রাজ্যে দু’হাজারের বেশি স্কুলে ২০২৫ থেকেই পঞ্চম শ্রেণি আসছে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায়

পশ্চিমবঙ্গের দু’হাজারের বেশি স্কুলে ২০২৫ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণিকে নিয়ে আসা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায়। বুধবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই ২,৩৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি যোগ করা হবে। সেই স্কুলগুলির তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে। স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা এবং কলকাতার সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

রাজ্যের প্রকাশিত স্কুলগুলির তালিকায় রয়েছে কলকাতার ৫২টি স্কুল। এ ছাড়াও বাঁকুড়ার ৪৫টি, বীরভূমের ১১৯টি, কোচবিহারের ২৫টি, দক্ষিণ দিনাজপুরের ১৭টি, হুগলির ১০৮টি, হাওড়ার ১৪৫টি, জলপাইগুড়ির ২৭টি, মালদহের ২২৯টি, মুর্শিদাবাদের ৪৬৭টি, নদিয়ার ১৪০টি, উত্তর ২৪ পরগনার ১৯৮টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬৫টি, পূর্ব বর্ধমানের ৮৩টি, পূর্ব মেদিনীপুরের ৬১টি, পুরুলিয়ার ২৪টি, উত্তর দিনাজপুরের ৭৯টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩২৭টি এবং পশ্চিম বর্ধমানের ৮৭টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি যোগ করা হবে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে।

প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল পশ্চিমবঙ্গ। পূর্বতন শিক্ষামন্ত্রীর আমলেই পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিক স্কুলের অধীনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এত দিনে তা কার্যকর করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা সংগঠন। তবে প্রশ্নও তোলা হয়েছে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে কি না, শিক্ষকের সংখ্যা যথেষ্ট কি না, সে সব প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু এর জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক নেই। কোথাও আবার গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি কর্মচারীও নেই। ফলে শিক্ষার অধিকারের কথা বলা হলেও প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে শিশুরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা না করা হলে অভিভাবকদের একটা বড় অংশ সন্তানদের সরকারি স্কুলে রাখতে চাইবেন না। ফলে সরকারি শিক্ষা ধ্বংসের দিকে আরও এগিয়ে যাবে।’’

সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষিকাদের কলেজিয়ামের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে ঘরের ঘাটতি প্রথমে মেটানো উচিত। তা ছাড়া, দ্রত সমস্ত হাই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি সরিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আগের শিক্ষামন্ত্রীর আমলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সব রাজ্যে পঞ্চম শ্রেণি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, বিদ্যালয়গুলিতে যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে তো? যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক আছেন তো?’’ অনেকের দাবি, প্রাথমিকে দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় অনেক স্কুলেই ছাত্রছাত্রীদের অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা কম। এ বছর টেটও হচ্ছে না। তার মাঝে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত হলে সেই ভারসাম্য আরও কমবে। সেই সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে সম্ভব, প্রশ্ন উঠেছে ওয়াকিবহাল মহলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.