#উদ্বাস্তুদের_জয়

হে জননী,আমরা ভয় পাইনি।

যারা তোমার মাটিতে নিষ্ঠুর থাবা বাড়িয়েছে

আমরা তাদের ঘাড় ধরে

সীমান্ত পার করে দেব।

আমরা জীবনকে নিজের মতো করেসাজাচ্ছিলাম

আমরা সাজাতে থাকব।


তুমুল অশান্তির আবহেই শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এদিন রাজ্যসভায় ক্যাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উল্লেখ্য, গত সোমবার লোকসভায় পাস হয় এই বিল। এদিকে, ক্যাবের তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে এদিন রাজ্যসভয় সোচ্চার হয় বিরোধীরা। অন্যদিকে, ক্যাব বিরোধী আন্দোলনে রীতিমতো জ্বলছে আসাম, ত্রিপুরার মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। পরিসস্থিতি সামলাতে সে রাজ্যে সেনা পাঠানো হয়েছে।
বিল নিয়ে আলোচনার শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুর হার কমেছে। হতে পারে তারা নিহত বা ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এদেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের অবস্থা ভয়াবহ। ক্যাবের ফলে এই ধরনের লক্ষাধিক মানুষের সুবিধা হবে।’ তাঁর আশ্বাস, ‘এই বিলের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের শঙ্কার কোনও কারণ নেই।’

প্রথমেই এই বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। তাতে শাসক পক্ষের জয় হয়েছে। অর্থাৎ সিলেক্ট কমিটিতে না পাঠানোর পক্ষে রায় দিয়েছে রাজ্যসভা। এর পর বিল পাশ নিয়ে ভোটাভুটি। 
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে রাজ্যসভায় জোর বিতর্ক। সোমবার লোকসভায় পাশ হওয়ার পর আজ বুধবারই রাজ্যসভায় পেশ হয় এই বিল। তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় শাসক ও বিরোধী পক্ষের সাংসদের মধ্যে। 
এ দিন রাজ্যসভায় আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ দাবি করেন, ‘‘লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয় প্রতারণা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে সেই সব শরণার্থীদের অধিকার দেওয়া হবে।’’ এ দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ধ্যার দিকে জবাবি বক্তৃতায়  অমিত শাহ বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে এই বিল আনা হয়নি। আগের সরকার বিষয়টির যথাযথ মোকাবিলা করতে পারেনি।
বিরোধী কংগ্রেসের পক্ষে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘এই বিল ‘ভারতের আত্মার উপরে আঘাত।’’ বিল নিয়ে বিজেপি কেন তাড়াহুড়ো করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশ ভাগের জন্য কংগ্রেস দায়ী বলে  অমিত শাহ লোকসভায় যে অভিযোগ করেছিলেন তারও জবাব দিয়েছেন আনন্দ শর্মা। দেশ ভাগ নিয়ে সরাসরি হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগকে দায়ী করেছেন তিনি।

প্রায় সাত ঘণ্টার টান টান বিতর্কের শেষে এই বিল নিয়ে ভোটাভুটি হয় ভোটের ফল ১২৫-১০৫। অর্থাৎ বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ১২৫টি, বিপক্ষে ১০৫। এ বার রাষ্ট্রপতি সই করলেই আইনে পরিণত হবে এই বিল। এই বিল পাশের জন্য সব সাংসদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে ছ’টি অ-মুসলিম (হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিস্টান) শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত সরকার।
বিল পাশের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইট, ‘‘দেশ ও দেশবাসীর ভাবাবেগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন আজ। রাজ্যসভায় সিএবি-২০১৯ পাশ হওয়ায় আমি খুশি। বিলের পক্ষে যাঁরা ভোট দিয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যাঁরা বহু বছর ধরে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার, তাঁদের স্বস্তি দেবে এই বিল।’’

অন্য দিকে, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আজকের দিনটিকে ‘কালো দিন’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর টুইট, ‘‘ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে আজ এক কালো দিন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ভারতের বহুত্ববাদকে হারিয়ে সংকীর্ণ মানসিকতা ও অসহিষ্ণুতার জয় হল।
রাজ্যসভায় বিলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দৌত্যে এনডিএ জোটের পাশে দাঁড়াল একাধিক দল। অন্য দিকে, নিজেদের একজোট করতে ব্যর্থ হল বিরোধীরা।

সোমবার পাশ হয়েছিল লোকসভায়। এর পর বুধবার বিল পেশ হওয়ার পর রাজ্যসভায় দীর্ঘ বিতর্ক হয় শাসক ও বিরোধী দলের সাংসদদের মধ্যে। কংগ্রেস, তৃণমূল, বামদলগুলি এই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বল, পি চিদম্বরমদের বক্তব্য, সংবিধান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এই বিল ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে। ভারতীয় সংবিধানের উপর, ভারতের আত্মার উপর আঘাত।
তার আগে বিল পেশের পরে পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, দেশভাগের জন্য দায়ী কংগ্রেস। সেই প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহের উদ্দেশে কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আপনি কংগ্রেসের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর দেশভাগের দোষ চাপাচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। এই ভাবে ইতিহাস বদলানো যায় না। আপনি রাজনীতি করব না বলেও রাজনীতি করছেন।’’ কপিল সিব্বলও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনি কোন ইতিহাস পড়েছেন জানি না। আপনি ইতিহাসই পাল্টে ফেলতে চাইছেন. কিন্তু এই ভাবে ইতিহাস বদলানো যায় না।’’


বিল পেশের শুরুর দিকেই বিতর্কে অমিত শাহ অবশ্য মুসলিমদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘এ দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই।’’ বিলের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.