এনকাউন্টার।
আপতত এই শব্দটাই এখন জনমানসে সবচেয়ে আলোচ্য হয়ে উঠেছে। সাইবারাবাদ পুলিশ গত শুক্রবার ভোর রাতে হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত চারজনকে খতম করেছে এনকাউন্টারে। তারপর থেকেই উত্তাল দেশ। আড়াআড়ি বিভক্ত জনতা। একটা অংশ প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে। রাতারাতি নায়ক বনে গিয়েছেন পুলিশ অফিসার ভিএস সাজ্জানার। আরেকটা অংশের বক্তব্য, মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। এনকাউন্টার কখনও বিচার পদ্ধতি হতে পারে না। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এসএস বোবদে বলেছেন, বিচার কোনও চটজলদি প্রক্রিয়া নয়। বিচার করা মানে প্রতিশোধ নেওয়াও নয়।
কিন্তু দেশে এনকাউন্টার এই প্রথম নয়। স্বাধীনতার পর থেকে সারা কয়েকশো এনকাউন্টার হয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেরা সাত এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট কারা-
প্রদীপ শর্মা: অনেকে বলেন এই পুলিশকর্তার এনকাউন্টার সংখ্যা ৩০০-র বেশি। যদিও সরকারি ভাবে জানা যায় কর্মজীবনে মোট ১০৪টি এনকাউন্টার করেছিলেন তিনি। মুম্বইয়ের কুখ্যাত ডন লক্ষ্মণ ভাইয়া এনকাউন্টার কেসের পর শিরোনামে এসেছিল তাঁর নাম। একাধিক রাজ্যে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তবে ২০০৯-১০ সালে রামনারায়ণ গুপ্তা এনকাউন্টার কেসে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল আদালত। ২০১৩ সালে তা উঠেও যায়। একটি সাক্ষাৎকারে প্রদীপ শর্মা বলেছিলেন, “এনকাউন্টার আমার কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। রবিবার ছুটির দিন আমার বিরক্ত লাগত।”
দয়া নায়েক: এই পুলিশ কর্তার এনকাউন্টার সংখ্যা ৮৩টি। দেশে যতজন পুলিশ অফিসার এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছিলেন, দয়া নায়েক তাঁদের মধ্যে সবার উপরে। মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছিল বলিউডের ছবি ‘অব তক ছাপ্পান্ন।’ সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘ডিপার্টমেন্ট’ ছবিতেও উঠে এসেছিল তাঁর কাহিনী। যদিও নিজেকে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট হিসেবে বলতে পছন্দ করেন না এই পুলিশকর্তা। ১৯৯৭ সালে ছোটা রাজনের দুই শাগরেদকে একসঙ্গে খতম করেছিলেন এই পুলিশ কর্তা।
প্রফুল্ল বনশালে: মুম্বই পুলিশের ডেথ স্কোয়াডের এই সদস্যকে অন্ধকার জগতের তাবড় মাথারা ‘পুলিশের ডন’ বলে আখ্যা দিত। কর্মজীবনে মুম্বইয়ে প্রায় ৩০০ দাগী অপরাধীকে দুর্গম জায়গা থেকে গ্রেফতার করেছিলেন বনশালে। এনকাউন্টার সংখ্যা ৮১। ছোটা শাকিলের অন্যতম সহযোগী আরিফ কালিয়াকে এনকাউন্টারে খতম করেছিলেন এই আধিকারিকই।
বিজয় সালাস্কার: মুম্বই পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের এই অকুতোভয় অফিসার নিজের কর্মজীবনে ৯০টির কাছাকাছি এনকাউন্টারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২৫ বছরের কর্মজীবন ছিল রোমহর্ষক থ্রিলারের মতো। কথিত আছে, অন্য অফিসাররা যেখানে হাল ছেড়ে দিতেন, সেখান থেকে অপারেশন শুরু করতেন সালাস্কার। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন এই পুলিশ আধিকারিক।
শচীন হিন্দুরাও ওয়াজে: মুম্বই পুলিশের এই অফিসারের মেন্টর ছিলেন প্রদীপ শর্মা। কর্মজীবনের শুরুতে তাঁর নেতৃত্বেই একাধিক এনকাউন্টারে যুক্ত ছিলেন শচীন। তারপর নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এনকাউন্টার এক্সপার্ট। মুম্বইয়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুমরা এলাকায় ঢুকে অপরাধীদের ধরতে পা কেঁপে যেত বহু বাঘা বাঘা অফিসারের। ঠিক এখানেই সবার থেকে নিজেকে আলাদা করেছিলেন শচীন। কর্মজীবনে তাঁর এনকাউন্টার সংখ্যা ৬৩। তাঁর গুলিতেই খতম হয়েছিল মুম্বইয়ের ত্রাস মুন্না নেপালি।
রবীন্দ্র আংরে: মহারাষ্ট্র পুলিশের আর এক দুঁদে অফিসার রবীন্দ্র আংরে। থানে এলাকায় উগ্রপন্থী সংগঠনগুলিকে ঠান্ডা করতে তিনিই ছিলেন অন্যতম মাথা। কর্মজীবনে ৫০টি এনকাউন্টার করেছিলেন তিনি। তবে ৫০তম এনকাউন্টারের পর মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে রাজকীয় পার্টি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন এই অফিসার।
রাজীব সিং: দিল্লি পুলিশের এই আধিকারিক যম হয়ে উঠেছিলেন জমি মাফিয়াদের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হয়েছিলেন এই আইপিএস। দায়িত্ব নিয়েছিলেন দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার।
কর্মজীবনে ৫০টি এনকাউন্টার করেছিলেন। কিন্তু সম্পত্তির বিবাদে ২০ বছরের পুরনো বন্ধুর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এই পুলিশকর্তা। তার গুলিতেই মৃত্যু হয় রাজীবের।