ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র কারণে ওড়িশায় কারও প্রাণহানি হয়নি। শুক্রবার সকালে দুর্যোগ-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এমনটাই জানালেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে ঢোকার প্রক্রিয়া (ল্যান্ডফল) শেষ হয়। ‘ল্যান্ডফলের’ এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কারণে কারও মৃত্যু হয়নি। সরকারের লক্ষ্য ছিল, আমরা কাউকে মারা যেত দেব না। আমরা কথা রাখতে পেরেছি।”
মাঝি জানান, প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলি থেকে অন্তত ৬ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ছ’লক্ষ মানুষের মধ্যে ছিলেন ৬০০০ সন্তানসম্ভবাও। তাঁদের তড়িঘড়ি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া ১৬০০ জন প্রসূতি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি রুখতে আগেই ৮৩২২টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রেখেছিল ওড়িশা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার মধ্যে দুর্গতদের অন্তত ৬০০৮টি সেন্টারে রাখা হয়।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারার মধ্যবর্তী হাবালিখাটি নেচার ক্যাম্পের কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল ‘ডেনা’। হাওয়া অফিস জানায়, রাত দেড়টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রীয় অংশ স্থলভাগ অতিক্রম করেছে। সকাল সাড়ে ৭টার পরে ‘লেজের’ অংশও স্থলভাগে ঢুকে পড়ে পুরোপুরি। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান হাবালিখাটি থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পশ্চিমে। পারাদীপের রাডার থেকে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতির দিকে অনবরত নজর রাখা হচ্ছে। এর পর আরও শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপে পরিণত হবে। তার পর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বাঁক নিতে পারে।
‘ডেনা’র প্রভাবে ধামারা বন্দর সংলগ্ন গ্রামগুলিতে তো বটেই, ভদ্রক এবং অন্য উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও গাছ উপড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার বেলা থেকে গাছ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে এখনও উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। রয়েছে ঝড়ের প্রভাবও। জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস শুরু হলে উপকূলবর্তী নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে আসতে কিছুটা সময় লাগবে বলে ওড়িশা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।