অন্ধ্র-তেলঙ্গানায় গত কয়েক বছরে অন্তত সাতবার ঘটেছে এনকাউন্টার কিলিং

শুক্রবার ভোরে সারা দেশের ঘুম ভাঙল এনকাউন্টারের খবর শুনে। তেলেঙ্গনা পুলিশ তরুণী পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্তদের ‘এনকাউন্টারে’ মেরেছে। চার অভিযুক্ত, আরিফ, শিবা, নবীন ও চেন্নাকেশাভুলু নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য, পুরো ঘটনার পুনর্নির্মাণ। অভিযোগ, তখন তারা পালাতে চেষ্টা করে। দুই অফিসারের হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালায়।

বিবেক কোদামাগুন্ডালু

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর আগে দু’টি এনকাউণ্টারের সঙ্গে এবারের অদ্ভূত মিল দেখা যাচ্ছে। প্রথমটি ঘটেছিল অন্ধ্রে, ২০০৮ সালে। তখনও তেলঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়নি।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ২০১৫ সালের। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অন্ধ্র পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গুলি করে মারে। অভিযোগ, তারা ওয়ারঙ্গলে দুই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়েছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা গিয়েছিল জনরোষ। তারপরেই অভিযুক্তদের গুলি করে মারা হয়। পুলিশ বলেছিল, অভিযুক্তরা তাদের দিকে বোমা ছুঁড়েছে। তখন ওয়ারঙ্গলের পুলিশ সুপার ছিলেন ভি সি সাজ্জানার। যিনি এখন সাইবারাবাদ পুলিশের প্রধান। তাঁর অধীনস্থ পুলিশকর্মীরাই শুক্রবার এনকাউন্টারে চারজনকে মেরেছে।

২০১৫ সালে তেলঙ্গানা পুলিশ ভিকারুদ্দিন আহমেদ ও অপর চারজনকে গুলি করে মারে। তারা ছিল তেহরিক গালবা ই ইসলাম নামে এক সংগঠনের সদস্য। অভিযোগ, বন্দি অবস্থায় কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পথে তারা পুলিশের থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে চেষ্টা করেছিল।
২০১৫ সালে পর পর দু’টি ঘটনায় কয়েকজন মাওবাদীকে গুলি করে মারা হয়। জুন মাসে ১৯ বছর বয়সী বিবেক কোদামাগুন্ডালু এবং অপর দুই মহিলা পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

বিবেকের বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে ও অন্যদের আগেই পুলিশ ধরেছিল। পুলিশ হেপাজতে অত্যাচার করে তাদের মারা হয়েছে। মৃতদেহগুলির হাত ভাঙা ছিল।

এই ঘটনার কয়েকমাস পরে, মাওবাদী অভিযোগে শ্রুতি, ওরফে মাহিতা (২৩) ও বিদ্যাসাগর রেড্ডি ওরফে সাগর (৩২) এনকাউন্টারে খুন হন। লেখক তথা মানবাধিকারকর্মী ভারভারা রাও দাবি করেন, পুলিশ তাঁদের আগেই ধরেছিল। বন্দি অবস্থায় অত্যাচার করার পরে ভুয়ো এনকাউন্টারে মেরেছে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তেলঙ্গানার ভদ্রাদ্রি কোথাগুদেম জেলায় তফসিলী উপজাতিভুক্ত আটজনকে গুলি করে মারে পুলিশ। অভিযোগ, তারা নকশালপন্থী ছিল। পুলিশের দাবি, গুলির লড়াইয়ে আটজন মারা পড়েছে। মৃতদের পরিবার বলেছিল, ঠান্ডা মাথায় তাদের খুন করা হয়েছে। মৃতদেহগুলির কোথাও গুলির দাগ ছিল না। মুখে ও শরীরের নানা জায়গায় অত্যাচারের চিহ্ন ছিল।

গত জুলাই মাসে তেলঙ্গানা পুলিশ লিঙ্গান্না নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে মারে। তিনি তফসিলী উপজাতিভুক্ত মানুষ ছিলেন।

অভিযোগ, সশস্ত্র গোষ্ঠী সিপিআই এম-এল নিউ ডেমোক্রেসির এরিয়া কম্যান্ডার ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে হরি জানিয়েছেন, নকশালদের সঙ্গে লিঙ্গান্নার সম্পর্ক ছিল না। তিনি আদিবাসীদের জমির লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পুলিশ বলেছিল, লিঙ্গান্না ও অপর সাত নকশালপন্থী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। পালটা গুলিতে তাঁরা মারা পড়েছেন।

২০১৬ সালে পুলিশের গুলিতে মারা যান মহম্মদ নইমুদ্দিন। তিনি একসময় মাওবাদীদের দলে ছিলেন। পরে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশের হয়ে চরবৃত্তি করতেন। অভিযোগ, তিনি হয়ে উঠেছিলেন গ্যাংস্টার। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি, ডাকাতি সহ ১০০ টি অভিযোগ ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পরে অভিযোগ ওঠে, নইমুদ্দিন কয়েকজন রাজনীতিকের গোপন কথা জেনে ফেলেছিলেন। এমনকি সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার গোপন তথ্যও তাঁর জানা ছিল। এত বেশি জেনে ফেলার জন্যই তাঁকে মরতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.