বিজেপি-র থিম সং রেকর্ড করার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন নোটিস পাঠিয়েছে তাঁকে। নোটিস পাওয়ার পর বুধবার সন্ধেবেলা বিজেপি রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ এবং সম্ভাব্য প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় তাঁর যুক্তি সাজাতে টেনে আনলেন বিখ্যাত মার্কিন গায়ক বব ডিলানকে। ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’-এর টাইটেল ট্র্যাকের গায়কের সাফ কথা, “প্রতিষ্ঠান-বিরোধী গান তো পৃথিবীর সব জায়গায় হয়। বব ডিলানও গেয়েছিলেন।” সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানান, “বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার কমিশনের শো কজের জবাব দেবেন দলের পক্ষ থেকে।”
গত রবিবার মুম্বইয়ের স্টুডিওতে গান রেকর্ড করেছিলেন বাবুল। বাংলার ভোটে ব্যবহার করার জন্য প্রচার সঙ্গীত বানানোর দায়িত্ব পড়েছিল গায়ক সাংসদের কাঁধেই। কিন্তু সেই গানে তৃণমূল সম্পর্কে যা যা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপত্তি জানায় বাংলার শাসক দল। বাবুলের গানে ব্যবহার করা শব্দ নিয়ে যে আপত্তি উঠতে পারে এ কথা দ্য ওয়াল-এর গত রবিবারের প্রতিবেদনেই লেখা হয়েছিল। গানের শুরুতে, ‘ফুটবে এ বার পদ্মফুল, বাংলা ছাড়ো তৃণমূল’ বললেও যত লাইন এগিয়েছে তত শোনা গিয়েছে তৃণমূল সম্পর্কে বাছা বাছা শব্দ। যেখানে সরাসরি কয়লা চুরি এবং গরু চুরির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল শাসক দলের নাম।
বাবুল শুধু বব ডিলানের প্রসঙ্গই টানেননি। সেই সঙ্গে বলেছেন, “মিডিয়ায় যেটুকু দেখানো হয়েছে, সেটা ওই গানের অংশমাত্র। পুরো গানটা শুনলে বোঝা যাবে এর মধ্যে অশালীন কিছুই নেই।” নরেন্দ্র মোদীর স্নেহধন্য সাংসদ জানিয়েছেন, “এখনও গানটি স্টুডিওতে মিক্সিং হচ্ছে।”
কিন্তু বাবুলের এই বব ডিলানকে টেনে আনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। একাংশের মতে, বাবুল আসলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন বিশ্ববরেণ্য নাগরিক শিল্পীকে। ঠারেঠোরে নিজের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। আবার বাবুল-ঘনিষ্ঠদের মতে, এটা কোনও ভাবেই তুলনা করা হয়নি। প্রসঙ্গত তাঁর কথা এসেছে। এর মধ্যে অন্যায় কী আছে!
এই বাংলায় বব ডিলানের অনুরাগী কম নেই। তাঁর অনুপ্রেরণা যে বাংলা গানে ছাপ ফেলেনি, তেমনও নয়। মার্কিন গায়কের ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কবীর সুমন গেয়েছিলেন, ‘কতটা পথ পেরলে তবে পথিক বলা যায়!’ বাবুলের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে সেই কবীর সুমন বলেন, “কেন যে লোকে কথায় কথায় বব ডিলানকে টেনে আনেন আমি বুঝি না। আর ডিলান প্রতিষ্ঠান-বিরোধী গান গেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি গেয়েছিলেন যুদ্ধ-বিরোধী গান।” তবে গায়ক বাবুলের প্রশংসাও শোনা যায় প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের গলায়। উনি বলেন, “ও ভাল গান গায়।”