গ্রামের উঠোনে চার বছরে খেলা শুরু, ১৩ বছরে কোটিপতি কৃষকের ছেলে বৈভব সূর্যবংশী, দল পেল আইপিএলে

বয়স ১৩ বছর ২৪৩ দিন। আইপিএলের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম কোটিপতি ক্রিকেটার হল বৈভব সূর্যবংশী। নিলামে তাকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনল রাজস্থান রয়্যালস। লড়াই হল দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে। আগ্রাসী ব্যাটার হিসাবেই পরিচিত বিহারের কিশোর।

নিলামের আগেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিহারের কিশোর ব্যাটারের নাম। নিলামের তালিকায় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে ছিল বৈভবই। তার ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সঙ্গে টাকার যুদ্ধে নামেন রাজস্থান রয়্যালস কর্তৃপক্ষ। রাজস্থানকে নিলামে নেতৃত্ব দেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজে। দিল্লির হাতে সে সময় ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১৮ জন ক্রিকেটারকে নেওয়া ছিল তাদের। অন্য দিকে, রাজস্থানের হাতে ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাদের কেনা হয়েছিল ১৬ জন ক্রিকেটার। তুলনায় বেশি টাকা হাতে থাকায় সম্ভবত ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে এগিয়ে যান রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাম দিতে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় দিল্লি। তাতেই নতুন ইতিহাস তৈরি হল আইপিএলে।

বিহারের তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা বৈভব চার বছর বয়সে বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর কাছে ক্রিকেট শেখা শুরু করে। সঞ্জীব পেশায় কৃষক হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা রয়েছে তাঁর। ছেলের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ দেখে তাকে ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাড়ির পিছনে ছোট একটু জায়গা পরিষ্কার করে ছেলে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করেছিলেন। বাবার কাছে প্রাথমিক ক্রিকেট পাঠের পর ন’বছর বয়সে সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় বৈভব। সেখানে আড়াই বছর শেখার পর বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির জন্য ট্রায়ালে যায় বৈভব। ভাল পারফর্ম করলেও কম বয়সের কথা ভেবে তাকে স্ট্যান্ড বাই রেখেছিলেন বিহারের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের নির্বাচকেরা। সেখানেই চোখে পড়ে যান প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার। তার পর থেকে তিনিই বৈভবের কোচ।

১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভব। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। আজমেরের ক্রিকেটারের রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল ১৯৪২-৪৩ মরসুমে বরোদার বিরুদ্ধে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর ৭৩ দিন। এর আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল সে। ভাল খেলেছিল বিনু মাঁকড় ট্রফিতেও। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে সে।

গত ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে আলোচনায় উঠে আসে ১৩ বছরের বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.