যে রাত দখলের ডাক তাঁকে ‘বিখ্যাত’ করেছিল, সেই ‘রাত দখল’ই তাঁকে বিতর্কিত করে তুলল। তিনি রিমঝিম সিংহ।
লিঙ্কড্ইন নামের কাজ খোঁজার সমাজমাধ্যমে রিমঝিমের যে প্রোফাইল রয়েছে, তাতে পরিচয়ে লেখা রয়েছে ‘‘রিক্লেম দ্য নাইট’ কি-ক্যাম্পেনার’’ (রাত দখলের প্রধান প্রচারক)। তা নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সমাজমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, রিমঝিম কি রাত দখলের আন্দোলনকে বিপণন করছেন? না-হলে কাজ খোঁজার জায়গায় আন্দোলনের প্রসঙ্গ আসবে কেন? কেনই বা ‘সাফল্যের মাপকাঠি’ হিসাবে তিনি ওই পরিচয় লিখবেন? তা-ও আবার শুরুতেই। সেই সঙ্গে রয়েছে রিমঝিমের অনুবাদক এবং অনুলিপিকারী পরিচয়ও।
আরজি কর-কাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় সারা বাংলার মহিলারা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। ১৪ এবং ১৫ অগস্টের সন্ধিক্ষণে রাত দখলে নেমেছিলেন কলকাতা থেকে জেলা, শহর থেকে মফস্সলের মেয়েরা। সেই কর্মসূচির প্রথম আহ্বানটি ছিল রিমঝিমেরই। যে রাতের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ এবং ব্যাপ্তি কপালে ভাঁজ ফেলেছিল শাসকশিবিরের। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসাবে রিমঝিমের নিজস্ব পরিচয় তৈরি হয়েছিল। যদিও পরবর্তী কালে রাত দখলের সেই ‘মিলিত’ শক্তি খণ্ডিত হয়েছে। গড়ে উঠেছে পৃথক পৃথক মঞ্চ।
তিনি কি রাত দখলকে বিপণন করছেন? রিমঝিমের জবাব, ‘‘একেবারেই নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘লিঙ্কড্ইন যখন তৈরি হয়েছিল, তখন এটা কাজ খোঁজার মঞ্চ থাকলেও এখন আর তা নেই। এখন ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রামের মতোই এটি একটি সমাজমাধ্যম। যেখানে বহু মানুষ তাঁদের রাজনৈতিক মতামত রাখেন।’’ রিমঝিমের এ-ও যুক্তি, ‘‘যে বয়সের ছেলেমেয়েরা রাত দখলে নেমেছিলেন, আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা রয়েছেন লিঙ্কড্ইনে। সেই কারণেই আমি ওখানে আমার প্রোফাইলে ওই রিক্লেম দ্য নাইটের কথা লিখেছি।’’ রিমঝিম এ-ও জানিয়েছেন, রাত দখলের আন্দোলন পর্বে এই সমাজমাধ্যমেও মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। যার অর্থ, সাধারণ মানুষের কাছেও লিঙ্কড্ইন শুধু কাজ খোঁজার মঞ্চ নয়। লিঙ্ক়ড্ইন এমন একটি সমাজমাধ্যম, যেখানে কর্মপ্রার্থীরা তাঁদের যোগ্যতার নিরিখে কাজের আবেদন করতে পারেন। আবার কোনও সংস্থা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী কাউকে কাজের প্রস্তাবও এখানে দিতে পারেন।
অনেকেই রিমঝিমের যুক্তি মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, চার মাস আগে রিমঝিমের একটি পোস্টে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা রয়েছে ‘ওপেন টু ওয়ার্ক’। সেখানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য খোলা আবেদন করেছিলেন। ঘটনাচক্রে তার মাসখানেক পরেই রাত দখলের আন্দোলন। গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন ক্রমশ স্তিমিত হচ্ছিল। পুজোর ঠিক পরে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ’ অনশন উঠে যেতেই তা আরও নিস্তরঙ্গ হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই নতুন বিতর্ক তৈরি করে দিল আন্দোলনকারী রিমঝিমের লিঙ্কড্ইন প্রোফাইল।