বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্য তথা রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করায় উদ্যোগী হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার। রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য নতুন নিয়ম বিধানসভায় পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterji)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বা কোনও ধরনের মিটিং ডাকার ক্ষেত্রে এতদিন নিয়ম ছিল, উপাচার্যের তরফে আচার্য তথা রাজ্যপালকে বৈঠকের দিন জানানো হবে। এবং তারপর রাজ্যপাল বৈঠক ডাকবেন। কিন্তু নতুন নিয়মে, রাজ্যপালের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। এখন থেকে বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে উপাচার্য শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে সেই বৈঠক ডাকতে পারবে। রাজভবনকে শুধুমাত্র দিনক্ষণ উপাচার্যের তরফে জানিয়ে রাখলেই হবে।
এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করত, সেই তালিকা রাজ্যপালের কাছে পাঠাতে হত। তারপর প্রয়োজনে রাজ্যপাল সেই তালিকায় বদল আনতে পারতেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা পাঠাবে শিক্ষা দপ্তরকে। শিক্ষা দপ্তর সেই তালিকা পাঠাবে রাজভবনকে। সেই তালিকায় কোন অদল বদলে ক্ষমতা রাজ্যপালের থাকবে না।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সংঘাত এখন আর কোনও নতুন ঘটনা নয়। তাই মনে করা হচ্ছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করে সংঘাত আরও তীব্র হল। আগে নিয়ম ছিল, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি মারফত তিনজনের নামের তালিকা শিক্ষা দপ্তর রাজ্যপালকে পাঠাবে। সেই তিনজনের মধ্যে থেকে কোন একজনকে রাজ্যপাল উপাচার্য হিসেবে বেছে নেবেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বলে দেওয়া হচ্ছে, এখন থেকে তিনজনের মধ্যে যে কোনও একজন নয়। প্রথমে যার নাম থাকবে সেই নামেই অনুমোদন দিতে হবে আচার্য তথা রাজ্যপালকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজ্যপালের একজন প্রতিনিধি থাকত। সেই নাম রাজ্যপাল নিজেই নির্ধারণ করতেন। তবে নতুন নিয়মে, এখন থেকে শিক্ষা দপ্তর রাজ্যপালকে তিনটে নাম পাঠাবে। সেই নামের মধ্যে থেকেই যেকোনও একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজভবনের প্রতিনিধির জন্য মনোনীত করতে হবে রাজ্যপালকে। যদি কোনও উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে রাজ্যপালের কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে এখন থেকে রাজ্যপাল সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে শিক্ষা দপ্তরকে জানাতে হবে রাজভবনের এবং তারপর শিক্ষা দপ্তর তদন্ত করে দেখবে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
সমাবর্তনের ক্ষেত্রেও উপাচার্য যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে নিতে হবে। সরাসরি সমাবর্তন এর ক্ষেত্রে আচার্য রাজ্যপাল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
আচার্য বার রাজ্যপালের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যদি কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জানানো যাবেনা। এতদিন আচার্য বা রাজ্যপাল সেটা সরাসরি উপাচার্যকে জানাতে পারতেন। এখন থেকে যেকোন প্রস্তাব শিক্ষা দপ্তর মারফত রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্যের কোনও সচিবালয় থাকবে না।এতদিন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও বিধির ক্ষেত্রেই প্রয়োজনমতো বদলের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের থাকবে।
রাজ্যপালের সঙ্গে এখন থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না। কার্যত নিয়মবিধিতে সেই বদলি নিয়ে আসল রাজ্য সরকার। সবক্ষেত্রেই শিক্ষা দপ্তর মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজভবনের যোগাযোগ হবে নয়া নিয়মে। যে নিয়ম তৈরি হল, কার্যত রাজ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন সরাসরি সম্পর্ক থাকলোনা তেমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম সংক্রান্ত যে আইন, সেই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে যে বিধি তৈরি হয়েছিল সেই বিধিতে বদল এবং নতুন নিয়ম নিয়ে আসল রাজ্য সরকার।
এটা কোনও বিল নয় ২০১৭ সালে এই সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পেশ হয় সেটা আইন হয়ে গেছে। আইন তৈরি হওয়ার পর যে বিধি তৈরি করতে হয় সেই বিধিরে বদল নিয়ে আসা হল। সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। সরকার নিজের মতবদল করতে পারে।
সূর্য সরকার