত হয়ে ইসলামের জ্যাকেট গায়ে চড়িয়েছিল কমিউনিস্ট ছদ্মনামের
আড়ালে। তাদের সাংস্কৃতিক উত্তরপুরুষরা সাধারণ ভাবে ধুয়ে মুছে গেলেও
সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ মিডিয়ায় তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এমনকী
বর্তমান রাজ্য যে দলের সরকার চলছে তাদের পুরনো কর্মীরাও আজ দলের কাছে বোঝা
মাত্র, তার জায়গায় ভোটবাজারে অস্তিত্ব বিলুপ্ত দলত্যাগীরা মতাদর্শ ত্যাগ
না করেইশাসকীয় আঁচলে মুখ লুকিয়ে আসল খেলা খেলে চলছে। আর এদেরকে যারা
এককালে শ্রেণীশত্রু বলে মনে করত, সেই চরমপন্থীরা আজ অবলুপ্তির বিপদের দিনে
এই ছায়াতলে মিশেছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী ছবিটার দিকে তাকালেই
বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
বিপদের বার্তাটা হিন্দুদের এখনই পড়তে হবে। ১৯৪৭-এর
যে বিপদ সংকেত বুঝেও না বোঝার ভান হিন্দুরা করেছিল, প্রজন্মের পর প্রজন্ম
ধরে তার মাশুল দিতে হয়েছে। বাহাত্তুরে স্বাধীনতা কাটিয়ে ভারতবর্ষের মানুষ
পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ যার প্রথম
পদক্ষেপ। বাবরি ধাঁচার স্মৃতিমুছে রামমন্দির নির্মাণের মধ্যে দিয়ে
ভারতীয়ত্বের বিজয় পতাকা উড্ডীন করা যার দ্বিতীয় পদক্ষেপ। তৃতীয় পদক্ষেপ
হবে প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত লাঞ্ছিত মানুষকে এদেশে
জায়গা করে দেওয়া আর ভারতের আর্থিক স্থিতিকে বিনষ্ট করতে অনুপ্রবেশকারীদের
বিতাড়ন করা হবে যার চরম পদক্ষেপ। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান যেমন মানুষের
ন্যূনতম চাহিদা, তেমনি ভারতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, প্রকৃত স্বাধীনতা
উপভোগ করতে, ভারতবাসীকে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা দান করতে এগুলিই হলো ন্যূনতম
চাহিদা।
ভারতের দারিদ্র্য যাদের ব্যবসায়িক মূলধন, চীনের চেয়ারম্যান
যাদের চেয়ারম্যান, যারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানের মৃত্যুতে উৎফুল্ল
হয়, এদের অনেকে হিন্দু-নামধারী হলেও হিন্দুর সর্বনাশে এদের মতো সক্রিয় আর
কেউ নয় এটা সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে। জৈশ সমর্থক এদের মুখপত্রে প্রথম
পাতায় এই প্রসঙ্গ শিরোনাম হয়েছে— ‘ধর্ম নাগরিকত্ব সংবিধান স্বীকৃত?
সাধারণ জনগণের বোঝার সুবিধার জন্য আমরা গত সপ্তাহে ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও
‘উদ্বাস্তু’র সংজ্ঞা দেখিয়েছিলাম। এখানে পুনরাবৃত্তির দরকার নেই। শুধু
বলার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী একমাত্র মুসলমানরাই ‘অনুপ্রবেশকারী’
হওয়ার যোগ্য, অমুসলমানরা উদ্বাস্তু।
একটা বিষয় ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলিয়ে
দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে ‘সব মুসলমানই অনুপ্রবেশকারী’, ‘বাংলাদেশি হিন্দুদেরও
তাড়ানো হবে। একথা ঠিক যে সব অনুপ্রবেশকারীই মুসলমান, কিন্তু সব মুসলমান
অনুপ্রবেশকারী নন। ফলে এই দ্বিতীয়োক্তরা ভারতে নির্ভয়ে থাকুন, আরবের
পা-চাটা দালাল হিসেবে নয়, ভারতীয় হিসেবে। একজনও হিন্দু ভারত থেকে
বিতাড়িত হবেন না। বরং প্রতিবেশী দেশে অত্যাচারিত হলে ভারতের দ্বার আপনার
জন্য অবারিত। আশা করা যায় হিন্দুরা এবং ভারতীয় ইসলাম-উপাসনা পদ্ধতির
অন্তর্গতরা সুখে-শান্তিতে আগামীদিনে থাকবেন এবং শক্ত ভারত সমর্থ ভারতের
পত্তন হবে।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-12-13