লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর এই প্রথম রাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার দুপুরে সল্টলেকে বিজেপির ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ কর্মসূচির সূচনা করেন তিনি। সেখানে শাহের নাতিদীর্ঘ বক্তৃতায় বার বার ঘুরেফিরে এল ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে কী কী বদল ঘটবে, তারও ফিরিস্তি দিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচন নিয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করলেন না তিনি।
আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। ওই ছয় কেন্দ্রের বিধায়কেরা লোকসভা ভোটে জয়ী হওয়ায় সেগুলিতে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। গত বিধানসভা ভোটে ওই ছয় কেন্দ্রের মধ্যে ৫টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। আর আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। মনে করা হচ্ছিল, উপনির্বাচনের আগে দলের সাধারণ কর্মীদের উজ্জীবিত করতে কোনও বার্তা দেবেন অমিত। কিন্তু দেখা গেল, অন্তত প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না তিনি। তবে রাজ্য নেতৃত্বকে তিনি এই বিষয়ে আলাদা করে কোনও গোপন বার্তা বা পরামর্শ দিয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।
শাহি বক্তৃতায় আগাগোড়া ছিল ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের কথা। তিনি শুরুতেই বলেন, “রাজ্যে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করতে পারলে বিজেপি ২০২৬ সালে ক্ষমতায় আসবে।” তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গও। শাহ বলেন, “সন্দেশখালি থেকে আরজি করের মতো ঘটনা বিজেপি ২০২৬-এ ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যাবে।” বাংলায় ক্ষমতা দখলই যে দলের লক্ষ্য, তা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা হরিয়ানায় জিতেছি। ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রেও জিতব। তার পরেই আমাদের লক্ষ্য বাংলা।”
শাহের বক্তৃতায় উঠে আসে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের ‘অপশাসন’ এবং ‘দুর্নীতির’ প্রসঙ্গও। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “মমতাদি বলছেন কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। কেন্দ্র টাকা দিলেও তৃণমূলের সিন্ডিকেট খেয়ে নিচ্ছে।” কেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া উচিত, সে কথা ব্যাখ্যা করে শাহ বলেন, “সোনার বাংলা গড়তে বিজেপিতে যোগ দিন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে গরু পাচার, কয়লা পাচার বন্ধ হবে। চাকরি পেতে আর কাউকে টাকা দিতে হবে না।”
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ শানানোর পাশাপাশি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কেও তোপ দাগেন শাহ। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন, ইউপিএ আমলের তুলনায় এনডিএ আমলে রাজ্যকে অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। লোকসভা ভোটের ফলের প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে শাহের কটাক্ষ, “বিজেপি কয়েকটি আসন কম পাওয়ায় মমতাদি খুব খুশি হয়েছিলেন। মনে রাখবেন মমতাদি, বিজেপি ২ থেকে ৩৭০ আসনে পৌঁছনো দল।”
শাহের আগে বক্তব্য রাখেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, মিঠুন চক্রবর্তী, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রত্যেকেই রাজ্যে ১ কোটি সদস্যের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উপরে জোর দেন। মিঠুন জানান, এই রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফল তাঁকে দুঃখ দিয়েছে। তবে ১ কোটি সদস্য সংগ্রহ হলে রাজ্যে বিজেপি ‘মসনদ দখল’ করবে বলে জানান মিঠুন।