ছ’মাসে বৃদ্ধি প্রায় ১৭ হাজার! সোনার পর এ বার দামি রুপো, পেরিয়ে গেল এক লাখের গণ্ডি

সোনার দাম প্রতি দিনই নজির গড়ছে। পিছিয়ে নেই রুপোও। সোমবার সকলকে তাক লাগিয়ে এক কিলোগ্রাম খুচরো রুপোর দাম জিএসটি যোগ করে নজিরবিহীন ভাবে ছাড়াল এক লক্ষ টাকার মাইলফলক। দৌড় বহাল রেখে আরও দামি হয়েছে সোনাও।

এ দিন কলকাতায় প্রতি কেজি রুপো (খুচরো) এই প্রথম ছুঁয়েছে ৯৭,৮৫০ টাকা। জিএসটি নিয়ে যা পৌঁছেছে ১,০০,৭৮৫.৫০ টাকায়। কেজিতে রুপোর বাট হয়েছে ৯৭,৭৫০ টাকা। কর-সহ ১,০০,৬৮২.৫ টাকা। এ দিন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স রুপো ছিল ৩৪.১২ ডলার। গত প্রায় এক সপ্তাহে বেড়েছে ২.২৮ ডলার। যার প্রভাব পড়েছে দেশে।

নজির গড়ে সোনাও আরও উপরে উঠেছে। এ দিন প্রতি ১০ গ্রাম (২৪ ক্যারাট) খুচরো পাকা সোনা পৌঁছেছে ৭৮,৭০০ টাকায়। জিএসটি যোগ করে দাম দিতে হবে ৮১,০০০ টাকার বেশি (৮১,০৬১ টাকা)। হলমার্ক সোনার গয়না (২২ ক্যারাট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪,৮০০ টাকা। জিএসটি নিয়ে ৭৭,০৪৪ টাকা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সোনা-রুপো ক্রমশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।

সোনার দাম যে সব কারণে চড়ছে, রুপো দামি হওয়ার কারণও সেগুলি— দাবি বাজার বিশেষজ্ঞদের। সোনা-রুপোর পাইকারি ব্যবসায়ী জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা বলছেন, “পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ এবং আমেরিকায় সুদের হার কমার জের সোনার মতোই রুপোর দামে পড়ছে। ফলে সুরক্ষার খোঁজে সেগুলিতে লগ্নি বাড়ছে। দ্রুত চাহিদা বৃদ্ধি ঠেলে তুলছে দামকে। বরাবর এই দু’টি ধাতুর দাম বাড়তে থাকে তাল মিলিয়ে। সেটাই রীতি।’’ একাংশের বক্তব্য, সোনা অত্যধিক চড়লে একাংশ তাতে হাত দিতে না পেরে রুপোর দিকে ঝোঁকেন। সেই কারণেও তার দাম বাড়তে থাকে। তবে নিশ্চুপে রুপোর লক্ষাধিক হওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ, সোনার গয়না কিনতে না পেরে যাঁরা রুপো বেছে নিচ্ছিলেন, তাঁরা ভাবেননি এতেও খরচ এখানে পৌঁছে যাবে।

এ দিন হর্ষদ বলেন, ‘‘রুপোর বড় অংশ শিল্পে ব্যবহার হয়। যেমন, সৌর বিদ্যুৎ, চিপ বা সেমিকনডাক্টর, বৈদ্যুতিন পণ্য, ব্যাটারি ইত্যাদি। এই সব কিছু তৈরি করতে রুপো লাগে। তাই চিপ, সৌর বিদ্যুৎ ইত্যাদি শিল্পের প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেগুলিতেও বাড়ছে রুপোর চাহিদা। দাম বৃদ্ধির জন্য ওটাও দায়ী।’’ তিনি জানান, দেশে মোট যে রুপো ব্যবহৃত হয়, তার ৩৫-৪০ শতাংশ যায় শিল্পে।

সোনার গয়না ও রূপোর সামগ্রীর ব্যবসায়ী গিনি এম্পোরিয়ামের এমডি সমর দে বলেন, “রুপোয় লগ্নি বৃদ্ধি তার দাম বাড়ানোর পিছনে সব থেকে বড় কারণ তো বটেই। দেশ-বিদেশ সর্বত্রই সেটা হয়েছে। বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবও পড়েছে। তবে সামনে ধনতেরস। দেশে মানুষের মধ্যে এই সময় রুপোর কয়েন, রুপোর বাসন ইত্যাদি কেনার রীতি রয়েছে। সেটাও চাহিদা বাড়িয়ে দামকে ঠেলে তুলেছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি দীনেশ কাবরার অভিমত, ‘‘সোনার দাম বৃদ্ধির নিরিখে একটি নির্দিষ্ট হারে রুপোর দাম বেড়ে থাকে। সাধারণত যে হারে রুপোর দাম বাড়ে, কিছু দিন ধরে তাতে কিছুটা ঘাটতি দেখা গিয়েছে। আমার ধারণা, এখন রুপো সেই ঘাটতি পূরণ করছে। তাই তার দামও দ্রুত চড়ছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.