পর পর বিছানায় শিশুরা ঘুমোচ্ছে, দেখে নিশ্চিন্তে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। আনতে গিয়েছিলেন জরুরি একটি ইঞ্জেকশন। কিন্তু ফিরে এসে দেখলেন দৃশ্য বদলে গিয়েছে। অক্সিজেনের সিলিন্ডারে ধরে গিয়েছে আগুন! দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে, গ্রাস করতে চাইছে শুয়ে থাকা সদ্যোজাতদের। মুহূর্তে নিজের কর্তব্য স্থির করে ফেলেছিলেন ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স মেঘা জেমস। নিজের জীবনের পরোয়া না করেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শিশুদের উদ্ধারের জন্য। সাহসী পদক্ষেপে একে একে আগুনের গ্রাস এড়িয়ে তিনি শুক্রবার রাতে উদ্ধার করেছিলেন অন্তত ১৫ জন শিশুকে।
ঝাঁসির হাসপাতালের আগুনে সে রাতে ঝলসে মৃত্যু হয় ১১ শিশুর। কিন্তু মেঘা না থাকলে এই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত, এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন হাসপাতালের সকলেই। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মেঘা জানিয়েছেন, উদ্ধারের সময়ে তাঁর নিজের পায়ের চপ্পলে আগুন ধরে গিয়েছিল। পা পুড়ে গিয়েছিল বেশ খানিকটা। মেঘার পোশাকেও আগুন ধরে যায়। দ্রুত পোশাক বদল করে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যান তিনি।
মেঘার কথায়, ‘‘আমি একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ আনতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখি, অক্সিজেন সিলিন্ডারে আগুন ধরে গিয়েছে। এক জন ওয়ার্ড বয়কে ডেকেছিলাম আমি। ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তত ক্ষণে আগুন অনেকটা ছড়িয়ে গিয়েছে। আমি একে একে শিশুদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। আমার চপ্পলে আগুন ধরে গিয়েছিল। পা পুড়ে যাচ্ছিল। সালোয়ারেও আগুন লেগে যায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই। আমি সালোয়ার খুলে ফেলি। ওই সময়ে আমার মাথা কাজ করছিল না।’’
আগুনের ঘন কালো ধোঁয়ায় হাসপাতাল ছেয়ে গিয়েছিল। তার উপর বিদ্যুৎ পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন মেঘা। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আলো থাকলে আরও কয়েক জনকে বাঁচাতে পারতাম।’’
মেঘার সাহসের প্রশংসা করেছেন ঝাঁসির হাসপাতালের সহকারী নার্সিং সুপার নলিনী সুদ। তিনি বলেন, ‘‘মেঘা নিজের জীবনের কথা চিন্তা করেনি। ঝুঁকি নিয়ে একের পর এক শিশুকে বাঁচিয়েছে ও। আগে ও শিশুদের ঘর থেকে বার করেছে, তার পর নিজের জন্য সাহায্য চেয়েছে।’’
ঝাঁসির হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) আগুন লেগেছিল। শিশুদের সেখান থেকে বার করতে ওয়ার্ডের কাচের জানলা ভেঙে ফেলেছিলেন হাসপাতালের কর্মীরা। যাদের বাঁচানো গিয়েছিল, অন্য ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে রবিবার, যার ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মেঘা নিজেও। কী ভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।