লেখাপড়া করে যে, বিচার চেয়ে লড়েও সে! পড়তে বসার আগে দীর্ঘ বার্তা আন্দোলনের নেতা আসফাকের

এ বার তাঁদের পড়তে বসতে হবে। কারণ, বিচার চেয়ে যাঁরা লড়েন, লেখাপড়াও করতে হয় তাঁদের। এমনটাই শুক্রবার জানালেন আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া।

আড়াই মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত। আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে লড়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। বিচারের দাবির পাশাপাশি হাসপাতালে হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, ‘থ্রেট কালচার’ বা ‘হুমকি সংস্কৃতি’-র বিরুদ্ধেও গলা ফাটিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু পরীক্ষা আসছে। তাই সেই প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তারেরা এ বার পড়তে বসছেন। আসফাকুল্লা জানালেন, এই কারণে আগামী কয়েক দিন তাঁদের প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যাবে না।

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়ার বার্তা।

পড়তে বসার আগে দীর্ঘ বার্তা দিয়েছেন আসফাকুল্লা। জানিয়েছেন, লম্বা লড়াইয়ে অনেক কিছু পেয়েছেন তাঁরা, হারিয়েছেনও অনেক কিছু। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় তিন মাস আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। অনেক কিছু ছিনিয়ে এনেছি। অনেক কিছু পাইনি। অনেক কিছু হারিয়েছি। নারীশিক্ষা, শিক্ষার সুরক্ষা নিয়ে নানা কথা বলেছি, অনেক ব্যঙ্গও শুনেছি। বিচারের শব্দে কারও চেয়ার নড়ে গিয়েছে কি না, আমরা জানি না। তবে কোনও চেয়ারের ভয়ে বিচারের দাবি থেকে আমাদের কেউ নড়াতে পারেনি। পারবেও না।’’

সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আসফাকুল্লা আরও বলেন, ‘‘সামনে আমাদের এমএস/ এমডি পরীক্ষা। তাই আমাদের কয়েক জনকে পড়াশোনা করতে বসতে হল। হয়তো আমাদের কয়েক জনকে কয়েক দিন দেখতে পাবেন না। কিন্তু আন্দোলন চলছে এবং চলবে, এটা ভুলে যাবেন না। এখনই যাঁদের পরীক্ষা নেই, তাঁরা এবং আপনারা এই যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাবেন, এই আশা রেখে পড়তে বসলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শিক্ষিতদের হাতে ক্ষমতা থাক বা না থাক, শিক্ষার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হোক। সঠিক শিক্ষা না থাকলে সঠিক প্রতিবাদ করা যায় না।’’

উল্লেখ্য, আরজি করের ধর্ষণ-খুন কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ৯ অগস্ট থেকে পথে ছিলেন আসফাকুল্লা-সহ জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই। নির্যাতিতার জন্য বিচার, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা-সহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় টানা ১৭ দিন ধরে তাঁরা অনশন করেছেন। অনশন চলেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও। ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই অনশন উঠে গিয়েছে। যদিও আন্দোলন থেমে থাকবে না বলেই জানান ডাক্তারেরা। মমতার সঙ্গে ওই বৈঠকেই জুনিয়র ডাক্তারদের পরীক্ষার প্রসঙ্গ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কিছু দিনের মধ্যে তাঁদের পরীক্ষা। তাই এ বার তাঁদের আন্দোলন ছেড়ে পড়াশোনা করা উচিত। বিভিন্ন হাসপাতালের পরীক্ষায় কারচুপি, ‘থ্রেট কালচার’, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগও উঠেছে একের পর এক। আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ রয়েছে, সঠিক ভাবে পরীক্ষা হলে তাঁরা কেউ ১০ পাওয়ারও যোগ্য নন। এর পর পরীক্ষায় কড়াকড়ি করার কথাও বলেছিলেন মমতা। পরীক্ষায় কাউকে ‘ঘাড় ঘোরাতে’ দেওয়া হবে না, বলা হয়েছিল।

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা যাঁদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ এনেছেন, মূলত তাঁদের নিয়ে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে পৃথক সংগঠন জুনিয়র ডক্টরস্‌ অ্যাসোসিয়েশন। তারা আবার জুনিয়র ডক্টরস্‌ ফ্রন্টের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং কারচুপির পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। প্রকাশ করা হয়েছে স্ক্রিনশট। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে পরীক্ষা নিয়ে চাপানউতর চলছে। তার মাঝেই আন্দোলন থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়ার বার্তা দিয়ে পড়তে বসলেন আসফাকুল্লা এবং তাঁর মতো অন্য জুনিয়র ডাক্তারেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.