ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ। তবে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরার মাঝে ‘ল্যান্ডফল’-এর পর সেই ‘ডেনা’ স্থলভাগের দিকে এগোতেই বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে কলকাতায়। শুক্রবার সকালে ধামরা থেকে ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরে বালেশ্বরে যত বৃষ্টি হয়েছে, ওই ধামরা থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (সাড়ে তিন গুণ) দূরে কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে অনেক বেশি।
‘ডেনা’ যখন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে স্থলভাগে প্রবেশ করছিল, তখন কলকাতায় ঝড়বৃষ্টি হয়নি। যতই ডেনার ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া এগিয়েছে, ততই বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে কলকাতা এবং আশপাশের জেলায়। ‘ডেনা’র প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ওড়িশার ভদ্রক, কেন্দ্রপড়ায়। মৌসম ভবন (আইএমডি)-র পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেই ভদ্রকের চাঁদবালি স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে ৮৫.১ মিলিমিটার। ওই একই সময়ে ওড়িশার বালেশ্বরে বৃষ্টি হয়েছে ৪৮ মিলিমিটার। ডেনার ‘ল্যান্ডফল’ যেখানে হয়েছে, সেই ধামারা থেকে উপকূলবর্তী বালেশ্বরের দূরত্ব প্রায় ১০৭ কিলোমিটারের আশপাশে। ধামারা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৩৫৩ কিলোমিটার। সেই কলকাতার আলিপুরে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬৭.৭ মিলিমিটার। ওই একই সময়ে দমদমে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩ মিলিমিটার, সল্টলেকে বৃষ্টি হয়েছে ৪৯ মিলিমিটার। ওই একই সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ‘ডেনা’র প্রভাবে ওড়িশার ভদ্রকের চাঁদবালি স্টেশনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৮.৬ মিলিমিটার। কেন্দ্রাপড়ার রাজকণিকা স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৬ মিলিমিটার। বালেশ্বরে বৃষ্টি হয়েছে ৬৮.৮ মিলিমিটার। শুক্রবার সকালে সেই বালেশ্বরকে টপকে গেল কলকাতা। ‘ডেনা’ যতই স্থলভাগের উপর দিয়ে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে, ততই বৃষ্টি কমেছে ওড়িশা উপকূলে। আর সেই ‘ডেনার প্রভাবে বৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে কলকাতায়। মৌসম ভবন ১টা ৫০ মিনিটে যে বুলেটিন দিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ডেনা ভদ্রক থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে।
‘ডেনা’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এই সময়ের মধ্যে কলাইকুন্ডায় ৯১ মিলিমিটার, সাগরদ্বীপে ৯০ মিলিমিটার এবং হলদিয়ায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার। ওই একই সময়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে উলুবেড়িয়া (৬৫ মিলিমিটার), মেদিনীপুর (৫২ মিলিমিটার) এবং ঝাড়গ্রাম (৬৭ মিলিমিটার)-এ। গত ২৪ ঘণ্টায় দিঘায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই একই সময়ে
শুক্রবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে জল জমেছে কলকাতার ঠনঠনিয়া, বিটি রোড, যোধপুর পার্ক এলাকায়। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বেশ কিছু জায়গাতেও জল জমেছে। মহাত্মা গান্ধী রোড, পার্ক স্ট্রিট, থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রিট, উত্তর বন্দর থানার কাছে স্ট্র্যান্ড রোডের একাংশ জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। জল জমেছে সায়েন্স সিটির কাছেও। বেলঘরিয়া রোড, বর্ধমান রোড এবং আলিপুরের কিছু কিছু রাস্তায় জল জমেছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, জল জমার পর দ্রুত কাজে নেমেছেন পুরকর্মীরা। শহরের বেশির ভাগ অংশেই জল নেমে গিয়েছে। শুধু নিচু অংশে জল জমে রয়েছে। জল জমার কারণে কিছু রাস্তায় ধীর গতিতে চলেছে গাড়ি। এমনিতে শুক্রবার রাস্তায় মানুষজন ছিলেন কম। অনেক দফতরই বাড়ি থেকে কাজের অনুমতি দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের স্কুলগুলি হয় বন্ধ ছিল, নয়তো অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। রাস্তায় লোকজন কম থাকায় যানজট তেমন হয়নি।