উন্নাওয়ের পর ত্রিপুরা, কিশোরীকে গণধর্ষণ করে গায়ে আগুন প্রেমিকের

উন্নাওয়ের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারা দেশ। এর মাঝেই এবার প্রায় একই ঘটনা সামনে এল ত্রিপুরায় । সেখানে এক কিশোরীকে বন্দি করে রেখে, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে টানা দু’মাস ধরে ধর্ষণ করে শেষে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তারই প্রেমিকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই যুবককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে যুবকের মাকেও। ঘটনাটি ত্রিপুরার শান্তিরবাজার এলাকার। কিন্তু গোটা ঘটনায় আবারও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছে মেয়েটির পরিবার। থানায় অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ মেয়েটিকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেনি বলে দাবি তাদের।

এই ঘটনার পর শনিবার ভোররাতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নির্যাতিতা ওই কিশোরীকে জিবি পন্থ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ত্রিপুরার জনগণ। অভিযুক্ত যুবকের নাম অজয় রুদ্রপাল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে শনিবারই তাকে হাসপাতালে টেনে বের করে আনেন। সেখানেই তার উপর চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। গোটা ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তার মাকেও গণপ্রহার করা হয়। শান্তিরবাজার থানার পুলিশ ওই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ত্রিপুরার এসপি জয় সিংহ মীনা। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, ফেসবুকেই ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীর সঙ্গে আলাপ হয় অভিযুক্ত অজয়ের। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই মতো দীপাবলির পর মেয়েটির বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান অজয়। তার কয়েক দিন পরই জোর করে ওই কিশোরীকে তিনি আটক করে রাখেন এবং ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবি করেন বলে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মেয়েটির মা জানিয়েছেন, মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে প্রথমেই পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা। অজয় মুক্তিপণ দাবি করলে তা-ও জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনওরকম সহযোগিতা মেলেনি। তাই মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে শুরু করেন তাঁরা।

নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘কোনওরকমে ১৭ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম। শুক্রবার রাতে চান্দ্রপুর আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনালে অজয়ের মায়ের সঙ্গে দেখা করে টাকা তুলে দিই। কিন্তু মাত্র ১৭ হাজার টাকা পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উনি। বলেন, মেয়েকে ফেরত পেতে চাইলে যত শীঘ্র সম্ভব পুরো টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। এরই মধ্যে মেয়েকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে, তা জানতে পেরেছিলাম আমরা। শনিবার সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তার আগেই ভোরবেলা মেয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বলে খবর পাই।’’

সময় মতো খবর দিলেও নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে পুলিশের তরফ থেকে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর দাবি, হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন অবস্থা সঙ্কটজনক, কিন্তু তখনও কথা বলছে মেয়ে। তিনি জানান, অজয় এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে গত দু’মাস ধরে তাঁর মেয়েকে টানা গণধর্ষণ করেছেন। মুক্তিপণের টাকা না পেয়েও অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় তার উপর। মাত্র ১৭ হাজার টাকা দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় অজয়ের। তিনি-ই মেয়ের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

মেয়েকে উদ্ধৃত করে ওই মহিলা জানান, বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত অজয়। তাঁদের মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেই বাড়ি এসেছিলেন। প্রথমে সবই ঠিক চলছিল। কিন্তু আটক করার দু’দিন পর থেকেই ছেলে এবং‌ মা মিলে মেয়েটির উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করেন। এর পর বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে এনে তাঁদের দিয়ে মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করান অজয়। সেইসময় তাঁদের মেয়েকে ঠিক মতো খেতে দেওয়াও হয়নি বলে অভিযোগ জানান নির্যাতিতার মা।

হায়দরাবাদ, উন্নাও-সহ দেশ জুড়ে যখন একের পর এক ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে, ঠিক সেই সময়ই আরও একটি এই ঘৃণ্য ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ত্রিপুরাবাসী। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.