শোকে উৎসব বেমানান। তাই পরিবারের কেউ মারা গেলে, এক বছর কোনও আনন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সমাজে। কিন্তু পরিবারের কেউ না হলেও, মৃত মানুষের শোক যদি বড় বেশি গভীর হয়? যদি মন থেকে সাড়া না মেলে উৎসবের ডাকে? তখন কী করবে মানুষ? উৎসবের খাতিরেই আনন্দে মাতবে? নাকি মৃত্যুর সম্মানে শোকার্ত হবেন?
দ্বিতীয়টাই বেছে নিলেন বৃন্দাবনের বিধবা বাসিন্দারা। জানিয়ে দিলেন, এ বছর হোলি খেলবেন না তাঁরা। কারণ গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রিকরের সদ্য প্রয়াণে তাঁরা শোকস্তব্ধ। তাই রঙের উৎসবে সাড়া দিতে মন চাইছে না তাঁদের। দু’দিন আগেই মারা গিয়েছেন এই মন্ত্রী। সোমবার সম্পন্ন হয়েছে শেষকৃত্য।
তার পরেই সুলভ ইন্টারন্যাশনাল নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বৃন্দাবনের বিধবাদের নিয়ে হোলি খেলার আয়োজন করেছিল। এই প্রথম নয়, এই কাজ গত পাঁচ বছর ধরেই করে আসছে তারা। ওই সংস্থার উদ্যোগেই প্রতি বছর রঙের ছোঁয়ায় রেঙে ওঠেন সাদা থান পরা একলা মানুষগুলি। জীবন থেকে রং হারিয়ে যাওয়ার পরেও, উৎসবের এই একটা দিন তাঁরা মেতে ওঠেন রং-আবিরে।
কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম ঘটল। দেশের এক বড় নেতা তথা এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যু তাঁদের ছুঁয়ে গেছে। তাই হোলি খেলবেন না বলে জানিয়েছেন শোকার্ত বৃদ্ধারা। পর্রিকরের স্মৃতিতে বৃন্দাবনের গোপীনাথ মন্দিতে তাঁরা সকলে সমবেত হয়ে শোক পালন করেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে ভজন গান করেন।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিন্দেশ্বর পাঠক বলেন, “যাঁদের জন্য হোলি খেলার আয়োজন, তাঁরাই যদি রঙের উৎসবে সামিল হতে আপত্তি জানান, তাহলে তো সেই উৎসবের কোনও অর্থই থাকে না। এবারে এখানকার বিধবারা নিজেরাই তাঁদের প্রিয় নেতা পর্রিকরের স্মরণে রঙের উৎসবে সামিল হবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই আমাদের তরফেও জোর করে কিছু আয়োজন করার কোনও ব্যাপারই নেই। আমরা ওঁদের ইচ্ছেকে সম্মান করি।”
গত কয়েক বছর ধরেই বৃন্দাবনে বিধবাদের হোলি খেলা দেখতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ভিড় করেন। এ বছরেও তেমনই ভিড় শুরু হয়েছিল বৃন্দাবনে। বৃদ্ধাদের হোলি না-খেলার সিদ্ধান্তকে অনেকে সম্মান জানালেও, অনেকেই আবার আফশোস করছেন, দর্শনীয় এক উৎসব দেখার সুযোগ পেলেন না বলে।