কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিল পেশ নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি করায় ভোটাভুটিও হয় লোকসভায়। তাতে অনায়াসেই জিতে যায় সরকার।

তবে তার আগে প্রবল আক্রমণাত্মক হয়ে নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন—

১) নাগরিকত্ব সংশোধন বিল কোনওভাবেই সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করছে না। তাঁর কথায়, চোদ্দ নম্বর ধারায় প্রতিটি নাগরিকের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে সংবিধানে এও বলা হয়েছে যে, যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা যাবে।

২) যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে সমাজের একাংশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ভারতে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিশেষ মর্যাদা ও অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল কংগ্রেস সরকার। সেই নিয়ম আজও চলছে। তখন কি সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করা হয়নি?

৩) পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে সেখানকার যে সংখ্যালঘুরা এদেশে শরণার্থী হয়ে এসেছেন বা আসবেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বিলে বলা হয়েছে।

৪) এই প্রস্তাবের মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। অনায্য কিছুও নেই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইসলামিক রাষ্ট্র। সেখানে ধর্মাচরণের জন্য মুসলিমদের উপর অত্যাচার করা হয় না। কিন্তু হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান, পারসি ও বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার হয়।

৫) ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেস। নইলে আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।

৬) ৭১ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার নিয়ম করেছিল, বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের তখন কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি?

৭) অমিত শাহ বোঝাতে চান, ভারতের সম্পদের উপর অধিকার রয়েছে ভারতীয়দেরই। তাঁর কথায়, প্রতিটি দেশেরই নাগরিকত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। ভারতীয়রা বিদেশে গিয়ে এমনি এমনি সেখানকার নাগরিকত্ব পান না। কেউ সেখানে লগ্নি করেন, কেউ গবেষণার কাজে ইত্যাদিতে সাহায্য করেন।

৮) নাগরিকত্ব বিল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধী নয়। এই আইন সংশোধনের পরেও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আসা কোনও মুসলিম ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। তা সরকার বিবেচনা করে দেখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.