জেডিএফ তহবিলের ৪ কোটি দিক নির্যাতিতার বাবা-মাকে, দাবি জেডিএ-র, জেডিএফ ঘোষণা করল নতুন কর্মসূচি

আরজি কর-কাণ্ডে আন্দোলনের ‘চালিকাশক্তি’ জুনিয়র ডক্টর্‌স’ ফ্রন্ট (জেডিএফ)-এর তহবিলে যে অর্থ রয়েছে, তা নির্যাতিতার বাবা-মায়ের হেফাজতে রাখার দাবি তুলল সদ্য তৈরি হ‌ওয়া জুনিয়র ডক্টর্‌স’ অ্যাসোসিশন (জে়ডিএ)। পাল্টা জেডিএফের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, সাধারণ মানুষ তাদের যে অর্থ দিয়েছেন, তা যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে খরচ হয়, সেই বিষয়টি তারাই দেখবে। এ ব্যাপারে বাইরের কারও কোনও কথায় কর্ণপাত করা হবে না। পাশাপাশি, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে জেডিএফের তরফে আগামী ৯ নভেম্বরের একগুচ্ছ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার। ওই দিন আরজি কর-কাণ্ডের ৯০ দিন।

জেডিএ-র অন্যতম আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তী শুক্রবার একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘জে়ডিএফ অভয়া তহবিলের নামে যে চার কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা তুলেছে, তা অভয়ার বাবা-মায়ের হেফাজতে রাখা হোক। আইনি কাজে যে খরচ লাগবে কিংবা সমাজসেবামূলক কোনও কাজ তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই হোক।’’ শ্রীশের বক্তব্যের পাল্টা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী রুমেলিকা কুমার বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের ভরসা করে অর্থ দিয়েছেন। তাতে স্বচ্ছতা রাখা আমাদের কর্তব্য। এ বিষয়ে কী করণীয় তা ‌আমরাই ঠিক করব। এখানে অন্য কারও কথা শোনার প্রয়োজন নেই।’’ সূত্রের খবর, জেডিএফ এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টকে নিয়োগ করেছে। তিনিই তহবিলের স্বচ্ছতা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি দেখছেন।

জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম নেতা আসফাকুল্লা নাইয়া শুক্রবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, তাঁদের বেশ কয়েক জনের সামনে পরীক্ষা রয়েছে। তাই অনেককেই কিছু দিন আন্দোলনে দেখতে পাওয়া যাবে না। আসফাকের সকালের ওই পোস্টের পরে শুক্রবার সন্ধ্যাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে ৯ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন দেবাশিসেরা। ঘটনাচক্রে, সেখানে আসফাককে দেখা যায়নি। জে়ডিএফের তরফে ৯ তারিখ ‘দ্রোহের গ্যালারি’, রক্তদান শিবির, নাগরিক মিছিলের মতো কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে। জেডিএফ আবেদন জানিয়েছে, ওই দিন রাজ্যের সর্বত্র সাধারণ মানুষ মিছিল, জমায়েত, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করুন।

জেডিএফের তরফে শুক্রবার সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতারের তিন দিন পরে কেন তাঁর রক্তমাখা জামাকাপড় ব্যারাক থেকে উদ্ধার করা হল, কেন নির্যাতিতার বাবা-মাকে তিন ঘণ্টা দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি, নির্যাতিতার যোনিপথে যে গাঢ় তরল পাওয়া গিয়েছিল, তার ডিএনএ টেস্ট হয়েছে কি না, ৯ অগস্ট ময়নাতদন্তের সময়ে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও কেন তা ১৪ অগস্ট ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল ইত্যাদি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে যেটি সিবিআইয়ের প্রাথমিক চার্জশিট বলে ঘুরছে, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে আমাদের বলতে হচ্ছে, ওই চার্জশিট খুবই দুর্বল।’’ দেবাশিস আরও বলেন, ‘‘আমরা আশা করব, সিবিআই কোনও প্রভাবশালীর দ্বারা প্রভাবিত হবে না।’’

গত ২৬ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন জেডিএ। সে দিনই তারা জেডিএফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে আন্দোলনের নামে কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ করেছিল। সেই অভিযোগকে হাতিয়ার করে শাসকদল তৃণমূলের নেতারাও জেডিএফের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। শুক্রবার যখন সেই টাকা নির্যাতিতার বাবা-মায়ের হেফাজতে রাখার দাবি জানাল জেডিএ, তখন সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে ৯ নভেম্বর একগুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণা করে দিল জেডিএফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.